Friday, 20 November 2009
ভাস্কর্য
গুপ্তযুগে ভাস্কর্য উন্নতির চরম শিখরে উপনীত হয়েছিলো৷ এ যুগে হিন্দু বৌদ্ধ দুই রকম মুর্তিই তৈরী হয়েছিলো৷ বুদ্ধমুর্তি এ সময়ে পূর্ণরূপ পায়৷ এ যুগের ভাস্কর্যের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর আধ্যাত্মিকতা৷ এ যুগে ভাস্কর্যে যে বৈশিষ্ট্যগুলো চোখে পড়ে _ ভাস্কর্যগুলোর কাঁধের দুইদিক কাপড়ে ঢাকা৷ মাথাটি সম্পূর্ণরূপে কোকড়ানো চুল দিয়ে আবৃত৷ চোখের পাতা অর্ধ-নিমীলিত _ যা দেখে মনে হয় বুদ্ধ পার্থিব জগত্ হতে অনেক দূরে৷ মাথার পেছনে প্রভামন্ডলে রয়েছে পদ্মপাতা এবং তাকে াঘরে রয়েছে জ্যামিতিক নকশা৷
গুপ্তযুগ (৩২০ _ ৫৪৪খৃঃ)
খৃঃ তৃতীয় শতক ভারতে বিরাট রাজনৈতিক পরিবর্তনের যুগ৷ আনুমানিক ৩২০ খৃষ্টাব্দে বিহারে এক শক্তিশালী সাম্রাজ্যের পত্তন হয়৷ এই সাম্রাজ্যের নাম গুপ্ত সাম্রাজ্য৷ প্রথম চন্দ্রগুপ্ত ৩২০ খৃঃ পাটালীপুত্রে প্রথম গুপ্ত সাম্রাজ্যের বনিয়াদ প্রতিষ্ঠা করেন৷ চন্দ্রগুপ্তের পর তার পুত্র সমুদ্রগুপ্ত সিংহাসনে বসেন৷ সমুদ্রগুপ্তের পর তার পুত্র দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত সিংহাসনে বসেন৷ গুপ্ত বংশের শেষ শক্তিশালী রাজা ছিলেন বুধগুপ্ত৷ তিনি সম্ভবতঃ ৫০০ খৃঃ পরলোকগমন করেন৷ এরপর যারা রাজা হন তাদের সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না৷
গুপ্তরা ভারতের সর্বত্র এক বিশাল সাম্রাজ্যের পত্তন করে যা ভারতীয় শিল্পকলার ইতিহাসে এক গুরম্নত্বপূর্ণ ও অমর অধ্যায় রচনা করেছে৷ গুপ্তযুগের শিল্পকলাকে আমরা 'ধ্রম্নপদী শিল্পকলা' যুগ হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারি৷
গুপ্তযুগে স্থাপত্য ভাস্কর্য এবং চিত্রকলা উন্নতির চরম শিখরে উপনীত হয়েছিলো৷ হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মের বিষয়বস্তুই ছিলো শিল্পের প্রধান উপাদান৷ যদিও গুপ্ত রাজারা ১৫০ বছর রাজত্ব করেছিলেন কিন্তু গুপ্ত সংস্কৃতির প্রভাব ভারতবর্ষে সপ্তম শতাব্দীর মেষভাগ পর্যনত্ম বিদ্যমান ছিলো৷ সাহিত্য, সঙ্গীত, শিল্প সবদিক দিয়েই গুপ্তযুগে ভারতীয় সংস্কৃতির পূর্ণতম বিকাশ হয়েছিলো৷ তাই একে স্বর্ণযুগ বলা হয়৷ এ যুগ শিল্পের আদর্শ বদলে গিয়েছিলো৷ গুপ্ত শিল্পকলায় বিদেশী প্রভাব থাকলেও শিল্পীরা একে নিজস্ব পরিভাষায় ব্যক্ত করেছেন৷
ভারতের অন্যান্য শিল্প বিশেষ যুগের বিশেষ প্রদেশের শিল্প কিন্তু গুপ্ত যুগের শিল্পকলা সারা ভারতের জাতীয় শিল্প, যা সর্বকালের জন্য সর্বদেশের জন্য৷ এখানে সম্পূর্ণরূপে ভারতীয় শিল্পাদর্শের এবং টেকনিকের সমন্বয় করা হয়েছে৷ মূলতঃ বহুযুগ ধরে ভারতের শিল্পের যে পরিৰন চলছিলো, তাই গুপ্ত শিল্পে দানাবেঁধে পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়েছে৷
Metarial Technique - Graphics Design
প্রাগৈতিহাসিক যুগের শিল্পকলার ইতিহাস
প্রাগৈতিহাসিক যুগ হতে আমরা মানুষের শিল্পচেতনার পরিচয় পাই। সে সময়ে মানুষ শিল্পকর্মের জন্ম দিয়েছিলো ঠিকই তবে তার ধরনটা ছিলো আলাদা। এ সময়ের শুরুতে মানুষ শিল্প সৃষ্টি করেছিলো প্রতিনিয়তঃ যুদ্ধ করে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখবার জন্য। প্রগৈতিহাসিক যুগে মানুষকে জীবন ধারনের জন্য, খাদ্য সংগ্রহের জন্য জীবজন্তু শিকার করতে হতো। আর মূলতঃ এসব জীবজন্তুর ছবিই তারা এঁকেছে। আর এখান হতেই শুরু হয়েছিলো প্রগৈতিহাসিক শিল্পকলার ইতিহাস।
মানুষের আদিম বন্যদশা হতে সভ্যতার উত্তরণের পথটা ছিলো বন্ধুর। প্রতিকূল অবস্থা অতিক্রম করে তাকে পদে পদে নানা কষ্ট সহ্য করে এগুতে হতো নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে।
পৃথিবীতে আগমনের পর হাজার বছর ধরে মানুষ শিকার করে জীবন ধারন করেছে। উৎপাদনের কৌশল রপ্ত করতে পারেনি বলে বুনো জন্তু শিকার করেছে পাথরের হাতিয়ারের সাহায্যে। এই সময়কে পাথর যুগ নামে অভিহিত করা হয়।
পাথরযুগকে প্রধানতঃ দুটি ভাগে ভাগ করা যায়-
১.প্যালিওলিথিক (পুরান প্রস্তর যুগ বা পুরাপলীয় যুগ)
২.নিওলিথিক (নব্য প্রস্তর যুগ)
এছাড়াও এ দুটি যুগের মধ্যবর্তী সময়ে তৃতীয় আরও একটি যুগের নাম দেয়া হয়েছে-
৩.মেসোলিথিক (মধ্যপলীয় যুগ)
প্যালিওলিথিক (পুরাপলীয় যুগ) : পুরা অর্থ প্রাচীন এবং উপল অর্থ পাথর আর এ দুটো শব্দের সমন্বয়ে হয়েছে পুরাপলীয় শব্দ। এ যুগে মানুষ তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে শিকারি কার্য়কলাপ চালিয়েছে পাথরের হাতিয়ারের মাধ্যমে।
তাই সমগ্রভাবে শিকারী যুগকে পুরালীয় যুগ বলা হয়। তবে সাধারনভাবে বলা চলে পুরাপলীয় যুগের শিকার ব্যবস্থাই ছিলো পৃথিবীর সব অঞ্চলের মানব সমাজের মূল ভিত্তি।
পুরাপলীয় যুগে মানুষ তাদের ধ্যান ধারনা ও জীবনের অভিজ্ঞতাকে চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের মাধ্যমে রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছে। এ যুগের শেষ পর্বে অর্থাৎ উচ্চ পুরাপলীয় যুগের গুহাবাসী শিকারী মানুষরা গুহার দেয়ালে ছবি এঁকেছে। আর এগুলোই হচ্ছে চিত্রকলার আদি নিদর্শন। তবে শিল্পকলার ইতিহাসে এই গুহাচিত্রগুলো আদি চিত্রকলার নিদর্শণ হিসেবে বিশেষ গুরুত¦ বহন করে।
এ যুগের মানুষের বাস্তবতা এবং তাদের আঁকা চিত্রের মধ্যে কোনো পার্থক্য নির্ণয়ে প্রয়াসী হয়নি। তার কাছে অঙ্কিত বস্তুটি ছিলো বাস্তব। বস্তু বা প্রাণীর অবয়ব সৃষ্টির পেছনে যে কারনটি কাজ করেছিলো তা হলো সে আকাঙ্খিত বস্তুটিকে পাওয়ার ইচ্ছা। এটিকে যাদুবিশ্বাস বলা হয়। নির্দিষ্ট কোনো পশুকে বধ করার ইচ্ছা বা কোনো শত্রুর প্রাণনাশের ইচ্ছা হতে এই যাদুবিশ্বাসের উদ্ভব। তবে একথা মনে করা হয় যে যাদুবিশ্বাস হতেই ধর্মের সৃষ্টি।
পুরানপ্রস্তর যুগে ভাস্কর্যের বেশ কিছু নিদর্শন মেলে। এগুলোর মধ্যে উৎপাদিকা শক্তির প্রতিকরূপে কিছু মাতৃকামূর্তি উল্লেখযোগ্য। সাধারনত এই সেই নগ্ন নারী মুর্তিগুলি অত্যন্ত স্থূলাঙ্গী, বক্ষ ও নিতম্ব বিশাল, মাংসল শিথিল, যাকে ইউরোপীয়রা সাধারন নাম দিয়েছে ভেনাস। গর্ভধারিনী এসব মাতৃমুর্তিগুলি গর্ভোন্মেষ প্রকাশের ক্ষেত্রে ছিলো আবেদনময়।
পুরাপলীয় যুগের বিখ্যাতএকটি মুর্তির নাম - ভেনাস অফ উইলেনডর্ফ ( খৃঃ ২৮০০০ - ২৩০০০ খৃঃ পূঃ লাইমস্টোন,৪’১/৪” উচ্চতা )
নিওলিথিক (নব্য প্রস্তর যুগ) : আনুমানিক আট হতে দশ হাজার বছর আগে মানুষ কৃষিকাজ আবিষ্কার করার পর তৎকালীন সমাজের আরো উন্নতি হয়। এ সময় মানুষ আরো উন্নত এবং মসৃন পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করতে শুরু করে। কৃষি আবিষ্কারের পর এই যুগকে নাম দেয়া হয়েছে নিওলিথিক (নব্যপ্রস্তর যুগ)।
নব্যপ্রস্তর যুগে মানুষ যাযাবর জীবন পরিত্যাগ করে কৃষিভিত্তিক স্থায়ী জীবনে অভ্যস্থ হতে শুরু করে। এ সময়ে মানুষ পশু শিকারের চাইতে পশু পালনের দিকে বেশী আগ্রহী হয়।
নব্যপ্রস্তর যুগেই আমরা প্রথম স্থাপত্য কর্মের নিদর্শন লক্ষ্য করি। এগুলোকে অবশ্য যথার্থ স্থাপত্য কর্ম বলা যায় না। তবে স্থাপত্যকর্মের আদিরূপ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এ সময়ে নির্মিত স্থাপত্য কর্মের মধ্যে রয়েছে -
ডলমেন : নব্যপ্রস্তর যুগে নির্মিত প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভের উদাহরন। এটির নির্মানশৈলীতে রয়েছে সমাধির চারপাশে কতগুলো পাথর রাখা হতো। আর একখানা বড় পাথর দিয়ে উপরিভাগ ঢেকে দেয়া হতো। এই সমস্ত ডলমেন আবিষ্কৃত হয়েছে বিশাল এলাকা জুড়ে । ইংল্যান্ড, স্পেন প্রভৃতি অঞ্চলে এগুলি আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলির গুরুত্ব এজন্যই যে ডলমেনকে আমরা মানব সভ্যতার প্রাথমিক স্তরের স্থাপত্য হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি। মানুষ এগুলির উপর ভিত্তি করেই নির্মান করেছিলো প্রথম স্থাপত্যের নিদর্শনাবলী।
স্টোনহেঞ্জ (খৃঃ পূঃ ২০০০ অব্দ) : নব্যপ্রস্তর যুগে আবিষ্কৃত আরো একটি স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন স্টোনহেঞ্জ - যা ইংল্যান্ডে অবস্থিত। বিশাল বিশাল পাথর খন্ডকে অল্প ব্যবধানসহ দাঁড় করিয়ে তাদের মাথায় পাথর বসিয়ে দেয়া হতো। অধুনা পন্ডিতগন মনে করেন যে, এ সমস্ত স্টোনহেঞ্জ জ্যোতির্বিদ্যার কাজে ব্যবহৃত হতো।
পৃথিবীতে শিল্পচৈতন্যের উদ্ভব হয়েছে এভাবে আদিযুগ হতেই তা সম্মোহনের জন্যই হোক আর উৎসবের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্যই হোক। জীবনকে স্পর্শ করেই শিল্পের সৃষ্টি। জীবনের প্রাত্যাহিকতা আনন্দিত রাখার জন্যই বিকাশ এবং ক্রমাগত শিল্পরীতির পরিবর্তন।
মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস
আজকের পৃথিবীতে যে মানুষ বাস করছে এ জাতের মানুষের আবির্ভাব পৃথিবীতে ঘটেছিলো চল্লিশ হতে পঞ্চাশ হাজার বছর আগে। তার আগের অন্য এক অসম্পূর্ণ মানুষ হতে বিবর্তনের মাধ্যমে আধুনিক মানুষের উদ্ভব হয়েছিলো এবং তা ছিলো এক দীর্ঘকাল ব্যাপি প্রক্রিয়া।
মানুষের ইতিহাস বলতে তার রূপান্তরের, তার প্রগতিশীল বিকাশের বিবরনকেই বোঝায়। ক্রমবিকাশের ধারাবাহিকতায় মানুষ প্রথমে বন্যদশা ও পরে বর্বরদশা অতিক্রম করেছে, তারপর ঘটেছে সভ্যতার সূত্রপাত।
মানুষের এই বিবর্তনকে কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করা যায় :
১.প্রাইমেট
২.অষ্ট্রালোপিথেকাস
৩.খাড়া মানুষ
৪.নিয়ান্ডার্থাল মানুষ
৫.হোমো স্যাপিয়েন বা বুদ্ধিমান মানুষ
প্রাইমেট : প্রায় ৪-৫ কোটি বছর আগে এক জাতের স্তন্যপায়ী প্রাণী গাছে বাস করার ফলে ঐ পরিবেশের উপযোগী কতগুলো গুন অর্জন করেছিলো যা ভ’মিচর প্রাণীদের পক্ষে লাভ করা সম্ভব হয়নি। এ জাতের প্রাণীদের বলা হয় প্রাইমেট। গাছের ডালে বাস করার ফলে প্রাইমেটদের মাংসপেশী, ইন্দ্রিয় ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ ঘটেছে। পরিবেশ হতে সহায়তা পাওয়ার ফলে প্রাইমেটরা কালক্রমে বড় মগজের অধিকারী হয়েছে। অতীতকালে প্রাইমেটদের একটি শাখা হতে বিবর্তনের মাধ্যমে ক্রমে ক্রমে মানুষের উৎপত্তি হয়েছে।
অষ্ট্রালোপিথেকাস : পরবর্তীতে উন্নততর এক প্রাইমেটের ফসিল পাওয়া যায় দক্ষিন আফ্রিকায়। এদের নাম দেয়া হয়েছে অষ্ট্রালোপিথেকাস। শব্দটির অর্থ দক্ষিনের নরবানর। কিন্তু আসলে এরা নরবানর ছিলো না। এদের দাঁত ছিলো ছোট আর কোমরের হাড়, হাত, পা, চোয়াল ইত্যাদি ছিলো প্রায় মানুষের মতো। তবে তার মস্তিষ্কের আয়তন ছিলো আধুনিক মানুষের প্রায় অর্ধেক।
খাড়া মানুষ : তাঞ্জানিয়ার হ্রদের পাড়ের আধা-মানুষদেরও বিবর্তন ঘটতে থাকে এবং আট-দশ লক্ষ বছর আগে আফ্রিকাতেই আরেক নতুন ধরনের মানুষের উৎপত্তি ঘটে। এদের নাম খাড়া মানুষ। এরা খাড়া হয়ে চলতে পারতো। এ মানুষের সময়ে তার আশেপাশে ছিলো আশ্চর্য সব জš-জানোয়ার। আর এ পরিবেশে বেচে থাকার জন্য মানুষকে আরো বেশী চালাক, চতুর ও দক্ষ শিকারী হতে হয়েছে। এদের হাতিয়ার ছিলো উন্নত ধরনের। আর এদের মগজও ছিলো বড়। খাড়া মানুষদের থুতনি বা কপাল বলতে কিছু ছিলো না, এদের ভুরুর খাজ ছিলো গভীর আর চোয়াল ছিলো বেশ বড়। দাঁত ও হাত-পা গুলো ছিলো মানুষের মতই।
নিয়ান্ডারথাল মানুষ : জামৃানীর নিয়ান্ডারথাল নামক স্থানে এক জাতের মানুষের কঙ্কালের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই জায়গার নামানুসারে এ জাতের মানুষের নাম দেয়া হয়েছে নিয়ান্ডারথাল মানুষ।
নিয়ান্ডারথাল মানুষ ছিলো দৈহিক শক্তির অধিকারী এবং দক্ষ শিকারী। আগুন এবং হাতিয়ার তারা আয়ত্ত্ব করেছিলো। এ জাতের মানুষ বহু রকমের পাথরের হাতিয়ার তৈরী করতে পারতো। এরা মৃত মানুষের কবর দিতো। মানুষের ইতিহাসে এটা এক নতুন ঘটনা।
হোমো স্যাপিয়ান : চল্লিশ হতে পঞ্চাশ হাজার বছর আগে ইউরোপ এক নতুন ধরনের শিকারী মানুষের আবির্ভাব হয়। এদের কপাল ছিলো চওড়া, ভুরু মসৃন – এরাই আধুনিক মানুষ। বর্তমান পৃথিবীতে শুধুমাত্র এ জাতের মানুষই আছে। এ আধুনিক মানুষের নাম দেয়া হয়েছে হোমো-স্যাপিয়েন।
মানুষ তার উৎপত্তির লগ্নে নিজেদের চেষ্টায় অর্থাৎ নিজেদের সামাজিক কার্যকলাপ দ্বারা দৈহিক বিবর্তন ঘটিয়ে আধুনিক সুসম্পূর্ন মানুষের উদ্ভব ঘটিয়েছে।
মেসোপটেমিয়ান আর্ট
মেসোপটেমিয়া একটি গ্রীক শব্দ। এর অর্থ দুই নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল। এই দুই নদী বলতে টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিসকে বোঝানো হয়েছে।
প্রাচীন সভ্যতার দিক হতে মিশরের পর মেসোপটেমিয়ার নাম করা যায়। তবে মিশর এবং মেসোপটেমিয়া সভ্যতা সমসাময়িক বলে ধারনা করা হয়। এ সভ্যতাকে আগে ব্যবিলনীয় বা ব্যবিলনীয় আসিরীয় নামে আখ্যায়িত করা হতো। মেসোপটেমিয়ার উত্তরাংশের নাম আসিরিয়া ও দক্ষিনাংশের নাম ব্যবিলনীয়া। ব্যবিলনিয়ার দুটি অংশ - দক্ষিনে সুমের ও উত্তরে আক্কাদ। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল হতে মানুষ এখানে এসে আবাস গড়ে তুলেছিলো। নব্যপ্রস্তর যুগের যাযাবর মানুষ আশ্রয়ের সন্ধানে এখানে এসে উপস্থিত হয়। সুমেরীয় ব্যবিলনীয় কাসাইট, আসিরীয়, ক্যলিডীয় প্রভৃতি জাতির অবদানে দীর্ঘকাল এ সভ্যতা সমৃদ্ধ হয়েছিলো। তাই সামগ্রিকভাবে এ সভ্যতাকে মেসোপটেমিয়া সভ্যতা বলাই অধিক যুক্তিযুক্ত।
মেসোপটেমিয়ায় প্রথমে যারা সভ্যতার গোড়াপত্তন করে তারা সুমের জাতি। সুমের জাতি কয়েকটি নগরীর গোড়াপত্তন করে। সুমেরের পরে আসে আক্কাদ জাতি। আক্কাইদ জাতির পর আমেরাইট জাতির আবির্ভাব ঘটে। আমেরাইট জাতির বিখ্যাত সম্রাট ছিলেন হাম্বুরাবি। তার রাজধানীর নাম ছিলো ব্যবিলন। আমেরাইটের পরে মেসোপটেমিয়ায় আগমন করে আসিরীয় জাতি।
মেসোপটেমিয়ায় জাতিসত্ত্বার গোড়াপত্তন : মেসোপটেমিয়ার পলিমাটি পড়া টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিস নদী বিধৌত অঞ্চলই ছিলো খুব উর্বর। এ অঞ্চলে খাদ্যের প্রাচুর্য যাযাবর গোষ্ঠীর স্থিতিশীলতা এনে দেয়। ক্রমে জনসংখ্যাও বেড়ে যেতে থাকে। এখানকার আবহাওয়া সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলবার সহায়ক ছিলো। এ অঞ্চলের মানুষ মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে বিশেষ ভাবেনি। তারা বুঝতো পার্থিব জীবনের সুখ আর আনন্দ। তারা যুদ্ধ ও শিকার করতে ভালোবাসতো। মেসোপটেমিয়ায় তাই শিকার ও যুদ্ধের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়।
সুমেরীয় শিল্পকলা : মেসোপটেমিয়ায় প্রথমেই যারা সভ্যতার গোড়াপত্তন করে, তারা সুমের জাতি। টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস এই দুটি নদী বেষ্টিত সুমের ছিলো কাদামাটির অঞ্চল। সুরক্ষিত শহর নির্মানে তারা ছিলো দক্ষ।
