পঞ্চদশ শতাব্দীর শুরুতে ইউরোপীয় শিল্পকলায় যে নবজাগরনের সৃষ্টি হয়েছিলো তারই ধারাবাহিকতা এক ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে ম্যানারিজম, বারোক-রকোকো হয়ে অষ্টাদশ শতাব্দীতে আধুনিক শিল্প আন্দোলনের সূত্র রোমান্টিসিজমের জন্ম। এই চিত্র আন্দোলন ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং জার্মানীতে শুরু হয়।
রোমান্টিসিজমের সময়কাল আনুমানিক ১৭৫০ হতে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত। তবে মূলত: ১৮০০ হতে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত এর চরম উৎকর্ষতা পরিলক্ষিত হয়। রাজনৈকতকভাবে এ সময়টা ছিলো বৈপ্লবিক যুগ। এ পর্যায়ে সবকিছু দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছিল এবং এক্ষেত্রে নৈতিক ব্যাপারটা প্রাধান্য পাচ্ছিল।
রোমান্টিসিজম শিল্পকলার এমন এক অবস্থা যা যুক্তিবাদ হতে শিল্পকলাকে আবেগ ও অনুভূতির জগতে নিয়ে যায়। এই সময়েই শিল্পকলা দ্রুত ধাবিত হয় আধুনিক মানসিকতার দিকে। এই সময় নতুন চিন্তাধারার উদয় হয়, আর তা হলো “সৎ আবেগের কাছে অসৎ বা নষ্ট বস্তু নিঃশেষ হয়ে যায়”। প্রকৃতির প্রতি নিবিড় আকর্সন ও প্রকৃতির সান্নিধ্য লাভ করা তথা অতি প্রাকৃতিক জগতের প্রতি প্রবল আগ্রহ রোমান্টিসিজমের বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য।
রোমান্টিসিজমের অর্থ ও ব্যাখ্যার জন্য ওয়াটল্স ডুনটন - বলেন, “রোমান্টিক ভাব কল্পনার বিশেষত্ব, বিস্ময়রসের পূনর্জীবন”।
রোমান্টিসিজমের শ্লোগান ছিলো, “তোমার হৃদয়কে মস্তিস্কের হতে বেশী বিশ্বাস করো”।
জার্মান কবি গ্যাটে বলেন, “অনুভূতিই সব”। তাছাড়া কবি ওয়ার্থার বলেন, “আমরা আমাদের জীবনে একটা মাত্র বিখ্যাত আবেগের জন্য আমাদের সমস্ত অস্তিত্ব ছেড়ে দিতে রাজি আছি”। এই আবেগ বৈপ্লবিক যুগের বীরত্বপূর্ণ সংবেদনশীলতাকে দ্রুত ছাড়িয়ে যায়। এ পর্যায়ে কল্পনাকে বেশী প্রাধান্য দেো হয়েছে। বিষয়গত প্রকৃতি হতে এসময় বিষয়গত আবেগকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বেশী। অর্থাৎ কল্পনা প্রবনতার অসাধারন প্রকাশই রোমান্টিসিজমের মূল বৈশিষ্ট্য। এ ধারার শিল্পীরা প্যাথেটিক এবং ট্র্যাজেটিক বিষয়কে বেছে নিয়েছিলেন তাদের শিল্পকর্মের বিষয় হিসেবে। এমনকি তারা প্রথমবারের মতো দুঃখকে বোঝাবার জন্য নীল রং ব্যবহার করলেন।
