Wednesday 31 March 2010

ম্যানারিজম

ম্যানারিজমের অর্থ বিশেষ রীতি নীতি। ইতালীয়ান শব্দ ম্যানিয়েরা হতে ম্যানারিজমের উৎপত্তি। ইতালীয়ান শিল্পী ভাসারী প্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন।

হাই রেনেসাঁর পর অর্থাৎ ষোড়শ শতাব্দীতে ইতালীতে বিশেষ বৈশিষ্ট্যধর্মী শিল্পরীতির চর্চা চলে - যা ম্যানারিজম নামে পরিচিত। আনুমানিক ১৫২০ খৃঃ হতে ১৬০০ খৃঃ পর্যন্ত এর সময়কাল।

শিল্পী মাইকেল এঞ্জেলোকে ম্যানারিজমের জনক বলা হয়। তার আঁকা “দ্যা লাস্ট জাজমেন্ট” চিত্রটিতে প্রথম ম্যানারিজমের বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। ম্যানারিজম শিল্পীরা মূলতঃ হাই রেনেসাঁর বিখ্যাত শিল্পীদের কাজ সরাসরি অনুকরন করতে শুরু করেন, তাদের কাজের বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো। বিশেষ করে শিল্পী মাইকের এঞ্জেলোর কাজগুলো। ম্যানারিজম শিল্পীরা প্রকৃতির কাছ হতে শিক্ষা গ্রহন না করে তাদের পূর্ববর্তী কালের শিল্পী অর্থাৎ হাই রেনেসাঁ যুগের শিল্পীদের শিল্পকর্ম হতে শিখতে শুরু করেন। রেনেসাঁর প্রতিক্রিয়ার ফলস্বরূপ এ সময়কার শিল্পীরা চাইলেন ওল্ড মাস্টারের কাজকে আজ্ঞা করে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে। যার পরিনতি শিল্পীদের প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ দিতে সমর্থ হয় ম্যানারিজম শিল্পশৈলী। ম্যানারিজম কে তাই ফার্স্ট ইন্টেলেকচুয়াল আর্ট বলা হয়।

ম্যানারিজম শিল্পমৈলীর উৎপত্তি হয়েছিল হাই রেনেসাঁর পর শিল্পের জগতের শূন্যতা পূরনের জন্য। এই শূন্যতা পূরনের জন্য ম্যানারিজম শিল্পীরা পূর্ববর্তী শিল্পীদের কাজের বিশেষ কিছু ম্যানারকে প্রাধান্য দিতে তাদের কাজে এনেছিলেন পূনরাবৃত্তি। আর এ পূনরাবৃত্তি করা হতো সচেতনতার সাথে।

বর্তমান কালের পন্ডিতেরা ম্যানারিজমের যুগকে সংস্কারমুক্ত হয়ে বোঝার চেষ্টা করছেন। পূর্বে মানুষ একে সাংস্কৃতিক অবক্ষয় বলে মনে করতো। তারা বলতো যে ম্যানারিস্ট শিল্পীরা রেনেসাঁস যুগের সৃষ্টিকে ব্যর্থ অনুকরন করেছিলেন এবং আকৃতিকে অতিরঞ্জিত করতে গিয়ে কৃত্রিমতার আমদানী করেছেন। সপ্তদশ শতাব্দীর নিত্ত ক্লাসিকাল শিল্পানুরাগী পন্ডিতেরা ম্যানারিজম সম্বন্ধে এই ধারনা পোষন করতেন বলে মানুষের মনে এলো সংস্কার। কিন্তু ম্যানারিজম শব্দটির ভাবার্থ পাওয়া যায় শিল্পী ভাসারীর লেখা হতে। ম্যানার শব্দ হতে এর উৎপত্তি ইতালীয় ভাষায় যাকে বলে ম্যানিয়েরা। শিল্পীর ভাবপ্রকাশের পন্থা প্রভাবিত হয় ঐতিহাসিক কারনে বা তার আপন ব্যক্তিসত্তা দ্বারা বা আঙ্গিক দ্বারা এই হতে সৃষ্টি হয় স্টাইল। ভাসারীর ব্যবহৃত ম্যানিয়েরা শব্দটি এরই ইঙ্গিত বহন করে।

