শিল্পকলার ইতহাসে চিত্রকলার ক্ষেত্রে ঊনিশ শতকের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প আন্দোলন – ইম্প্রেশনিজম । আধুনিক চিত্রকলার ইতিহাসে এই আন্দোলনের গুরুত্ব অসীম । আধুনিক বিমুর্তন শিল্পকলার উত্তরনের পেছনে ইম্প্রেশনিজম এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলো । বিংশ শতাব্দীর আধুনিক শিল্পকলা সৃষ্টির কারণও এই ইম্প্রেশনিজম আন্দোলন। এজন্য একে বাস্তববাদের মৃত্যু নামে আখ্যায়িত করা হয় ।
১৮৭৪ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম ইম্প্রেশনিষ্টদের চিত্র প্রদর্শনী । এই প্রদর্শনীতে ক্লদ মনের একটি ছবি ইম্প্রেশন সানরাইজ দর্শকদের বিদ্রুপ কুড়ায় । উল্লেখিত ছবিটি লুইম লেভয় নামক একজন শিল্প সমালোচক ছবি আঁকার এই ঢংটিকে ঈষৎ ব্যঙ্গ করে নাম দিলেন ইম্প্রেশন । প্রথমে তারা নামটিকে গ্রহণ না করলেও পরবর্তীতে শিল্পীরা এর ইতিবাচক সৃজনশীল অর্থকে গুরুত্ব দিয়ে স্বেচ্ছায় নিজেদের অভিহিত করেন ইম্প্রেশনিষ্ট শিল্পী দল বলে ।
ঊনিশ শতকের শেষ দিকে মনে, মানে, দেগা, পিসারো, রেনোয়া এবং এদের সমসাময়িক কতিপয় ফরাসী চিত্রশিল্পী গতানুগতিক সর্বজন স্বীকৃত চিত্ররীতি হতে সরে এসে নতুনভাবে ছবি আঁকতে শুরু করে । এসব ইম্প্রেশনিষ্ট শিল্পীরা উপস্থাপন করেন – রং সবসময় এক রকম থাকে না, একেক সময় আলোর প্রতিফলন পড়ে ভিন্ন ভিন্ন রং ধারন করে । আলোর পরিবর্তন ঘটে সেই বিশেষ মুহূর্তকে ধরতে তারা আলোর উজ্জ্বলতার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন । স্টুডিওর বাইরে খোলা আকাশের নীচে ছবি আঁকাতে তারা অধিক আগ্রহী হলেন । তারা গুরুত্ব দিলেন শিল্পীর মুহূর্তের অনুভূতিকে যা পাশ্চাত্য চিত্রকলায় একেবারেই নতুন ।
ইম্প্রেশনিজম বাস্তববাদের দৃশ্যমান পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাড়িয়ে দিয়েছে । এ সময়ে বর্ণের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার আলোকে রংধনুর সাতটি রংকে তারা ব্যবহার করেন । তাদের ব্রাশগুলোর স্ট্রোকে ছিলো গতি । শিল্পীরা প্রচলিত ব্রাশ স্ট্রোকের ব্যবহার করেছে । সাধারণ প্রকৃতি ছাড়াও ঘোড়া দৌড়, ব্যালে ড্যান্স, কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ প্রভৃতি বিষয় তাদের ছবির বিষয় হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে । আলোর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষন পর্যবেক্ষন ও রাসায়নিক রং এর আবিষ্কারের ফলে এই সময়কার চিত্রকলায় নতুন নতুন রং এর বিন্যাস লক্ষ্য করা যায় ।
কয়েকজন ইম্প্রেশনিষ্ট শিল্পী :
ক্লদ মনে ( ১৮৪০ – ১৯২৬ ) :
তিনি হলেন ইম্প্রেশনিজমের সফল আবিষ্কারক । এই আন্দোলনের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত একমাত্র তিনিই এর সাথে যুক্ত থেকে কাজ করে গেছেন । মনের আঁকা ‘ইম্প্রেশন সানরাইজ’ ছবিটি দ্বারা এই শিল্প আন্দোলনের নামকরন করা হয় ।
মনের শিল্পকর্ম হচ্ছে বৈজ্ঞানিক মানসের এক ফলশ্রুতি । আলোর পরিবর্তনের সাথে বিষয়বস্তুর আকার , আকৃতি ও গড়নের যে পরিবর্তন হয় তা তিনি প্রমান করে গেছেন ।
এদগার দেগা ( ১৮৩৪ – ১৯১৭ ) :
ইম্প্রেশনিষ্ট শিল্পীদের মধ্যে অনন্য ছিলেন এদগার দেগা । বিশেষ ভঙ্গী ও গতিময়তা ছিলো তার চিত্রকলার প্রান । ব্যালে নর্তকীদের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গীর মুহূর্তের রূপকে তিনি ধরে রাখতে সক্ষম হন । তার সেসব ছবি দর্শকের চোখে দেখা ব্যালের জমকালো রূপ নয় । তা রূঢ় বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি । ছবির সৌন্দর্য চিত্রিতাদের রূপ লাবন্যে নয় । তার আলোক সম্পাতে , ড্রইংয়ে , রঙে ও পরিকল্পিত নক্সায় ।
এডোয়ার্ড মনে :