দৃশ্যমান শিল্পে রোমান্টিক আন্দোলন ‘সাধারন মানুষ’ ‘প্রকৃতি’ ও ‘ব্যক্তি’ সম্পর্কিত বিষয় মনোভঙ্গী গড়ে তুলেছে। চিত্রকলা নিসর্গে আরোপিত হয়েছে নৈতিক মূল্যমান। প্রথম দৃষ্টিতে মনে হয় রোমান্টিক আন্দোলন ধ্রুপদী পুনরুজ্জীবন প্রত্যয়ের সম্পূর্ন বিপরীত। আসলে রোমান্টিসিজম ও ক্লাসিকিজমের মধ্যে সত্যিকার কোনো বিরোধ নেই বরং একটি অপরটির পরিপূরক এবং সত্যিকারের বিরোধ রোমান্টিসিজম ও রিয়েলিজমের মধ্যে।
রোমান্টিক কল্পনা মানবচিত্তকে আন্দোলিত উদ্বেলিত ও সচল করে, ক্লাসিক কল্পনা সংযত ও সংহত করে। রোমান্টিক দৃষ্টি অশান্ত, বিদ্রোহী, ক্লাসিক্যাল দৃষ্টি শান্ত সমাহিত সাধনার পক্ষপাতি, রোমান্টিক দৃষ্টি ভাবাবেগমুগ্ধ রং বিহবল, ক্লাসিক কল্পনাস্বচ্ছ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।
রোমান্টিসিজম এর সময় ইউরোপে বুদ্ধিবৃত্তির প্রসার ঘটে এবং শিল্পের বিষয়বস্তু হতে আলাদাভাবে অবস্থান শুরু হয়। এ সময়কার ছবিতে বিভিন্ন জীবনাচার, জীবনবোধ ও সমাজ চেতনায় চার্চের প্রভাব ও অস্পষ্ট মায়াবী ধ্যান ধারনা হতে বেরিয়ে এসে জীবনকে উপলব্ধি করা ও প্রকৃতির সাথে সম্পৃক্ততার কথা অনুধাবন ও স্থিতকরন গুরুত্ব বোঝাতে সক্ষম হয়। সে সময় শহর হতে দূরে, জানা হতে অজানায়, বাস্তব হতে কল্পনায় ছড়িয়ে যাবার এবং হারিয়ে যাবার এক পলায়ন পর মনোবৃত্তি উদয় হয়। এ সময়ের আন্দোলন অস্পষ্ট এবং সবচেয়ে জটিল, অদেখা অধরা এই জগৎই রোমান্টিসিজম নামে খ্যাত।
রোমান্টিসিজমের মূল শিল্পী হলেন দেলাক্রোয়া। তাছাড়া এ ধারার অন্যান্য শিল্পীরা হলেন ইনগ্রে, টার্নার, কনষ্টেবল প্রমূখ অন্যতম।
দেলাক্রোয়ে ( ১৭৯৮ - ১৮৬৩ ) :
দেলাক্রোয়ের কাজে রোমান্টিসিজম পূর্ণতা পেয়েছে। তিনি ছিলেন আবেগদীপ্ত, অগ্নিপ্রান শিল্পী। তিনি তার বিষয় খুঁজে বেড়িয়েছেন ইতিহাসে, শেক্সপিয়ারে, দান্তে, বাইবেলের সাহিত্যে। দেলাক্রোয়ে রোমান্টিসিজমের মূল নীতিগুলোকে নিজের মধ্যে একত্রিত করেছিলেন। তার চিত্র মনোমুগ্ধকর কবিতার মতো কবিত্বময় এবং নাটকীয়। তিনি সমসাময়িক রাজনৈতিক ঘটনাবলী অঙ্কন করেন।
দেলাক্রোয়ের চিত্রে বর্ণগুলি উজ্জ্বল, স্পন্দিত ও প্রানপূর্ন হয়ে উঠতো। দেলাক্রোয়ের চিত্রে তিনটি গুন বর্তমান আছে – বর্ণ, কাব্য এবং রূপসংস্থান। তিনি সাধারনত রাষ্ট্রীয় ঘটনা অবলম্বন করে চিত্র রচনা করেছেন। তখনকার রৌদ্র বিধৌত প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলি উজ্জ্বল বর্ণ ও ব্যক্তিবর্গের পোশাক – পরিচ্ছদ চিত্রে নতুনত্ব সৃষ্টি করেছিলো।
ধন্যবাদ
ReplyDeletegood page
ReplyDeletethe best ,got it whet i would need some information for my exam
ReplyDeletegood
ReplyDeleteচমৎকার
ReplyDeleteধন্যবাদ
ReplyDeletePlease change the font color, it is hardly readable on this background..
ReplyDelete