ষোড়শ শতকে ইতালীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রে ক্যাথেলিক ও প্রোটেষ্টান্ট মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব মানুষের মনে আনে গভীর সংশয় - এলো তার অস্তিত্বের সংকট এবং এই চিন্তা হতে এলো ম্যানারিজমের জন্ম। ফরাসী ও স্প্যানিশ সেনাদল ইতালী জয় করে ষোড়শ শতকের প্রথমার্ধে। অবাধ লুন্ঠনে ক্ষতিগ্রস্থ হয় রোম। অর্থনীতিক ক্ষেত্রে ইতালীর প্রাধান্য চলে যায়। স্পেন ও ফ্রান্সের অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙ্গে গেলে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও তার প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে মার্টিন লুথার প্রবর্তিত ধর্মসংস্কার আন্দোলন ক্যাথলিক শিবিরে প্রবল আঘাত হানে। অনিশ্চয়তার মধ্যে মানুষের মনের ভারসাম্য হারিয়ে গেলে মানুষ তখন চাইলো কোনো অবলম্বন ধরে থাকতে। উত্তরনের পথ কোথায় ? উদ্বিগ্ন হয়ে ক্ল্যাসিকাল শিল্পের ভাষাকে শিল্পী চাইলেন হৃদয়ে ধারন করতে, চাইলেন অন্তত তাকে অনুকরন করতে। কিন্তু মনের গভীরে অস্বচ্ছ ছন্দ থাকায় ক্ল্যাসিকাল আদর্শের যথার্থ রূপায়ন সম্ভব হলো না। ক্ল্যাসিকাল শিল্পের প্রশান্তি, আবেগ ও যুক্তির ভারসাম্য এবং আকৃতির দৈহিক অনুপাতের সঙ্গতি বজায় রইলো না। যুক্তিবাদকে অতিক্রম করে গেলো মধ্যযুগীয় খৃষ্টান ভাববাদ - প্রকাশ পেলো অনুভূতির তীব্রতা ও আধ্যাতিকতা। মাইকেল এঞ্জেলোর শেষ জীবনের সৃষ্টি এবং তিনন্তোরেত্তোর চিত্রকলার সনাক্তচিহ্ন বহন করে এবং তাদের রচনা হতে ম্যানারিজমের সূত্রপাত। পার্মি জানিনো তার ছবিতে আকৃতি গুলিকে দীর্ঘায়িত করলেন এবং পরিসরে স্বাভাবিক ত্রিমাত্রিক বৈশিষ্ট্যকে কাটিয়ে দিতে চাইলেন। পনান্তর মোর অঙ্কিত চিত্রে আকৃতিগুলির আউটলাইন স্পন্দিত হলো ও হ্রাস পেলো দৈহিক ঘনত্ব। রসসোর ছবিতে ফুটে উঠলো তীব্র নাটকীয়তা। ফরাসী ম্যানারিস্টদের ছবিতে আকৃতির দেহ হলো ক্ষীন ও দীর্ঘায়িত, মাপ ছোট হয়ে এক পাশে একটু হেলে গেলো, নয়ন ভরে উঠলো ভাবাবেগে এবং হাতে প্রকাশ পেলো আবেগতাড়িত কম্পন।

তবে ম্যানারিস্ট শিল্পীরা রাফায়েল ও মাইকেল এঞ্জেলোর শিল্পকর্মগুলোকে অনুসরন করে চিত্র অঙ্কন করলেও উক্ত শিল্পীদের চিত্রে যে বাস্তবতা ছিলো তাদের ছবিতে তার অভাব ঘটে।

ম্যানারিজম শিল্পীদের চিত্রে বিশেষ যে বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ্যনীয় ‍:

১) চিত্রে ফিগারের বিশেষ পরিবর্তন। এগুলো হতো দীর্ঘ বা মোচড়ানো।

২) কম্পোজিশনের ক্ষেত্রেও ম্যানারিস্টরা পরিবর্তন এনেছে। কখনো তাতে ভারসাম্যহীনতা লক্ষ্য করা যায়।

৩) ক্ল্যাসিকাল রীতিতে অনুকেরন কিন্তু তাতে নাটকীয়তার ‍আবির্ভাব।

৪) চিত্রে রঙের ব্যবহারে উজ্জ্বল রঙের প্রাধান্য।

৫) চিত্রে আলোর ব্যবহারে উজ্জ্বল আলোর উপস্থিতি। যেমন ‍: এল গ্রেকোর ‘দ্যা বারিয়াল অফ কাউন্ট অরগাজ’ চিত্রটিতে চোখ ধাধাঁনো আলোর ব্যবহার পাওয়া যায়।

উল্লেখযোগ্য কয়েকজন ম্যানারিস্ট শিল্পী:

১. রসো ফিওরেন্টিনো (১৪৯৪-১৫৪০)

২. পন্টোরমো (১৪৯৪-১৫৫৬)

৩. পার্মিগিয়ানিনো (১৫০৩-১৫৪০)

৪. টিন্টোরেট্টো (১৫১৮-১৫৯৪)

৫. এল গ্রেকো (১৫৪১-১৬১৪)

দ্যা বারিয়াল অফ কাউন্ট অরগাজ : (১৫৮৬, তেলরং)

চিত্রটি বিখ্যাত ম্যানারিস্ট শিল্পী এল গ্রেকোর আঁকা। চিত্রটি টলতোর সান্তো তোমে গীর্জার জন্য আঁকা। ছবির বিষয় স্বর্গ হতে স্টিফেন এবং অগাষ্টিন মাটির পৃথিবীতে নেমে কাউন্ট অরগাজের মৃতদেহকে শবাধারে রাখছেন। এই ছবিটি দুটি অংশে বিবক্ত। একটি মাটির পৃথিবী, অপরটি স্বর্গ। শিল্পী নিজস্ব কিছু এখানে দেখিয়েছেন লম্বাটে এবং তরঙ্গায়িত ফিগার, পতপত করে উড়ে যবার মতো কাপড়, শীতল হাইলাইট এবং অদ্ভুত ধরনের ভাসমান মেঘ।

এল গ্রেকো (১৫৪১-১৬১৪):

সর্বশেষ এবং আজ অবধি সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যানারিস্ট শিল্পী এল গ্রেকো। ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো স্পেনে ষোড়শ শতাব্দীতে ম্যানারিজমের প্রভাব পড়েছিলো। স্পেনে মরমবাদী আদর্শ নিয়ে চিত্র রচনা করেন এলগ্রেকো। তার চিত্রে আমরা প্রচন্ড আবেগ লক্ষ্য করি যা স্পেনের ধর্মীয় চেতনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন। গড়নের পনরবর্তন এবং রঙের প্রতি প্রবল আস্থা তাকে ষোড়শ শতকের ম্যানারিজমের সাথে সম্পৃক্ত করছিলো। তার চিত্রে আছে এক ধরনের গতিময়তা এবং দ্যূতি। লাল এবং সাদা রঙের সমন্বয়ে মানুষের গায়ের রং ফুটিয়ে তোলার যে কৌশল, এল-গ্রেকো তা আষ্কিার করেন।

