Tuesday 27 April 2010

ইম্প্রেশনিজম

শিল্পকলার ইতহাসে চিত্রকলার ক্ষেত্রে ঊনিশ শতকের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প আন্দোলন ইম্প্রেশনিজম আধুনিক চিত্রকলার ইতিহাসে এই আন্দোলনের গুরুত্ব অসীম আধুনিক বিমুর্তন শিল্পকলার উত্তরনের পেছনে ইম্প্রেশনিজম এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলো বিংশ শতাব্দীর আধুনিক শিল্পকলা সৃষ্টির কারণও এই ইম্প্রেশনিজম আন্দোলন। এজন্য একে বাস্তববাদের মৃত্যু নামে ‍আখ্যায়িত করা হয়

১৮৭৪ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম ইম্প্রেশনিষ্টদের চিত্র প্রদর্শনী এই প্রদর্শনীতে ক্লদ মনের একটি ছবি ইম্প্রেশন সানরাইজ দর্শকদের বিদ্রুপ কুড়ায় উল্লেখিত ছবিটি লুইম লেভয় নামক একজন শিল্প সমালোচক ছবি আঁকার এই ঢংটিকে ঈষৎ ব্যঙ্গ করে নাম দিলেন ইম্প্রেশন প্রথমে তারা নামটিকে গ্রহণ না করলেও পরবর্তীতে শিল্পীরা এর ইতিবাচক সৃজনশীল অর্থকে গুরুত্ব দিয়ে স্বেচ্ছায় নিজেদের অভিহিত করেন ইম্প্রেশনিষ্ট শিল্পী দল বলে

ঊনিশ শতকের শেষ দিকে মনে, মানে, দেগা, পিসারো, রেনোয়া এবং এদের সমসাময়িক কতিপয় ফরাসী চিত্রশিল্পী গতানুগতিক সর্বজন স্বীকৃত চিত্ররীতি হতে সরে এসে নতুনভাবে ছবি আঁকতে শুরু করে এসব ইম্প্রেশনিষ্ট শিল্পীরা উপস্থাপন করেন রং সবসময় এক রকম থাকে না, একেক সময় আলোর প্রতিফলন পড়ে ভিন্ন ভিন্ন রং ধারন করে আলোর পরিবর্তন ঘটে সেই বিশেষ মুহূর্তকে ধরতে তারা আলোর উজ্জ্বলতার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন স্টুডিওর বাইরে খোলা আকাশের নীচে ছবি আঁকাতে তারা অধিক আগ্রহী হলেন তারা গুরুত্ব দিলেন শিল্পীর মুহূর্তের অনুভূতিকে যা পাশ্চাত্য চিত্রকলায় একেবারেই নতুন

ইম্প্রেশনিজম বাস্তববাদের দৃশ্যমান পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাড়িয়ে দিয়েছে এ সময়ে বর্ণের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার আলোকে রংধনুর সাতটি রংকে তারা ব্যবহার করেন তাদের ব্রাশগুলোর স্ট্রোকে ছিলো গতি । শিল্পীরা প্রচলিত ব্রাশ স্ট্রোকের ব্যবহার করেছে । সাধারণ প্রকৃতি ছাড়াও ঘোড়া দৌড়, ব্যালে ড্যান্স, কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ প্রভৃতি বিষয় তাদের ছবির বিষয় হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে । আলোর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষন পর্যবেক্ষন ও রাসায়নিক রং এর আবিষ্কারের ফলে এই সময়কার চিত্রকলায় নতুন নতুন রং এর বিন্যাস লক্ষ্য করা যায় ।

কয়েকজন ইম্প্রেশনিষ্ট শিল্পী :

ক্লদ মনে ( ১৮৪০ ১৯২৬ ) :

তিনি হলেন ইম্প্রেশনিজমের সফল আবিষ্কারক । এই আন্দোলনের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত একমাত্র তিনিই এর সাথে যুক্ত থেকে কাজ করে গেছেন । মনের আঁকা ‘ইম্প্রেশন সানরাইজ’ ছবিটি দ্বারা এই শিল্প আন্দোলনের নামকরন করা হয় ।

মনের শিল্পকর্ম হচ্ছে বৈজ্ঞানিক মানসের এক ফলশ্রুতি । আলোর পরিবর্তনের সাথে বিষয়বস্তুর আকার , আকৃতি ও গড়নের যে পরিবর্তন হয় তা তিনি প্রমান করে গেছেন ।

এদগার দেগা ( ১৮৩৪ ১৯১৭ ) :

ইম্প্রেশনিষ্ট শিল্পীদের মধ্যে অনন্য ছিলেন এদগার দেগা । বিশেষ ভঙ্গী ও গতিময়তা ছিলো তার চিত্রকলার প্রান । ব্যালে নর্তকীদের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গীর মুহূর্তের রূপকে তিনি ধরে রাখতে সক্ষম হন । তার সেসব ছবি দর্শকের চোখে দেখা ব্যালের জমকালো রূপ নয় । তা রূঢ় বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি । ছবির সৌন্দর্য চিত্রিতাদের রূপ লাবন্যে নয় । তার আলোক সম্পাতে , ড্রইংয়ে , রঙে ও পরিকল্পিত নক্সায় ।

এডোয়ার্ড মনে :

প্রকৃতিতে একটি রং কিভাবে অন্য রঙের মধ্যে বিলীন হয়ে যায় তা দেখে তিনি ঘোষনা করলেন ‘প্রকৃতিতে কোনো রেখা নেই’ । এরপর হতেই তিনি রঙের সংমিশ্রনের সাহায্যে বিষয়ের আকৃতি তৈরী করতে থাকেন । তিনি আরলাকেই সর্বোবিধ গুরুত্ব দিতেন । তার কাজে আলোকে ফুটিয়ে তোলা , উজ্জ্বল করা , উদ্ভাসিত করাই ছিলো মুখ্য উদ্দেশ্য ।

2 comments: