Saturday 1 May 2010

পোস্ট ইম্প্রেশনিজম

১৮৮০ এর পর তরুন শিল্পীরা , যাদের পোস্ট ইম্প্রেশনিস্ট বলা হয় , তারা অনুভব করলেন যে শিল্পের সামাজিক দায়িত্ব আছে , ‍শিল্পকে আরো বেশী সংগঠিত ও কাঠামোবদ্ধ হওয়া উচিত। এই শিল্পীরা চিত্রের ত্রিমাত্রিক গুনাবলী রেখার প্রকাশধর্মতিা প্যাটার্ন , রং এবং বিষয়ের প্রতীকী গুনাবলী নিয়ে আসলেন।

পোস্ট ইম্প্রেশনিস্ট শিল্পীদের মধ্যে

১. স্যুরা

২. পল সেজান

৩. ভ্যানগগ

৪. পল গঁগ্যা

এ ধারার শিল্পীদের শিল্পকলা পূর্ব ইম্প্রেশনিস্ট শিল্পীদের হতে কিছুটা স্বতন্ত্র যদিও তারা ইম্প্রেশনিস্ট ধারাকে প্রথমে গ্রহন করেছিলেন এবং এদের উজ্জ্বল রং ব্যবহারকে কখোনই পরিত্যাগ করেননি। এরা পোস্ট ইম্প্রেশনিস্ট শিল্পী রূপে আখ্যায়িত।

জর্জ স্যুরা ( ১৮৫৯ - ৯১ ) :

১৮৮০ তে অনুষ্ঠিত হলো ইম্প্রেশনিস্টদের অষ্টম ও শেষ প্রদর্শনী। জর্জ স্যুরা এ প্রদর্শনীতে তার বিখ্যাত চিত্র ‘এ সানডে আফটারনুন অন দ্যা আইল্যান্ড অফ লা গ্রান্ড জেটল’ প্রদর্শিত হলো। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দুর মাধ্যমে আঁকা তার ছবি সম্পূর্ন এক নতুন ধারা। তিনি একটি রঙের সাথে অন্য রঙের সম্পর্ক রেখে প্যালেটে রং না মিশিয়ে বিন্দু ব্যবহার করে কাজ করেছেন যা অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য। তার চিত্রের রং উজ্জ্বল ও জীবন্ত।

পোস্ট ইম্প্রেশনিস্ট শিল্পীদের মধ্যে স্যুরাটের অবদান অনেক। রং সম্পর্কে তার প্রজ্ঞা , কম্পোজিশনের উপর দক্ষতা এবং স্থান ভাগ সম্বন্ধে জ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে সমসাময়িকদের মধ্যে তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তিনি রঙের উজ্জ্বলতা বজায় রাখার জন্য রঙের সঙ্গে মিশ্রন করতেন না এবং ন্দিু বিন্দু হিসেবেই স্বতন্ত্র রং লাগাতেন। তিনি উষ্ণ ও শীতল রঙের বিন্দু মোজাইকের মতো চিহ্ন ব্যবহার করতেন। এতে প্রত্যেক রঙের নিজস্ব বৈশিস্ট্য ও উজ্জ্বলতা বজায় থাকে।

‘গ্র্যান্ড জাতে দ্বীপে রবিবারের সন্ধ্যা’ চিত্রটিতে মূলত: উলম্ব গড়ন বিশেষ করে মানুষ ও গাছের। আর আনুভূমিক গড়ন হলো ছায়া ও দূরের নদীর পাড়ের, সব মিলিয়ে চিত্রকলাটি পূর্নতা লাভ করেছে। ছবিটিতে সূর্যালোক আছে। আলো বাতাস এবং প্রকৃতি সবাই যেন এক ঐক্যতানে বাধা।

পল সেজাঁ ( ১৮৩৯ - ১৯০৬ ) :