Monday 29 March 2010

রোমান্টিসিজম

পঞ্চদশ শতাব্দীর শুরুতে ইউরোপীয় শিল্পকলায় যে নবজাগরনের সৃষ্টি হয়েছিলো তারই ধারাবাহিকতা এক ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে ম্যানারিজম, বারোক-রকোকো হয়ে অষ্টাদশ শতাব্দীতে আধুনিক শিল্প আন্দোলনের সূত্র রোমান্টিসিজমের জন্ম। এই চিত্র আন্দোলন ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং জার্মানীতে শুরু হয়।

রোমান্টিসিজমের সময়কাল আনুমানিক ১৭৫০ হতে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত। তবে মূলত: ১৮০০ হতে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত এর চরম উৎকর্ষতা পরিলক্ষিত হয়। রাজনৈকতকভাবে এ সময়টা ছিলো বৈপ্লবিক যুগ। এ পর্যায়ে সবকিছু দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছিল এবং এক্ষেত্রে নৈতিক ব্যাপারটা প্রাধান্য পাচ্ছিল।

রোমান্টিসিজম শিল্পকলার এমন এক অবস্থা যা যুক্তিবাদ হতে শিল্পকলাকে আবেগ ও অনুভূতির জগতে নিয়ে যায়। এই সময়েই শিল্পকলা দ্রুত ধাবিত হয় আধুনিক মানসিকতার দিকে। এই সময় নতুন চিন্তাধারার উদয় হয়, আর তা হলো “সৎ আবেগের কাছে অসৎ বা নষ্ট বস্তু নিঃশেষ হয়ে যায়”। প্রকৃতির প্রতি নিবিড় আকর্সন ও প্রকৃতির সান্নিধ্য লাভ করা তথা অতি প্রাকৃতিক জগতের প্রতি প্রবল আগ্রহ রোমান্টিসিজমের বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য।

রোমান্টিসিজমের অর্থ ও ব্যাখ্যার জন্য ওয়াটল্স ডুনটন - বলেন, “রোমান্টিক ভাব কল্পনার বিশেষত্ব, বিস্ময়রসের পূনর্জীবন”।

রোমান্টিসিজমের শ্লোগান ছিলো, “তোমার হৃদয়কে মস্তিস্কের হতে বেশী বিশ্বাস করো”।

জার্মান কবি গ্যাটে বলেন, “অনুভূতিই সব”। তাছাড়া কবি ওয়ার্থার বলেন, “আমরা আমাদের জীবনে একটা মাত্র বিখ্যাত আবেগের জন্য আমাদের সমস্ত অস্তিত্ব ছেড়ে দিতে রাজি আছি”। এই আবেগ বৈপ্লবিক যুগের বীরত্বপূর্ণ সংবেদনশীলতাকে দ্রুত ছাড়িয়ে যায়। এ পর্যায়ে কল্পনাকে বেশী প্রাধান্য দেো হয়েছে। বিষয়গত প্রকৃতি হতে এসময় বিষয়গত আবেগকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বেশী। অর্থাৎ কল্পনা প্রবনতার অসাধারন প্রকাশই রোমান্টিসিজমের মূল বৈশিষ্ট্য। এ ধারার শিল্পীরা প্যাথেটিক এবং ট্র্যাজেটিক বিষয়কে বেছে নিয়েছিলেন তাদের শিল্পকর্মের বিষয় হিসেবে। এমনকি তারা প্রথমবারের মতো দুঃখকে বোঝাবার জন্য নীল রং ব্যবহার করলেন।

দৃশ্যমান শিল্পে রোমান্টিক আন্দোলন ‘সাধারন মানুষ’ ‘প্রকৃতি’ ও ‘ব্যক্তি’ সম্পর্কিত বিষয় মনোভঙ্গী গড়ে তুলেছে। চিত্রকলা নিসর্গে আরোপিত হয়েছে নৈতিক মূল্যমান। প্রথম দৃষ্টিতে মনে হয় রোমান্টিক আন্দোলন ধ্রুপদী পুনরুজ্জীবন প্রত্যয়ের সম্পূর্ন বিপরীত। আসলে রোমান্টিসিজম ও ক্লাসিকিজমের মধ্যে সত্যিকার কোনো বিরোধ নেই বরং একটি অপরটির পরিপূরক এবং সত্যিকারের বিরোধ রোমান্টিসিজম ও রিয়েলিজমের মধ্যে।

রোমান্টিক কল্পনা মানবচিত্তকে আন্দোলিত উদ্বেলিত ও সচল করে, ক্লাসিক কল্পনা সংযত ও সংহত করে। রোমান্টিক দৃষ্টি অশান্ত, বিদ্রোহী, ক্লাসিক্যাল দৃষ্টি শান্ত সমাহিত সাধনার পক্ষপাতি, রোমান্টিক দৃষ্টি ভাবাবেগমুগ্ধ রং বিহবল, ক্লাসিক কল্পনাস্বচ্ছ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।

রোমান্টিসিজম এর সময় ইউরোপে বুদ্ধিবৃত্তির প্রসার ঘটে এবং শিল্পের বিষয়বস্তু হতে আলাদাভাবে অবস্থান শুরু হয়। এ সময়কার ছবিতে বিভিন্ন জীবনাচার, জীবনবোধ ও সমাজ চেতনায় চার্চের প্রভাব ও অস্পষ্ট মায়াবী ধ্যান ধারনা হতে বেরিয়ে এসে জীবনকে উপলব্ধি করা ও প্রকৃতির সাথে সম্পৃক্ততার কথা অনুধাবন ও স্থিতকরন গুরুত্ব বোঝাতে সক্ষম হয়। সে সময় শহর হতে দূরে, জানা হতে অজানায়, বাস্তব হতে কল্পনায় ছড়িয়ে যাবার এবং হারিয়ে যাবার এক পলায়ন পর মনোবৃত্তি উদয় হয়। এ সময়ের আন্দোলন অস্পষ্ট এবং সবচেয়ে জটিল, অদেখা অধরা এই জগৎই রোমান্টিসিজম নামে খ্যাত।