সুমেরিয়ান সংস্কৃতির একটি বিরাট বিষয় হলো জিগুরাট। অর্ম মন্দিররূপে জিগুরাতের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চতুষ্কোন ভিতই এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। প্রথম জিগুরাত নির্মিত হয়েছিলো উড় নামক শহরে। এটি সাদা মন্দির নামে খ্যাত। জিগুরাত নির্মানে সাধারনতঃ উপকরন হিসেবে রোদে পোড়া ইট ব্যবহৃত হত।
ভাস্কর্য নির্মানে সুমেরীয়রা দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। সুমেরীয়ান ভাস্কর্যের বৈশিষ্ট্য বড় বড় চোখ ও সিলিন্ডার আকৃতির দেহ পরিলক্ষিত হয়। খৃঃ পূঃ ৩৫০০ অব্দে মার্বেল পাথরে নির্মিত নারী মুর্তিটি অসম্ভব অভিব্যক্তিময়। এর ঠোঁট ও চিবুকের স্নিগ্ধ সৌন্দর্য চোখে পড়ে।
সুমেরীয়ান ভাস্কর্যের মধ্যে অন্যতম টেল-আসমারে আবুর মন্দির হতে উক্ত পুজারীদের কতগুলি মুর্তি। মুর্তিগুলির সবকটি উপাসনার ভঙ্গিতে দন্ডায়মান। এগুলি ঘাঘরা সদৃশ পোষাক পরিহিত। পুরুষ মুর্তির লম্বা ও কুঞ্চিত চুল ও দাড়ি সম্পূর্ণ কামানো।
আক্কাদীয় শিল্পকলা : দক্ষিন মেসোপটেময়ায় উরুক যুগের প্রথম দিকে সুমেরীয়রা আসে। সেই সময় বা তারও পূর্ব হতে টাইগ্রিস নদীর উচ্চ অববাহিকা অঞ্চলে সেমেটিক জাতির মানুষের বাস ছিলো যারা কালক্রমে আক্কাদীয় সম্রজ্যের প্রতিষ্ঠা করে। রাজা সারগন ছিলেন এই সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। বিভিন্ন ভাস্কর্য হতে আক্কাদীয়দের আকৃতি সম্বন্ধে ধারনা করা যায়। তাদের মুখে সাধারনতঃ দাঁড়ি ও মাথার চুল ঘাড় পর্যন্ত লম্বা ছিলো।
আক্কাদিয় যুগের স্থাপত্য সম্বন্ধে খুব বেশী তথ্য আবিষ্কৃত না হলেও বহু ভাস্কর্যের নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। ভাস্কর্যগুলো সাধারনতঃ ব্রোঞ্জ ও পাথর দিয়ে তৈরী হতো যা ছিলো খুবই উন্নত। ভাস্কর্যগুলোর রূপ ছিলো পার্থিব।
খৃঃ পূঃ ২২০০ অব্দে নির্মিত আক্কাদীয় শাসকের ব্রোঞ্জ মুর্তিটি এ সময়ের শিল্পকলার একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। এর মুখের অভিব্যক্তিতে ছিলো আতœপ্রত্যয় ও পৌরুষদীপ্ত ভাবের প্রকাশ। এর মুখে ছিলো লম্বা দাঁত, চুল ঘাড়ের কাছে বাঁধা, চোখের গর্তে পাথর বসানো।
মার্গনের পুত্র নরমইসনের বীরত্ব কাহিনী বর্ণিত পাথরের একটি খন্ড আক্কাদীয় শিল্পের বিশিষ্ট উদাহরন (ভিক্টরিস টেল অফ নরম সিন ফ্রম সুসু, ২২০০খৃঃ পূঃ, পিঙ্ক, স্যান্ডস্টোন). এই খন্ডটি প্রায় ৭৫ ফুট উঁচু। এর গায়ে যুদ্ধ দৃশ্য উৎকীর্ণ। এতে রাজা নারামসিন তীর ধনুক হাতে পাহাড়ে উঠছেন সৈন্যদল নিয়ে। রাজাকে এখানে বড় করে দেখানো হয়েছে যা মিশরীয় শিল্পকলার অনুরূপ।
নিও সুমেরিয়ান শিল্পকলা : উত্তর পূর্ব দিক হতে আগত গুটি নামে এক বর্বর জাতির আক্রমনে আক্কাদীয় সাম্রাজ্যের পতন হয়। এ জাতির একজন শাসকের নাম ছিলো গুতিয়া। তার অসংখ্য ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছিলো। এগুলোর বেশীর ভাগই দাড়ানো বা উপষ্টি অবস্থায়।
খৃঃ পূঃ ২১০০ অব্দে উপবিষ্ট অবস্থায় রাজা গুতিয়ার একটি ভাস্কর্য পাওওয়া যায় যা কঠিন ডিওরাইট পাথরে তৈরী। এতে রাজাকে একজন পূজারীরূপে দেখানো হয়েছে।
ব্যাবিলনীয় শিল্পকলা : সুমেরীয়দের পতনের পর আমেরাইট জাতি সুমের ও আক্কাদ জয় করে ব্যাবিলনীয় সভ্যতা গড়ে তোলেন। আমেরাইটদের নিজের সংস্কৃতি বিশেষ উন্নত ছিলো না, তারা মেসোপটেমিয়ার সম্রাজ্য পতন করে সুমেরীয়দের সভ্যতা সংস্কৃতিকেই গ্রহন করেছিলো। খৃঃ পূঃ ১৭৯২ - ১৭৫০ অব্দের মধ্যে ব্যবিলনের রাজা হাম্বুরাবি গোটা মেসোপটেমিয়াকেই ব্যবিলনের এককেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থার অধীনে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার সাম্রাজ্য বিরাট ছিলো।
আসিরিয় শিল্পকলা : টাইগ্রিস নদীর উচ্চ ববাহিকা অঞ্চলে বহু প্রাচীনকাল হতে একটি জাতি বাস করতো। তাদের প্রধান দেবতা ছিলো অসুর। অসুর দেবতার নামানুসারে সেই জাতি আসিরিয় নামে পরিচিত।
মেসোপটেমীয় অন্যান্য নির্মাণের মতো আসেরীয়রাও নির্মানের উপকরন হিসেবে কাদামাটির ইট ব্যবহার করতো। এ সময়ের অধিকাংশ ভাস্কর্যই ছিলো রিলিফ ভাস্কর্য। এ সময়ের ভাস্কর্যগুলোতে হিংস্রভাব প্রকাশ পেয়েছে। মানুষের সমস্ত সুকোমল বৃত্তিকে নির্মাতিত করে আসিরীয় সম্রাটগন রাক্ষুসে বা রক্তলোলুপ ভাবটিকে তীব্রভাবে প্রকাশ করার জন্য যেন শিল্পীদের নিযুক্ত করেছিলেন। ভাস্কর্যগুলোর অভিব্যক্তিতে কঠোর ও অনমনীয় ভাব। এসব ভাস্কর্যের অভিব্যক্তিতে প্রকাশ পেয়েছে উদ্ধত প্রকৃতির শাসকের ক্ষমাহীন বা নির্মম ভাব।
আসিরীয়রা ছিলো মহাপরাক্রান্ত এবং রণকৌশলে নিপুন। আসিরীয় সম্রাটগন যুদ্ধক্ষেত্র এবং শিকারের কাহিনীকে তাদের কলাকৌশল এবং বীরত্বের কাহিনীকে প্রাসাদের গায়ে ভাস্কর্য ও চিত্রকলার মাধ্যমে রূপদিতে শিল্পীদের নির্দেশ দেন। তাই যুদ্ধক্ষেত্র এবং শিকারের দৃশ্যপট আসিরীয় শিল্পের মুল উপজীব্য।
