আজকের পৃথিবীতে যে মানুষ বাস করছে এ জাতের মানুষের আবির্ভাব পৃথিবীতে ঘটেছিলো চল্লিশ হতে পঞ্চাশ হাজার বছর আগে। তার আগের অন্য এক অসম্পূর্ণ মানুষ হতে বিবর্তনের মাধ্যমে আধুনিক মানুষের উদ্ভব হয়েছিলো এবং তা ছিলো এক দীর্ঘকাল ব্যাপি প্রক্রিয়া।
মানুষের ইতিহাস বলতে তার রূপান্তরের, তার প্রগতিশীল বিকাশের বিবরনকেই বোঝায়। ক্রমবিকাশের ধারাবাহিকতায় মানুষ প্রথমে বন্যদশা ও পরে বর্বরদশা অতিক্রম করেছে, তারপর ঘটেছে সভ্যতার সূত্রপাত।
মানুষের এই বিবর্তনকে কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করা যায় :
১.প্রাইমেট
২.অষ্ট্রালোপিথেকাস
৩.খাড়া মানুষ
৪.নিয়ান্ডার্থাল মানুষ
৫.হোমো স্যাপিয়েন বা বুদ্ধিমান মানুষ
প্রাইমেট : প্রায় ৪-৫ কোটি বছর আগে এক জাতের স্তন্যপায়ী প্রাণী গাছে বাস করার ফলে ঐ পরিবেশের উপযোগী কতগুলো গুন অর্জন করেছিলো যা ভ’মিচর প্রাণীদের পক্ষে লাভ করা সম্ভব হয়নি। এ জাতের প্রাণীদের বলা হয় প্রাইমেট। গাছের ডালে বাস করার ফলে প্রাইমেটদের মাংসপেশী, ইন্দ্রিয় ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ ঘটেছে। পরিবেশ হতে সহায়তা পাওয়ার ফলে প্রাইমেটরা কালক্রমে বড় মগজের অধিকারী হয়েছে। অতীতকালে প্রাইমেটদের একটি শাখা হতে বিবর্তনের মাধ্যমে ক্রমে ক্রমে মানুষের উৎপত্তি হয়েছে।
অষ্ট্রালোপিথেকাস : পরবর্তীতে উন্নততর এক প্রাইমেটের ফসিল পাওয়া যায় দক্ষিন আফ্রিকায়। এদের নাম দেয়া হয়েছে অষ্ট্রালোপিথেকাস। শব্দটির অর্থ দক্ষিনের নরবানর। কিন্তু আসলে এরা নরবানর ছিলো না। এদের দাঁত ছিলো ছোট আর কোমরের হাড়, হাত, পা, চোয়াল ইত্যাদি ছিলো প্রায় মানুষের মতো। তবে তার মস্তিষ্কের আয়তন ছিলো আধুনিক মানুষের প্রায় অর্ধেক।
খাড়া মানুষ : তাঞ্জানিয়ার হ্রদের পাড়ের আধা-মানুষদেরও বিবর্তন ঘটতে থাকে এবং আট-দশ লক্ষ বছর আগে আফ্রিকাতেই আরেক নতুন ধরনের মানুষের উৎপত্তি ঘটে। এদের নাম খাড়া মানুষ। এরা খাড়া হয়ে চলতে পারতো। এ মানুষের সময়ে তার আশেপাশে ছিলো আশ্চর্য সব জš-জানোয়ার। আর এ পরিবেশে বেচে থাকার জন্য মানুষকে আরো বেশী চালাক, চতুর ও দক্ষ শিকারী হতে হয়েছে। এদের হাতিয়ার ছিলো উন্নত ধরনের। আর এদের মগজও ছিলো বড়। খাড়া মানুষদের থুতনি বা কপাল বলতে কিছু ছিলো না, এদের ভুরুর খাজ ছিলো গভীর আর চোয়াল ছিলো বেশ বড়। দাঁত ও হাত-পা গুলো ছিলো মানুষের মতই।
নিয়ান্ডারথাল মানুষ : জামৃানীর নিয়ান্ডারথাল নামক স্থানে এক জাতের মানুষের কঙ্কালের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই জায়গার নামানুসারে এ জাতের মানুষের নাম দেয়া হয়েছে নিয়ান্ডারথাল মানুষ।
নিয়ান্ডারথাল মানুষ ছিলো দৈহিক শক্তির অধিকারী এবং দক্ষ শিকারী। আগুন এবং হাতিয়ার তারা আয়ত্ত্ব করেছিলো। এ জাতের মানুষ বহু রকমের পাথরের হাতিয়ার তৈরী করতে পারতো। এরা মৃত মানুষের কবর দিতো। মানুষের ইতিহাসে এটা এক নতুন ঘটনা।
হোমো স্যাপিয়ান : চল্লিশ হতে পঞ্চাশ হাজার বছর আগে ইউরোপ এক নতুন ধরনের শিকারী মানুষের আবির্ভাব হয়। এদের কপাল ছিলো চওড়া, ভুরু মসৃন – এরাই আধুনিক মানুষ। বর্তমান পৃথিবীতে শুধুমাত্র এ জাতের মানুষই আছে। এ আধুনিক মানুষের নাম দেয়া হয়েছে হোমো-স্যাপিয়েন।
No comments:
Post a Comment