রোমান্টিসিজমের মূল শিল্পী হলেন দেলাক্রোয়া। তাছাড়া এ ধারার অন্যান্য শিল্পীরা হলেন ইনগ্রে, টার্নার, কনষ্টেবল প্রমূখ অন্যতম।

দেলাক্রোয়ে ( ১৭৯৮ - ১৮৬৩ ) :

দেলাক্রোয়ের কাজে রোমান্টিসিজম পূর্ণতা পেয়েছে। তিনি ছিলেন আবেগদীপ্ত, অগ্নিপ্রান শিল্পী। তিনি তার বিষয় খুঁজে বেড়িয়েছেন ইতিহাসে, শেক্সপিয়ারে, দান্তে, বাইবেলের সাহিত্যে। দেলাক্রোয়ে রোমান্টিসিজমের মূল নীতিগুলোকে নিজের মধ্যে একত্রিত করেছিলেন। তার চিত্র মনোমুগ্ধকর কবিতার মতো কবিত্বময় এবং নাটকীয়। তিনি সমসাময়িক রাজনৈতিক ঘটনাবলী অঙ্কন করেন।

দেলাক্রোয়ের চিত্রে বর্ণগুলি উজ্জ্বল, স্পন্দিত ও প্রানপূর্ন হয়ে উঠতো। দেলাক্রোয়ের চিত্রে তিনটি গুন বর্তমান আছে বর্ণ, কাব্য এবং রূপসংস্থান। তিনি সাধারনত রাষ্ট্রীয় ঘটনা অবলম্বন করে চিত্র রচনা করেছেন। তখনকার রৌদ্র বিধৌত প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলি উজ্জ্বল বর্ণ ও ব্যক্তিবর্গের পোশাক পরিচ্ছদ চিত্রে নতুনত্ব সৃষ্টি করেছিলো।

তার আঁকা উল্লেখযোগ্য একটি চিত্র হলো - লিবর্টি লিডিং দ্যা পিপল - ১৮৩০

রেনেসাঁ

AvaywbK wk‡íi e¨wßi KviY cÂ`k kZvãxi BZvjxi †i‡bmuv| cÂ`k kZvãxi Av‡M mg¯Í wKQzB DrmM©K…Z wQ‡jv Ck¦‡ii Rb¨ , gvbyl wQ‡jv wbwgË gvÎ , GgbwK wkíPP©vi jÿ¨I wQ‡jv Ck¦‡ii K…cvjvf|

†i‡bmuv K_vwUi A_© c~bR©vMib Ges G kãwU G‡m‡Q j¨vwUb fvlv n‡Z| wkíKjvi BwZnv‡m †i‡bmuv kãwU GKwU D‡jøL‡hvM¨ NUbv| G kZ‡K mvwnZ¨ , `k©b , wPÎwkí , fv¯‹h© , ivóª I mgvR †PZbvq m‡e©vcwi K¬vwmKvj we`¨v PP©vi c~bviv¤¢, ˆeÁvwbK g‡bve„wËi D‡b¥l BD‡iv‡c we‡kl K‡i BZvjx‡Z gvby‡li Kíbv †cÖibv I Kg©kw³i D‡ØvabB BwZnv‡m †i‡bmuv ev cybR©vMib bv‡g L¨vZ|

†i‡bmuv‡K e¨vcK A‡_© gvby‡li eyw× we‡e‡Ki weKvk ejv hvq| †i‡bmuv BD‡iv‡ci gvbyl‡K ga¨hyMxq MZvbyMwZKZvi me iKg eÜb n‡Z gyw³ w`‡q‡Q| gvby‡li g‡a¨ G‡b w`‡q‡Q ag© wbi‡cÿZv mgvb †PZbv I g~j¨‡eva|

†i‡bmuvi mgqKvj‡K 2wU ch©v‡q fvM Kiv hvq : 1 Avwj© †i‡bmuv

Ges 2 nvB †i‡bmuv

†d¬v‡i‡Ý cÂ`k kZ‡Ki cÖ_g w`‡K †i‡bmuvi m~Pbv n‡qwQ‡jv| †mLvb n‡Z BZvjxi Ab¨vb¨ ¯’v‡b I BD‡iv‡ci wewfbœ †`‡k Gi we¯Ívi nq|

·qv`k kZvãxi †k‡li w`‡K gvbeZvev` G‡m BZvjx‡Z AbycÖ‡ek K‡i| K¬vwmKvj wMÖK I †ivgvb mf¨Zvi cÖwZ AbyivM †i‡bmvm Av‡›`vj‡bi Ab¨Zg Kvib| mevi Dc‡i gvby‡li gh©v`v I gwngv Ges i³gvs‡mi gvby‡li Abyf’wZi cÖwZ Zv‡`i wQ‡jv myMwfi wek¦vm| Zv‡`i †Pv‡L gvbylB wQ‡jv m„wói †K›`ªwe›`y| GB mgq cÖvPxb kvmªmg~n e¨Kib I AjsKvi kv‡¯¿i cÖwZ GK`j cwÛZ Suy‡Kc‡o| G‡`i DËi m~wiivB cieZ©xKv‡j †i‡bmuvm hy‡Mi gvbeZvev`x bv‡g cwiwPZ nb|

gvbeZvev‡`i Avwef©v‡ei cÖv_wgK ch©v‡q ïaygvÎ cÖPxb Ávb wb‡q cov‡kvbv nw”Q‡jv| we‡kl K‡i MÖxK I †ivgvb Ávb PP©vi AbyKi‡bB Zv PjwQ‡jv| wKš‘ 1550 L„t Gi ci gvbeZvev` A‡bKUv D`vi n‡jv| G mgq weÁvb cvV Gi AšÍf©~³ nq|