আসিরীয়ান ভাস্কর্যের অন্যতম নিদর্শন মেলে খৃঃ পূঃ ৭২০ অব্দে। এ সময়ে নির্মিত ভাস্কর্য লামাস্সু তে অদ্ভুত আকৃতি লক্ষ্যনীয়। এর মুখমন্ডল মানুষের মতো এবং দেহকানেডর আকার সিংহের মতো। পিঠের উপরে ঈগলের পাখাযুক্ত।
“ডাইং লায়নস” নামক ভাস্কর্যটিতে বানবিদ্ধ মরোম্মুখ একটি সিংহী অঙ্কিত হয়েছে। এর তুলনা বিশ্বের শিল্পভান্ডারে দুর্লভ। তিনটি বান সিংহীর পৃষ্ঠদেশ ভেদ করে চলে গিয়েছে। তবু সে দেহেরে সমস্তভার ন্যস্ত করে সম্মুখে অগ্রসর হওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। এখানে আহত সিংহীর বাঁচার জন্য চোখে ফুটে উঠেছে তার অসহায়ত্ব।
কেভ পেইন্টিংস
চিত্রকলার প্রাচীনতম নিদর্শন প্রাগৈতিহাসিক যুগের গুহাচিত্র। পুরাপ্রস্তর যুগের (প্যালিওলিথিক) শিকারী মানুষেরাই এই চিত্রকলার উদ্ভাবক। এসব চিত্রগুলোতে শিকারী শিল্পীরা তাদের ধ্যান ধারনা ও তৎকালীন সমাজ জীবনের অভিজ্ঞতাকে চিত্রকলার মাধ্যমে রূপদানের চেষ্টা করেছে। মানুষ প্রাথমিক অবস্থায় পৃথিবীতে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এবং চারপাশের জগৎকে নিজের আয়ত্বে আনার প্রয়াসে এই চিত্রকলার জন্ম দিয়েছে। কিন্তু প্রয়োজন হতে উদ্ভুত হলেও এই চিত্রকলার শিল্প সৌন্দর্য এবং এবং কলাকৌশল আজও মানুষের মনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে।
১৮৭৯ সালে উত্তর স্পেনের সান্টাদের এর নিকটবর্তী স্থানে প্রথম গুহাচিত্র আবিষ্কৃত হয়। আর এসব উল্লেখযোগ্য গুহাগুলো হলো :
আলতামিরা (১৮৭৯, স্পেইন)
লাস্কো (ডর্ডন, ফ্রান্স)
পেয়ার-নন-পেয়ার (১৮৯৬, ফ্রান্স)
ফন্ট-ডি-গুমে (১৯০১, ডর্ডন, ফ্রান্স)
গুহাচিত্রগুলোর মূল বিষয়বস্তু ছিলো শিকার। গুহাবাসী মানুষের প্রধান খাদ্য ছিলো হরিণ ও বাইসনের মাংস। প্রধানত যেসব পশু তারা শিকার করতো তাদের চিত্রই গুহার দেয়ালে আঁকা হতো। এছাড়া ভালুক, ঘোড়া, নেকড়ে ও কিছু কিছু ছবিতে মানুষের ছবিও পাওয়া যায়। ছবিতে এসব জীবজন্তু শিকারের দৃশ্য আহত পশু-পাখী, কিছু অদ্ভুত প্রাণী, জ্যামিতিক চিহ্ন, সাংকেতিক চিহ্ন পাওয়া যায়।
শিকারী শিল্পীর প্রথম প্রযোজন খাদ্য, তা উৎপাদন করতে যখন সে শেখেনি, মস্তিস্ককে সে যখন সুদূরপ্রসারী ভবিষ্যতের কাজে লাগায়নি, সে সময় তার চিত্রে স্বভাবিকভাবেই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটেছিলো। দৃষ্ট বাস্তবের প্রত্যক্ষ ছাপ সে চিত্রে ধরেছিলো। চিত্র তার কাছে ছিলো বাস্তবেরই প্রসারন।প্রাগৈতিহাসিক যুগে গুহাতে ছবি আঁকার পেছনে মানুষের মনে কাজ করেছে এক বিশিষ্ট বিশ্বাস। এ বিশ্বাসকে বলা হয় যাদু বিশ্বাস। গুহার গায়ে ছবি আঁকা হতো তাদের মায়ার ফাঁদে আটকে ফেলার জন্য। অনেক ক্ষেত্রে ছবিতে জন্তুর গায়ে তীর চিহ্ন একে দিয়েছে। তারা বিশ্বাস করতো ছবি নিখুঁতভাবে আঁকতে পারলে ছবির সম্মোহনী শক্তিতে বশীভূত হয়ে পশু ভেতরে প্রবেশ করবে এবং পশু শিকার করা সহজ হবে। লাসকো গুহার দেয়ালে অংকিত একটি ছবিতে দেখানো হয়েছে গন্ডার, একজন আহত মানুষ ও বাইসন। এতে মানুষটির মুখ পাখীর মতো আঁকা হয়েছে। এসব পশুর চিত্রে অস্রাঘাতের দাগ দেখে এটাই বোঝা যায় যে এই আঁকা পশুগুলি তখনকার মানুষের কাছে ছিলো বাস্তব পশুর সত্তা বা দ্বৈত। আঁকা পশুর গায়ে পাথর, তীর প্রভৃতি অস্র ছুড়ে মানুষ প্রকৃতপক্ষে শিকারের প্রাপ্তির কথা ভাবতো। চিত্রগুলো ছিলো একই সঙ্গে ইচ্ছা ও ইচ্ছাপূরণের উপায়। বাস্তব ও অলৌকিকের ভেদ তখনো মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়নি,তাই প্রকৃত অবস্থা ও যাদু ক্রিয়ার চরিত্রগত পার্থক্য তার জানা ছিলোনা। ঐ আঁকা পশুগুলি ও তাদের গায়ে অস্রাঘাতের মাধ্যমে ইচ্ছাপূরন তার কাছে ছিলো বাস্তবেরই প্রসারন। এই কারনে সে তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাকেই হুবহু এঁকেছিলো। কোনো কল্পনা বা অলংকরন হতে তাই এই ছবি ছিলো মুক্ত।
পুরানপ্রস্তর যুগের মানুষছিলো সম্পূর্ণ প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। খাদ্য সংগ্রহের অনিশ্চয়তা তাদের যাযাবর জীবন যাপনে বাধ্য করেছিলো। তাদের আঁকা চিত্র তাদেরই জীবনের উদ্বেগ, উৎকন্ঠা পর্যবেক্ষন প্রক্ষেপিত হয়েছিলো। তাদের আঁকা পশুগুলি এতটাই প্রাণবন্ত ও গতিশীল ছিলো যে চিত্রের গায়ে সত্যিকারের পশুর ত্বক অনুভূত হয়।
গুহাচিত্রগুলোর গুণগত বৈশিষ্ট্য ছিলো অসাধারণ উন্নত পর্যায়ের। প্রসঙ্গত লাসকো গুহার এক্সিয়াল গ্যালারীতে অঙকিত চাইনিস হর্স ছবিটির কথা বলা যায় - এ ছবিতে চীনা পেন্টিঙ্গের শ্রেষ্ঠ সময়ের আঁকা অশ্বের সাথে এদের সাদৃশ্য রয়েছে। চিত্রটিতে চীনা ক্যালিগ্রাফি ও তুলি সঞ্চালনের ক্ষীপ্রতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