পোস্ট ইম্প্রেশনিস্ট শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম শিল্পী পল সেজাঁ। বিংশ শতাব্দীর আধুনিক শিল্পকলায় পথ প্রদর্শক হলো পল সেজাঁ। সেজাঁ এবং অপর দুই সমসাময়িক শিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গগ ও পল গঁগ্যার কাজের মধ্য দিয়ে শিল্পকলায় আধুনিক লক্ষনগুলো দেখা দিতে শুরু করে।

সেজাঁর ছবির প্রধান বৈশিষ্ট্য তিনি প্রকৃতির অনুকরনে ছবি আঁকেননি ইম্প্রেশনিস্টদের মতো সেজাঁ তার কাছে ভাবকল্প ঢুকিয়ে দেননি , তার উদ্দেশ্য ছিলো স্থায়ী গড়ন নির্মানের। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সব কিছুতেই যদি আমরা রঙকে দেখতে পাই তাহলে রঙই গড়ন তৈরী করতে পারে এবং আলোক ছায়াও সৃষ্টি করতে পারে। রং বোঝাতে পারে গভীরতা , দূরত্ব এবং রঙই আনতে পারে গড়ন ও ঘনত্ব।

প্রকৃতির সামনে দাঁড়িয়ে সেজাঁ চিত্রকলার এক বুদ্ধিবৃত্তিক নকশা আনার প্রয়াসী হলেন। ইম্প্রেশনিস্টদের মতো যাচ্ছেতাই কিছু করার চেষ্টা করলেন না। নিরবচ্ছিন্ন প্রচুর শ্রম দিয়ে তিনি তার ভাষার মটিভ নির্মানে ব্রতী হলেন। পূর্বের টোনের ব্যবহার পরিত্যক্ত হলো। সেজাঁ নতুন পথের সন্ধান দিলেন।

বহু মাস বহু বছর ধরে সেজাঁ প্রকৃতিকে নিরীক্ষন করেছেন তার প্রচন্ড ক্ষমতা এবং একাগ্রতা নিয়ে। সেজাঁ আবিষ্কার করেন রেখা সমতল এবং রঙের গুনাগুন এবং তাদের একটির সাথে অন্যটির সম্পর্ক। রৈখিক গতিপথের বিভিন্নভাবে প্রভাব, তলের গভীরতা সৃষ্টির ক্ষমতা, রঙের চরিত্র বিশেষ করে গভীরতা এবং তালের উপর এর প্রভাব এসব শীথল রঙকে কমিয়ে উষ্ণ রঙকে বাড়িয়ে তিনি ছবিতে ওজন এবং গভীরতার পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন। রঙের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে গড়নের সর্বোত্তম অবয়ব আনতে সক্ষম হন।

বর্ণ প্রয়োগে সেজাঁ যুগান্তকারী উপলব্ধির প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তিনি বর্ণের তারতম্য ঘটিয়ে বস্তুর ঘনত্ব ও দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন। এসব কৌশলের ফলে সেজাঁনের ছবি হয়ে ওঠে একান্ত নিজস্ব বৈশিষ্ট্যময় যা তার ইম্প্রেশনিস্ট বন্ধুদের হতে ভিন্ন রকমের।

ইম্প্রেশনিস্ট আন্দোলন যখন চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছিলো তখন ভ্রানগগের আবির্ভাব হয় উল্কার মতো। প্রকৃতির গতি এবং মানুষের আবেগ অনুভূতির উপর ভ্যানগগের অখন্ড মনোযোগ ছিলো্রেঙের অভিজ্ঞতাকে ভ্যানগগ এক নতুন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান করলেন। রঙের মাধ্যমেই তিনি তার মনের ভাব প্রকাশ করা শুরু করেন। ভ্যানগগের আাঁকা একটি বিখ্যাত ছবি ‘রাতের ক্যাফে’। দৃশ্যটি একটি প্রাদেশিক শহরের রেস্তোরার অভ্যন্তর ভাগ। এখানে রঙের ইচ্ছামতো ভাংচুর লক্ষ্য করা যায়। দেখার চেয়ে অনুভবকে এখানে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। সমস্ত ছবি জুড়ে রয়েছে এক ধরনের হলুদেটে সবুজ আভা। ছাদের রং গাড় সবুজ , সেই সাথে আাঁকা হয়েছে লাল দেয়াল যা সবুজের সাথে বিপরীত অবস্থার সৃষ্টি করে , বাতির চারদিক রয়েছে হলুদ প্রভামন্ডল সমগ্র ছবির মধ্যে এক ‍বিষন্ন তন্দ্রলুতা এবং এক ধরনের অদ্ভুত পরিবেশ বিরাজ করছে।

ভ্যানগগের ‘স্টেরি নাইট’ বা ‘তারকাজুল রাত’ ছবি আরো প্রকাশধর্মী। নীল পর্দার ওপর যেনো তারকারা ঝিকমিক করছে। মনে হয় যেনো এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডকে তিনি এখানে উপস্থিত করেছেন যেখানে তারকারাজি ঘূর্ণায়মান ও গতিশীল। তার নিচের মাটির পৃথিবী ও পরিবেশ যেনো ভয়াবহ দূর্যোগকবলিত। ছবির বামপাশে এক বিশাল বৃক্ষ যেনো দ্রুত বেড়ে উঠেছে বিস্ফোরনোন্মুখ আকাশের নীচে। শিল্পী এখানে প্রকৃতির স্বাভাবিক ঐকতানকে উপেক্ষা করেছেন বরং একান্ত দৃষ্টিকোন হতে তিনি এ বিষয়টিকে প্রকাশ করেছেন। ভ্যানগগের সব ছবিতেই আমরা দেখি এ ধরনের এক প্রচন্ড আবেগঘন মূহুর্ত যার সাথে কোনো কালের কোনো শিল্পীর মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। ভ্যানগগের মতে শিল্পের জন্য শিল্প। তিনি বিশ্বাস করতেন শিল্পের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষকে সান্তনা দেয়া।

পল গঁগ্যা ( ১৮৪৩ - ১৯০৩ ) :

চিত্রকলায় বিষয়গত উপস্থাপনের চেয়ে আত্মিক বা কল্পিত প্রকাশভঙ্গীর প্রতি একাত্বতা প্রকাশ করেন। তিনি বিষয় প্রকাশকে প্রত্যাখান করেছেন।

গগঁ্যার রঙের ব্যবহার ছিলো ভিন্নতর। তিনি যে সমস্ত রঙের সমন্বয় করেছেন তা সচরাচর দেখা যায় না। গগঁ্যার চিত্রে আমরা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের এক জটিল মিলন লক্ষ্য করি। ইউরোপের রেনেসাঁ যুগের বিষয় বস্তুর পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়াদিও স্থান পেয়েছে তার চিত্রকলায়। তাহিতি ও মার্কোয়েসাস দ্বীপে তিনি তার জীবনের শেষ দশটি বছর অতিবাহিত করেন। এখানকার মানুষের আদিম জীবনযাত্রা এবং উজ্জ্বল প্রকৃতি তার চিত্রকলায় বিশেষ স্থান লাভ করে বর্ণাঢ্য শক্তিশালী ও নকশাধর্মী এক আকর্সনীয় চিত্রকলার জন্ম দিয়েছে। তার ছবিকত ব্যবহৃত নকশা ছিলো স্থানীয় অধিবাসীদের। এছাড়া দ্বীপের লাইলাক ফুল গোলাপী রং ঞাল্কা লেবুর ঞলুদ সাই তার চিত্রকলায় অবলীলায় স্থান লাভ করেছে।

গঁগ্যার আঁকা আদিম মানুষের জীবনযাত্রার এসব চিত্র ইউরোপীয় সভ্যতার বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিবাদ। তিনি বলেছেন , সভ্যতা আমাদের অসুস্থ করে তোলে।

তার কয়েকটি বিখ্যাত চিত্রকর্ম :

১. তাহিতীর মেয়ে

২. আর্লসের বুড়ীরা

No comments:

Post a Comment