cÎvK‡K gvbeZvev‡`i RbK ejv nq| wZwb cÖvPxb cvÛzwjwcmgyn Mfxi g‡bv‡hv‡Mi mv‡_ cvV Ki‡Zb| †i‡bmuv n‡”Q ïay K¬¨vwmK¨vj Ávb weÁv‡bi cybR©vMibB bq eis K¬¨vwmK¨vj AvZ¥vi c~bR©vMib|

ewnwe©k¦ †PZbv , gy`ªb †KŠk‡ji Avwe®‹vi , evwY‡R¨i cÖmviZv , aªycw` we`¨vi cybP©P©v Ges Zvi d‡j RvZxq AvZ¥ cÖZ¨‡qi D‡Øvab mewKQzB mg‡eZ Aby‡cÖibv‡ZB BD‡ivcxq ms¯‹…wZi GB beRvMib|

ivdv‡qj

nvB †i‡bmuv hy‡Mi GKRb mv_©K wkíx ivdv‡qj| gvZ…g~wZ© wP·b wZwb wQ‡jb we‡kl `ÿ| Zvi cÖ_g wPÎwe`¨vi Abykxjb P‡j wcZvi nv‡Z c‡i wkÿv¸iæ †ciæ Rx‡bvi Kv‡Q| ivdv‡q‡ji wP‡Îi ˆewkó n‡jv wbf©~j K‡¤úvwRkb|

wkíx ivdv‡qj ‡d¬v‡i‡Ý _vKvKvjxb (1505-1508) ch©šÍ wjIbv‡`©v `v wfw I gvB‡Kj G‡Ä‡jvi wkíKg©¸‡jv Abyaveb K‡ib| ZLb n‡Z Zvi wPΉkjx Av‡iv ewjô n‡q I‡V| ivdv‡q‡ji Qwe‡Z Avgiv cvB c~b© mvg¨ I m½wZ hv‡K Bs‡iRx‡Z e‡j nv‡g©vwb| GB mvg¨ I m½wZ ïay Zvi iwPZ AvK…wZ I web¨v‡m bq gvbwmKZv n‡ZI cwiùzU| Zvi Qwe‡Z ag©xq fve I ag© wbi‡cÿ wPšÍvavivi h_v_© mgš^q n‡q‡Q|

ivdv‡q‡ji Aw¼Z AvK…wZ¸wj Av`k©ev‡`i Ic‡i cÖwZwôZ Ges Zv‡Z Av‡Q gh©v`v I gn‡Ë¡i cÖKvk| wZwb wjIbv‡`©v Ges gvB‡Kj G‡Ä‡jvi m„wó‡K Abyaveb K‡i Zv‡`i wgwj‡q m„wó K‡i‡Qb Avcb ˆkjx| wkíx ivdv‡qj †d¬v‡i‡Ý gvZ…g~wZ© ev g¨v‡Wvbv Aej¤^‡b A‡bK¸wj wPÎ iPbv K‡i‡Qb| †iv‡g †cv‡ci Rb¨ wZwb f¨vwUKv‡bi KZ¸wj Kÿ wPwÎZ K‡ib| f¨vwUKv‡b Aw¼Z wPθwji g‡a¨ `¨v ¯‹zj Ad G‡_Ý Ab¨Zg|

`¨v ¯‹zj Ad G‡_Ý (1510-11, †d«‡¯‹v, f¨vwUK¨vb c¨‡jm, †ivg) :

Ô`¨v ¯‹zj Ad G‡_ÝÕ bvgK RgKv‡jv †d¨‡¯‹vwU †i‡bmuv hy‡Mi weL¨vZ wkíKg©| QwewU f¨vwUK¨vb c¨‡j‡mi wekvj GKwU Av‡P©i bxP n‡Z ïiæ n‡q‡Q| GLv‡b †`Lv hv‡”Q wkíx , `vk©wbK I Zv‡`i Qv·`i GK wekvj wgjb‡gjv| Kj‡Kvjvn‡j RvqMvwU †hb gyLi n‡q Av‡Q| QwewU‡Z weL¨vZ K‡qKRb e¨w³Z¡ i‡q‡Qb| G‡Kev†i gvSLv‡bi AvP©wUi bx‡P †`Lv hv‡”Q †cø‡Uv Avi GwióUj ¯^M© I c„w_ex wb‡q Av‡jvPbv Ki‡Qb| wmuwo‡Z Avjy_vjy f½x‡Z e‡m Av‡Qb m‡µwUm| Qwei evgw`‡K ivdv‡qj wb‡R‡K wPwÎZ K‡i‡Qb †ciæRx‡bvi mv‡_| †cvkv‡Ki fvR Ges Awfe¨w³‡Z mevB GLv‡b ¯^Zš¿| GB Qwe‡Z ivdv‡qj †`wL‡q‡Qb b‡bvgy»Zvi mgš^q, GKwU we¯Í…Z web¨vm i‡Oi D¾¡j Zviæ‡b¨ Av‡jvQvqvi ewjô c`Pvibv| f¨vwUK¨vb cÖvmv‡`i †`qv‡j AuvKv `xc¨gvb I RgKv‡jv gby‡g›Uvj ¯’vc‡Z¨i g‡a¨ †Lvjvnjc~b© GB wPÎwU 16k kZvãxi GKwU `ytmva¨ I mvnmx cwiKíbv|