ছবি আঁকার ক্ষেত্রে শিকারী শিল্পীরা নানা প্রাকৃতিক উপকরন ব্যবহার করেছে। সে সময়ের মানুষ অন্ধকার গুহায় ছবি আঁকতে ব্যবহার করতো পাথরের প্রদ্বীপ যার জ্বালানী ছিলো অস্থির মজ্জা বা চর্বি। রং হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে রঙিন মাটির গুড়া, কয়লা নানা খনিজ দ্রব্য। এসব রঙের সাথে চর্বি মিশিয়ে পশুর লোমের তৈরী তুলির সাহায্যে ছবি এঁকেছে। রঙের প্যালেট হিসেবে ব্যবহার করেছে বৃহৎ সমতল হাড়। এছাড়াও পাথরের টুকরা দিয়ে ঘষে গুহার দেয়ালকে মসৃন করে তার উপর রঙের প্রলেপ দিয়ে ছবি এঁকেছে তারা। রঙের ব্যবহারের পাশাপাশি এসব গুহা চিত্রসমূহে রেখার যথেষ্ট প্রাধান্য ছিলো। বলিষ্ঠ আর প্রাণবন্ত ছিলো এসব রেখা।
Wednesday, 18 November 2009
গ্রীক ভাস্কর্য
শিল্পকলার ক্ষেত্রে গ্রীকরা প্রভূত উন্নতি সাধন করেছিলো। বিশেষতঃ ভাস্কর্য শিল্পে গ্রীকদের নৈপুন্যের যথার্থ পরিচয় পাওয়া যায়। আর গ্রীক ভাস্কর্যের উন্নতির কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে মানুষের শারীরিক গঠন সম্পর্কে তাদের কৌতুহল। প্রদিকে গ্রীক ভাস্কর্যের বৈশিষ্ট্য ছিলো আদর্মবাদ এবং সুন্দর করে তৈরী করা। তবে পরবর্তীতে এ নীতির পরিবর্তন ঘটে এতে গঠিত, মখাভিব্যক্তি এবং মানবতাবাদ প্রকাশ পায়।
গ্রীক শিল্পের উত্তরন পর্বকে তিনটি সময়কালে ভাগ করা যায় - আর্কেইক, ক্লাসিকাল এবং হেলেনিস্টিক। এই তিনটি পর্বে গ্রীক ভাস্কর্যের চরিত্রগত পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
গ্রীক ভাস্কর্যে ধর্মের প্রভাব পড়েছিলো প্রবলভাবে। তবে গ্রীকরা তাদের দেবতাদের লালন করেছিলো অন্যভাবে। গ্রীক ভাস্কররা তাদের দেবদেবীর মূর্তির মধ্য দিয়ে মানুষের অন্তর্নিহিত সহজাত প্রবৃত্তিকে ফুটিয়ে তুলেছে। তাদের দেবতা ছিলো মানুষের মতই সাধারণ। অর্থাৎ তাদের শিল্পের মূল কথা হচ্ছে সবকিছু মানুষের জন্য এবং মানুষই সবকিছুর মাপকাঠি।
গ্রীক ভাস্কর্যের প্রাথমিক পর্বে এগুলোতে জ্যামিতিক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। খৃঃ পূঃ অষ্টম শতাব্দীতে ব্রোঞ্জের তৈরী একজন যোদ্ধার ভাস্কর্যে ফিগারের সরলতা প্রকাশ পায়। তার বড় চোখ আর মুখমন্ডলের হাসির রেখা পরবর্তী সময়ে আর্কাইক স্মাইল নামে পরিচিত হয়। ভাস্কর্যটিতে শরীর আর মুখের অনুপাত সঠিকভাবে দেখা যায় না।
আর্কেইক পিরিয়ডে ভাস্কর্যগুলোতে মিশরীয় রীতির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। দন্ডায়মান যুবক (ফুরস্) মূর্তিগুলোতে মিশরীয় শিল্পের প্রভাব রয়েছে। এসব মূর্তিগুলোর হাত সাধারণতঃ মুষ্ঠিবদ্ধ এবং বাম পা একধাপ এগিয়ে। কিন্তু মিশরীয় মূর্তির পরনে যে কাপড় ছিলো তা এখানে অনুপস্থিত, এগুলো সম্পূর্ণ নগ্ন। খৃঃ পূঃ ৬০০ অব্দে যুবকের মূর্তিটিতে (কওরোস ৬০০ খৃঃ পূঃ মার্বেল ৬’১/২” উচ্চতা) মিশরীয় প্রভাব লক্ষ্যনীয়। তবে এতে হাঁটু উরু ইত্যাদিতে ডিটেইল কাজ মিশরীয় ভাব ধারার বাইরে। পেশীর স্থাপনা যেন ভেতরকার শরীরতাত্ত্বিক বাস্তবতাকে প্রকাশ করছে।
খৃঃপূঃ ৫৩০ অব্দে নির্মিত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মুর্তিতে (মার্বেল পাথরের) শিল্পী শরীরতাত্ত্বিক কাঠামো প্রকাশের পাশাপাশি তার ব্যক্তিসত্তার অভিব্যক্তিকেও প্রকাশ করছে। এই যোদ্ধার নাম ছিলো ক্রোইসস। যুদ্ধে সে বীরের মতো প্রাণ দিয়েছিলো। আগের সব দেহের তুলনায় এটি আরো অধিকভাবে তার ব্যক্তি স্বাতন্ত্র বা ব্যক্তি চরিত্রকে প্রকাশ করছে।
পেপলসকোর নামে ভাস্কর্যটি (মার্বেল পাথরের ৪’ উচ্চতা) খৃঃ পূঃ ৫৩০ অব্দে নির্মিত। এতে মেসোপটেমীয় প্রভাব লক্ষ্যনীয়। এর চোখ মুখে নারী সৌন্দর্য্যরে অভিব্যক্তি প্রকাশ পেয়েছে।
প্রাচীন গ্রিক শিল্পীরা ভাস্কর্যে ড্রাপারীর বিন্যাসের ক্ষেত্রে নৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছে। খৃঃ পূঃ ৫১০ অব্দে নারীমুর্তিতে (কোর, মার্বেল পাথরের, ২১’১/২”) তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এই ড্রাপারীর বিষয়টি নারী মুর্তিতে বেশী দেখা যায়।
পুরুষের মতো নারী মুর্তিকে তার ন্যুড করে তৈরী করতো না কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। খৃঃ পূঃ ৫০০ অব্দের দিকে ক্রমে এইসব নগ্ন শরীর শরীরতাত্ত্বিক বাস্তবতা সুসংহত স্ট্রাকচার, সবকিছু গ্রিক শিল্পীদের হাতে পূর্ণতা পেলো। খৃঃ পূঃ ৪৮০ অব্দে “ক্রিটিয়স রয়” (মার্বেল পাথরের ৩৪” উচ্চতা) মুর্তিটিতে এই বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ পেয়েছে। দেহের অবস্থান খুব সামঞ্জস্যপূর্ণ রেখে, সামনে পেছনের পায়ের উপর দেহের ভারকে স্বাভাবিকভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। মানবদেহের পেশীগুলোর জীবন্ত রেখাই প্রকট হয়ে উঠেছে এখানে। এভাবেই গ্রিকভাস্কর্য গতিহীনতাকে অতিক্রম করেছিলো।
খৃঃ পূঃ ৪৩৮ - ৪৩২ অব্দে ডাইওনাইসস এর মুর্তিটি আর্কেইক ভিগারেটিভ হতে মুক্ত হয়ে এসেছে (মার্বেল পাথরের)