gvB‡Kj G‡Ä‡jv

nvB †i‡bmuv hy‡Mi gnvb wkíx gvB‡Kj G‡Ä‡jv ebviGivwZ| Rb¥m~‡Î †d¬v‡iÝevmx gvB‡Kj G‡Ä‡jv GKvav‡i wQ‡jb fv¯‹i , wPÎwkíx , ¯’cwZ I Kwe| Ebbe¦B eQ‡ii `xN©Rxeb gvB‡Kj G‡Ä‡jv †i‡bmuv‡mi Avw` , ga¨ I AwšÍgc‡e©i ¯úk© jvf K‡iwQ‡jb Ges wZbwU c‡e©iB µg weeZ©b jÿ¨ Kiv hvq| †i‡bmuvm wkíx‡`i Rxebe„ËvšÍ iPwqZv mgmvgwqK wPÎKi I ¯’cwZ RR© fvgwi gvB‡Kj G‡Ä‡jv‡K Aci me wkíxi Ici ¯’vb w`‡q‡Qb Ges Zv‡K AvL¨vwqZ K‡i‡Qb wWfvB‡bv gvB‡Kj G‡Ä‡jv ev ¯^M© †cÖwiZ gvB‡Kj G‡Ä‡jv iƒ‡c| Zvi RxerKv‡j gvB‡Kj G‡Ä‡jvi Avmb †h KZ DuPz‡Z wQ‡jv mgmvgwqKKv‡ji RxebxKv‡ii G gšÍ‡e¨ Zv mn‡RB Dcjwä Kiv hvq|

gvB‡Kj G‡Ä‡jv wb‡R‡K cÖ_gZ Ges cÖavbZt GKRb fv¯‹i e‡j fve‡Z cQ›` Ki‡Zb †Kbbv wZwb wek¦vm Ki‡Zb GKRb fv¯‹‡ii i‡q‡Q Ògvbyl m„wó Kivi cweÎ ÿgZv|Ó 1493 mv‡j gvB‡Kj G‡Ä‡jv †iv‡g Av‡mb Ges `y‡Uv eo KvR K‡i L¨vwZ AR©b K‡ib| G¸‡jvi g‡a¨ GKwU n‡jv wc‡qZv ev g„Z wkïi Rb¨ wejvc| gvB‡Kj G‡T|R‡jv Zvi wc‡qZvq gvZv †gix‡K Ziæbx I my›`ix wn‡m‡e iƒcvwqZ K‡i‡Qb Ges †gix I wkgyi Awfe¨w³‡Z hvZbvi wPý gy‡Q w`‡q‡Qb| Nubvi †e`bvgqZv‡K iƒcvwqZ K‡i‡Qb †gixi ggZvgq fw½gvi wecix‡Z L„‡ói wb¯ú›` kix‡ii Gjv‡bv fw½gvq| GLv‡b mKiæb `„‡k¨i welv` I gylgv‡K GKB m‡½ avib Kiv n‡q‡Q|

1501 mv‡j 4 eQi a‡i wekvj gg©i cv_i †Lv`vB K‡i gvB‡Kj G‡Ä‡jv m„wó K‡ib Ô†WwfWÕ| ïay gvB‡Kj G‡Ä‡jvi Rxe‡b bq wkíKjvi BwZnv‡m GB m„wó AZzjbxq| gvB‡Kj G‡Ä‡jvi †WwfW Kvjµ‡g †d¬v‡i‡Ýi wk‡íi cÖZx‡KB cwibZ n‡q‡Q|

GwU 18 dzU DuPy Ges wK‡kvi ex‡ii cÖwZgywZ© hv bZzb cÖRvZ‡š¿i AvZ¥‡Mšie I AvZ¥wek¦v‡mi cÖwZwe¤^| gvbe kix‡i mylgvgwÛZ I †Z‡Rv`xß iƒc ˆgwíK fvlvq GLv‡b cÖKvwkZ n‡q‡Q| cyiæl kix‡ii †ckx¯úw›`Z †mŠ›`‡h©i †h cÖKvk GLv‡b N‡U‡Q Zv BwZc~‡e© ‡`Lv hvqwb|

1508 mv‡j gvB‡Kj G‡Ä‡jv †iv‡g wd‡i Avmvi ci †cvc Zv‡K f¨vwUK¨vb cÖvmv‡`i wmmwUb MxR©vq m¤ú~Y© Qv` wPÎv”Qvw`Z Kievi Av‡`k Ki‡jb| cÖ_g w`‡K gvB‡Kj G‡Ä‡jv Qwe AuvK‡Z ivwR bv n‡jI cieZ©x‡Z ivRx n‡jb Ges wKQzw`‡bi g‡a¨ nZvkv †ÿvf `~ixf’Z n‡q Zvi g‡a¨ †hb mÂvwiZ n‡jv GK Hk¦wiK †cÖibv| wmmwUb P¨v‡c‡ji Dc‡ii Puv‡`vqvi ˆ`N©¨ cÖvq 118 dzU , cÖ¯’ 46 dzU Ges D”PZv 68 dzU| fë Ges Aëvi †`qvjmn wPÎv”Qvw`Z Kiv ( cÖvq 6 nvRvi eM©dyU †Kv‡bv GKK gvby‡li c‡ÿ Kiv Agva¨ )| wKš‘ wZwb Amva¨ mvab K‡i‡Qb| gvB‡Kj G‡Ä‡jv cy‡iv Puv‡`vqv‡K K‡qKwU cÖavb fv‡M wef³ K‡i 9wU fv‡M fvM K‡i wb‡jb -