“থ্রি গডেসেস ফ্রম দ্যা পার্থেনন” ভাস্কর্যটিতে (৪৩৮ - ৪৩২) ফিগারের আবদ্ধতা যেন একে অন্যের পরিপূরক আর তার সঙ্গে ড্রাপারীর অপূর্ব কাজ। এই কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে মিশে আছে যেন জবিনের স্পন্দন। এটি শিল্পী ফিদিয়াসের আশ্চর্য এক সৃষ্টি। এতে আছে আলো ছায়ার অপূর্ব কাজ আর গতিময়তা। এটি পার্থেনন মন্দিরের গায়ে উৎকীর্ণ করা ভাস্কর্য।
শিল্পী ফিদিয়াসের করা আরো একটি বিখ্যাত ভাস্কর্যের মধ্যে “হেব অব দ্য প্রসেশন” (প্রসেশন অফ এলডারস এন্ড মেইডেনস, পার্থেনন ৪৪৭ - ৪৩৮ খৃঃ পূঃ মার্বেল পাথরের, ৩’৬” উচ্চতা) একটি সাধারন ঘটনা নিয়ে রৈী এটি। এটিও পার্থেননের দেয়ালে উৎকীর্ণ। এটি একটি শোভাযাত্রার দৃশ্য যাতে কুমারী মেয়েরা দেবী এথেনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করছে। এতে কাপড়ের ভাঁজের সূক্ষœ কাজ আজো আমাদের মুগ্ধ করে। একটি সাধারন বিষয় যেন শিল্পী নান্দনিকরূপে প্রকাশ করেছেন এতে।
শিল্পী ফিদিয়াসের তৈরী বিখ্যাত ভাস্কর্যের মধ্যে পার্থেনন মন্দিরের দেবী এথনার মুর্তি। মুর্তিটি ছিলো কাঠের তৈরী। এটি মূল্যবান পাথর ও ধাতু দিয়ে সজ্জিত ছিলো। এর উপরিভাগ হাতির দাঁত দ্বারা আবৃত ছিলো। এখানে দেবী এথেনাকে মানুষ হিসেবে তৈরী করা হয়েছে। তার ক্ষমতা যাদুবিদ্যায় নয় বরং সৌন্দর্য্যে।
ভাস্কর মাইরন ছিলেন ফিদিয়াসের সমসাময়িক। তার “ডিস্কাস থ্রোয়ার” মুর্তিটিতে একজন খেলোয়ারের রূপ প্রকাশ পেয়েছে। তার “ডিস্কোবোলাস” জগদ্বিখ্যাত। এখানে একজন খেলোয়ারের ডিস্কাস নিক্ষেপের পূর্ব মুহূর্তের ভঙ্গি দেখানো হয়েছে। মানুষের গতিময়তার প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার এক চূড়ান্ত অভিব্যক্তিকে ভাস্কর স্থায়ী করেছেন পৃবিীর শিল্প ইতিহাসে। খৃঃ পূঃ ৪০০ অব্দের দ্বিতীয়ার্ধের সবচেয়ে বিখ্যাত ভাস্কর ছিলেন লিসিপস। তিনি সম্রাট আলেকজান্ডারের ভাস্কর ছিলেন। খৃঃ পূঃ ৩৩০ অব্দে এপোক্সিমেনোস ভাস্কর্যে (৬’৯” উচ্চতা) তিনি একজন তরুন ক্রিড়াবিদকে নির্মান করেন। এর দীর্ঘ অবয়বটি ছিলো ক্ষীণ ও নমনীয়। মানবদেহের গতিশীল ভঙ্গিমা সুন্দরভাবে প্রকাশ পেয়েছে এতে।
খৃঃ পূঃ ৩৩০ অব্দে “এপোলো” মুর্তিটি আদশমানবদেহের প্রতিরূপ ছিলো। মানবদেহের শারীরিক সুষমা এখানে উপস্থিত।
ভাস্কর লিসিপসের তৈরী সম্রাট আলেকজান্ডারের ভাস্কর্যটি বিখ্যাত। এতে আলেকজান্ডারের বীরত্ব অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
হেলেনিস্টিক যুগে বিখ্যাত ভাস্কর্যের নাম লাওকোন গ্রুপ (লাওকোন এন্ড হিস সন্স, ৭’১০.৫” উচ্চতা)। এখানে পৌরানিক কাহিনী অবলম্বনে দেহগুলোকে তৈরী করা হয়েছে। পশুশক্তির বিরুদ্ধে মানুষের যুদ্ধ আর নিয়তির বিরুদ্ধে মানুষের সংগ্রাম ঠিক কোন্টি শিল্পী তুলে ধরেছেন তা বোঝা যায় না।
শত দ্বীপ আর পাহাড়ে বেষ্টিত গ্রিস আধিপত্য আর সংঘাতের যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়েছিলো অনেক রাজ্য। বিখ্যাত সব ভাস্কর ফিদিয়াস, মাইরন, পলিফ্লাইটিস, প্র্যাক্সিটেলাসের কাজগুলো রোমানদের প্রযতেœ বেচে ছিলো সহস্র বছর। গ্রিক ভাস্কর্যগুলো তাদের সমৃদ্ধশালী শিল্প ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।
মিশরীয় ভাস্কর্য
মিশরীয় ভাস্কর্য মিশরীয় স্থাপত্যের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। মিশরীয় ভাস্কর্য সবসময়ই মিশরীয় স্থাপত্যের মতো বিশালাকৃতির হতো। ফারাও এর প্রতিকৃতি সবসময়ই বিশাল করে নির্মান করা হতো।
মিশরীয় ভাস্কর্যে চোখে পড়ার মতো প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলো হলো - জড়তা, গতিহীনতা ও ভাবলেশহীনতা।
ধর্মীয় বিশ্বাস ও প্রচলিত রীতির প্রাধান্যের ফলে ভাস্কর্যের ধরন হয়েছিলো বিশাল স্মারক জাতীয়।
প্রাচীন মিশরের উল্লেখযোগ্য কিছু ভাস্কর্যের মধ্যে রয়েছে -
স্ফিংস : প্রাচীন মিশরের ভাস্কর্যের মধ্যে অন্যতম হলো গীজের পিরামিডের কাছে অবস্থিত স্ফিংস। একটি বৃহৎ পাথর কেটে এটি নির্মাণ করা হতো। স্ফিংস মৃতের এবং মরুভ’মির দেবতা। মানুষ এবং সিংহের দেহের সমন্বয়ে মূর্তিটি গঠিত। মূর্তিটির মাথা ফারাও এর অনুরূপ। ফারাও খুফু এটি নির্মাণ করেছিলেন। তিনি যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক হতে ভীষণ শক্তিশালী ছিলেন তা বোঝানোর জন্যই এরূপ একটি প্রকা- মূর্তি নির্মাণ করা হয়। এটির দিকে তাকালে মনে হয় যেনো প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে সে পাহারা দিচ্ছে পুরো এলাকা।
তুতেন খামেনের মুখোশ বা প্রতিকৃতি : রাজা তুতেনখামেনের কফিনের আচ্ছাদনে তার প্রতিকৃতি আঁকা ছিলো। এটি ছিলো সোনার তৈরী। উৎসবের সাজে সে সজ্জিত ছিলো। পোষাকে দামী দূর্লভ পাথর ব্যবহৃত হয়েছে।
মিশরের ভাস্কর্যে এক ধরনের স্থবিরতা লক্ষ্য করা যায়। একজন লেখকের (স্ক্রাইব) মূর্তিতে আমরা এটি লক্ষ্য করি।