1. Ck¦i Av‡jvK I AÜKvi m„wó K‡i‡Qb|

2. Ck¦i †R¨vwZg©Ûj m„wó K‡i‡Qb|

3. Ck¦i awiÎx‡K Avkxe©v` K‡i‡Qb|

4. Ck¦i cÖ_g gvbe m„wó K‡i‡Qb|

5. C‡fi m„wó|

6. Cf KZ©„K Av`g‡K cÖjyä Kiv|

7. †bvqvi Z¨vM|

8. gnvcøveb|

9. ‡bvqvi cÖgËe|

Gqvov `yB cv‡k †QvÆ cwim‡i †cÖwiZ cyiæl I AmsL¨ Aáiv-†`e`~Z gywZ© Gu‡K‡Qb| †gvU 343wU gvbe gvbex, Aáiv, †`e`~Z mn GK mywekvj cwiKíbv 1508-1512 mvj ch©šÍ `xN© 4 eQ‡i wZwb G KvR mgvß K‡ib| 1512 mv‡ji 31†k A‡±vei wmmwUb P¨v‡cj `k©K‡`i Rb¨ Db¥y³ K‡i †`qv nq|

gvB‡Kj G‡Ä‡jvi Av‡iv D‡jøL‡hvM¨ fv¯‹‡h©i g‡a¨ i‡q‡Q Dcweó g‡mm, WvBBs †møf I evDÛ †møf|

1536 mv‡j †iv‡g emevmKv‡j gvB‡Kj G‡Ä‡jv wmmwUb P¨v‡c‡ji †`qv‡j jvmvU RvR‡g›U ev †kl wePvi `„k¨ Auv‡Kb| jv÷ RvR‡g‡›Ui wPÎixwZi mv‡_ wÎk eQi Av‡M AuvKv wPθ‡jvi †Kv‡bv wgj †bB| Qv‡`i QweMywj‡Z cÖkvwšÍ, †mŠKg© I gvayq©gwÛZ kw³i cÖKvk N‡U‡Q wKš‘ jv÷ RvR‡g›U wPÎgvjvq Db¥Ë ee©iZv AvmywiK cÖgËZv I mvwe©K aŸs‡mi GK wPÎ Aw¼Z n‡q‡Q| †kl wePv‡ii w`b cÖfz whï Avwef©~Z n‡q‡Qb wVKB , wKš‘ †cÖg I `qvi cÖwZgywZ…iƒ‡c bq| wekvj `vbevK…wZi L„ó GLv‡b Wvb nvZ D‡ËvwjZ K‡i †hb aŸsmcivqb gvbeRvwZ‡K Awfkvc w`‡”Qb , cÖej †iv‡l ¯^M© , gZ©¨ mewKQz aŸsm Ki‡Z Pv‡”Qb| †mB mgq mgMÖ BZvjx Ry‡o †h nvbvnvwb ag©xq wefvRb I hy×weMÖnRwbZ nZvkv weivR KiwQ‡jv ZviB cÖwZ Bw½Z †hb GB DËvj wPÎ|

GvB‡Kj G‡Ä‡jvi wkíPP©vi m~Pbv †i‡bmuv‡mi Avw` c‡e© , L¨vwZi kx‡l© †cŠu‡Q‡Qb †i‡bmuv‡mi ¯^Y©hy‡M , Avevi AwšÍg †i‡bmuvm wk‡íi †gvo cwieZ©‡bI wZwb cvjb K‡i‡Qb c~e©Mvgxi f~wgKv| GK A‡_© †i‡bmuv‡mi MwZcÖev‡ni m‡e©vrK…ó D`vnib wZwb|

Wednesday 17 March 2010

শ্রীলঙ্কান শিল্পকলাঃ

শ্রীলঙ্কার শিল্পকলার ইতিহাস অতি প্রাচীন তবে, এর প্রাচীনতম নিদর্শন তেমন একটা টিকে নেই৷ ইতিহাসের আলোকে জানা যায় যে, ভারতের মৌর্য সম্রাট অশোকের সময়ে তাঁর পুত্র মহিন্দ বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে শ্রীলঙ্কায় যান৷ সে সময়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিবরণে শ্রীলঙ্কাকে তাম্বাপানি নামে অভিহিত করা হয়েছে৷ আলেকজান্ডারের পূর্ব অভিযানের সময় অর্থাত্‍ ৩২৬-৩২৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে অনেসিক্রিটাস অব অ্যাসটিপ্যালাসিয়া তার রচনায় শ্রীলঙ্কার নাম তপ্রবন উলেস্নখ করেছেন৷ এয়াড়া গ্রীক ভূগোলবিদ আলেকজান্দ্রিয়ার টলেমি বা ক্লডেস টলোমিয়াস এর লেখা হতে প্রাচীন শ্রীলঙ্কার ভৌগলিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস জানা যায়৷
প্রাচীন ভারতীয়রা শ্রীলঙ্কাকে বলতো শিয়েলাদিবা, যা তামিলনাড়তে প্রাপ্ত সম্রাট অশোকের সময়ে লিখিত পুঁথিতে পাওয়া যায়৷ পালি ভাষায় শ্রীলঙ্কাকে শিহালদিপা বলা হয়েছে৷ আবার খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতকে সম্রাট সমুদ্র গুপ্তের সময়ের লেখায় শ্রীলঙ্কার নাম উলেস্নখ করা হয়েছে সিনহালাকা, যার অর্থ সিনহলদের দেশ৷

প্রাচীন কাল হতেই এশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার ব্যবসায়িক যোগাযোগ বিদ্যমান ছিলো৷ এশিয়া হতে ইউরোপ পর্যনত্ম বিসত্মৃত 'সিল্ক-রম্নট' - এর দুটি পথের মধ্যে একটি পথ শ্রীলঙ্কার উপর দিয়ে যাবার ফলে শ্রীলঙ্কার সাথে চীন হতে রোম তথা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান ছিলো৷ এর প্রমাণ পাওয়া যায় চীনা পর্যটক শ্যাং হো - এর লেখায়, যেখানে তিনি চীন ও শ্রীলঙ্কার মধ্যাকার যোগাযোগের কথা উলেস্নখ করেছেন৷