মিশরীয় চিত্রকলা
বিশ্বশিল্পের ইতিহাসে মিশরীয় শিল্পকলার গুরুত্ব অপরিশীম। তবে শুধুমাত্র সৌন্দর্য সৃষ্টি আর উপভোগের জন্য মিশরীয় শিল্পকলা সৃষ্টি হয়নি, মূলতঃ ধর্মীয় কারণে সেখানে শিল্পকলার সৃষ্টি হয়েছিলো।
মিশরীয় চিত্রকলা ছিলো পরধর্মী অর্থাৎ ঐ চিত্রকলা নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত ছিলো স্থাপত্যের সারফেসের সঙ্গে ও বহুলভাবে ব্যবহৃত হতো রিলিফ ভাস্কর্যে। মিশরের চিত্রকলা যে সামাজিক প্রেক্ষিতে গড়ে উঠেছিলো তা ছিলো ধর্ম ও রাজতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। প্রাচীন মিশরে রাজা বা ফারাও ছিলেন সর্ব বিষয়ে প্রধান। তিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রন করতেন। তখন শিল্পীদের স্বাধীনতা ছিলোনা বললেই চলে। ফলে তাদের চিত্রকলা হতো গতানুগতিক। আর অধিকাংশ চিত্রের ধরন ছিলো ইলাস্ট্রেশন বা গল্প বলার ছবি। প্রাচীর চিত্রে মৃত ব্যক্তির সাথে সম্পর্কিত ঘটনাবলী স্থান পেয়েছে। এইসব দেয়ালচিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরে হাজার বছর আগের মিশরকে যা আমাদের বিস্ময়াবিষ্ট করে তোলে। তবে প্রথমবারের মতো ছবির দিকে তাকালে এগুলোকে মনে হয় দুর্বোধ্য।
কলাকৌশলগত ও চিন্তাভাবনায় মিশরীয় চিত্রকলা ছিলো দ্বিমাত্রিক। এই দ্বিমাত্রিকতা হলো একটি ধর্ম এবং আরেকটি ফারাও। ধর্ম হলো এক মাতা এবং ফারাও হলো আরেক মাত্রা। তাদের চিন্তার জগৎ একাল ও পরকালে বিভক্ত ছিলো। শুধুমাত্র জগৎ সম্পর্কে তাদের ধারনা দ্বিমাত্রিক ছিলোনা, তাদের বিশ্বাস ছিলো মানুষের দেহে দুটি স্বত্ত্বা আছে একটি বা এবং অপরটি কা।
মানুষের রূপকল্পনায় মিশরীয চিত্রকর গতানুগতিক মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন। অধিকাংশ ছবিতে মানুষের মাথা পাশ হতে, দেহের উপরিভাগ ও চোখ সামনে হতে এবং পায়ের পাতা পাশ হতে আঁকা হয়েছে। গতিশীল হাত ও পা ভালো দেখা যায় পর্শ্বদৃশ্যে যার ফলে এটিকে পার্শ্বদৃশ্যে আঁকা হয়েছে।
মিশরীয় চিত্রকলা ফ্রেস্কো পদ্ধতিতে আঁকা। সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে রং দেয়ার রীতি ছিলো, যেমন নীলের ওপর কালো আঁচড় কেটে জলকে এবং বাদামী বা হলুদ রং দিয়ে মানুষের শরীর বোঝানো হতো। রং হিসেবে লাল, হলুদ, নীল, সবুজ, কালো এবং সাদার ব্যবহার দেখা গেছে। সম্রাট, পুরোহিত ও রাণীদের রং উজ্জ্বল করলেও দাসদাসীদের গায়ের রং অনুজ্জ্বল ও কালো রঙে আঁকা হতো। এসব ছবিতে সব জায়গায় সমানভাবে রং ব্যবহার করা হয়েছে, টোনের তারতম্য নেই। আলো-ছায়ার প্রয়োগ নেই।
মিশরীয়রা যা জানতো তাই আঁকতো। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ১৪০০ খৃঃ পূঃ থেবস এর সমাধিতে করা বাগান ও পুকুর সম্বলিত একটি চত্রে তারা পুকুরটি এঁকেছে উপর হতে আর গাছগুলো পাশ হতে। পুকুরের মাছ ও পাখি উপর হতে আঁকলে চেনা যবে না তাই এগুলো আঁকা হয়েছে পার্শ্ব দৃশ্যে। এরকম একটি ছবি হতে আমরা বুঝতে পারি - প্রত্যেকটি বস্তুই মিশরীয়দের কাছে সবচেয়ে বৈশিষ্টপূর্ণ দৃষ্টিকোন হতে আঁকা হয়েছে।
মিশরীয় শিল্পীরা শুধু ফর্ম ও ছবি আঁকার ক্ষেত্রে তাদের জ্ঞানকেই ছবিতে গুরুত্ব দিয়েছেন। যেমন মিশরীয়রা রাজা বা প্রভুকে তাদের ভৃত্য এমনকি স্ত্রীর হতেও বড় করে আঁকতো।
মিশরীয় শিল্পকলার ভিত্তি ছিলো তাদের জ্ঞান, তারা যা জানতো তাই আঁকতো।
Thursday, 5 November 2009
Kalighat Painting
Kalighat painting, or pata (pronounced 'pot') is a style of Indian painting derives its name from the place. It is characterised by generously curving figures of both men and women and an earthy satirical style. It developed during the nineteenth century in response to the sudden prosperity brought to Calcutta by the East India Company trade became incredibly wealthy. Many of these nouveau riche families came from not particular exalted caste backgrounds, so the orthodox tended to frown on them and their often very tasteless conspicuous consumption. To the common people the 'babu's, as they were called, were equally objects of fun and sources of income. Kalighat pata pictures are highly stylised, do not use perspective, are usually pen and ink line drawings filled in with flat bright colours and normally use paper as a substrate. The art form is urban and largely secular: although gods and goddesses are often depicted, they appear in much the same de-romanticised way as the humans do. Kalighat pata has been credited with influencing the Bengal School of art associated with Jamini Roy and the works of French cubist Fernand Léger.