ভারতে খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দির লেখায় শ্রীলঙ্কার শিল্পকলার উলেস্নখ পাওয়া যায়৷ ষ্ষ্ঠ শতািব্দর লেখা মহাবামশা - য় শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন প্রত্নতাতি্বক স্থানে দেয়াল চিত্রণের উলেস্নখ করা হয়েছে৷ যার মধ্যে প্রাচীন নগরী অনুরাধাপুরা - র ভিৰু নিবাস 'লোহা পাসাদা' - র নাম বিশেষ ভাবে উলেস্নখযোগ্য৷ এ সময়ের শ্রীলঙ্কার শিল্পকলায় ভারতীয় প্রভাব পরিলৰিত হয়৷ খ্রিষ্টিয় ১১শ - ১৩শ অব্দে অনুরাধাপুরায় ও পলোন্নারম্নয়া নামক রাজ্যে ব্রোঞ্জের হিন্দু দেব-দেবীর ভাস্কর্য তৈরী হতে দেখা যায়৷

আধুনিক কালের পূর্বে অনুরাধাপুরা, পলোন্নারম্নয়া, দাম্বাদেনিয়া, যাপাহুয়া, কোটে, গামপোলা, কান্দি প্রভৃতি স্থানে শ্রীলঙ্কার বিকাশ ঘটতে দেখা যায়৷

ডবভিন্ন শিল্প ঐতিহাসিক শ্রীলঙ্কার শিল্পকলাকে প৭াচটি ভাগে ভাগ করেছেন৷ যদিও কোনো কোনো শিল্প ঐতিহাসিকের কাছে এই বিভাজন পুরোপুরি গ্রহনযোগ্য নয়৷ তবে বেশীর ভাগ শিল্প ঐতিহাসিকের মতেই শ্রীলঙ্কার শিল্পকলাকে প্রধানত ৫টি ভাগে ভাগ করা যায় -

১. প্রাথমিক ঐতিহাসিক যুগ ২৫০ খৃষ্ট পূর্বাব্দ - ৫০০ খৃষ্টাব্দ

২. মধ্য ঐতিহাসিক যুগ ৫০০ খৃষ্ট পূর্বাব্দ - ১২৫০ খৃষ্টাব্দ

৩. শেষ ঐতিহাসিক যুগ - (১) ১২৫০ খৃষ্ট পূর্বাব্দ - ১৬০০ খৃষ্টাব্দ

৪. শেষ ঐতিহাসিক যুগ - (২) ১৬০০ খৃষ্ট পূর্বাব্দ - ১৮০০ খৃষ্টাব্দ

৫. আধুনিক ঐতিহাসিক যুগ ১৮০০ খৃষ্ট পূর্বাব্দ - ১৯০০ খৃষ্টাব্দ৷

প্রাথমিক ও মধ্য ঐতিহাসিক যুগের শিল্পকলা ঃ

যদিও প্রাথমিক ও ঐতিহাসিক যুগের চিত্রকলা বা ভাস্কর্যের কোনো চিহ্নই বর্তমানে টিকে নেই, তবে বিভিন্ন স্তুপের বেদী বা গাত্রের রিলিফ ভাস্কর্য হতে সে যুগের চিত্র বা ভাস্কর্যের মান অনুধাবন করা যায়, যার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিলো পরবর্তী শ্যীলঙ্কার শিল্পধারা, যার ধারাবাহিকতা পরিলৰিত হয় মধ্য ঐতিহাসিক যুগের শিল্পকলায়৷

চিত্রকলা ঃ

চিত্রকলার প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া যায় রাজা কশ্যপের রাজ্য সিগিরিয়াতে, যা খৃষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে অঙ্কিত৷ এর পরের প্রাচীনতম শ্রীলঙ্কার চিত্রকলার নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হয় পলোন্নারম্নয়ার 'ত্রিভস্ক ইমেজ হাউস' - এর মু্যরাল চিত্রাবলী৷ যদিও এই দুই চিত্রাবলী প্রায় ৬০০ বছরের ব্যবধানে অঙ্কিত, তথাপি উভয় মু্যরালেই প্রাথমিক ঐতিহাসিক অনুরাধাপুরা যুগের রীতির ধারাবাহিকতা পরিলৰিত হয়৷

অনুরাধাপুরা যুগের মু্যরাল সমূহের মধ্যে সবচেয়ে অনুপম বা মানের দিক হতে সর্বশ্রেষ্ঠ সিগিরিয়ার মু্যরাল সমূহ৷ যদিও অনুরাধাপুরা যুগের চিত্রমালার বিসত্মৃতি ব্যপক এবং বিভিন্ন স্থানে এর কিছুটা স্বতন্ত্র রীতি পরিলৰিত হলেও সিগিরিয়ার চিত্রশিল্প এর রেখার গুণাবলী ও তার প্রয়োগের কারণে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হয়৷

সিগিরিয়া মু্যরালের রেখা চিত্রে স্কেচি ও দ্রম্নত ভাব নিয়ে এসেছে৷ যার ফলে ফিগার বা অন্যান্য আকৃতিতে ঢৌল ভাব বা স্ফিতির অনুভূতি প্রখর রূপ লাভ করে৷ অন্যভাবে বললে বলা যায়, সিগিরিয়া মু্যরালের প্রধান বৈশিষ্ঠ্য অসংখ্য স্কেচি রেখার মাধ্যমে ভলু্যম সৃষ্টির অনন্য গুণ, যা তাদের চিত্রে আকৃতিকে নির্দিষ্ট করতে বিশেষভাবে উপযোগিতার প্রমাণ রেখেছে৷

প্রাথমিক ও মধ্য ঐতিহাসিক যুগের চিত্রের প্রায় সম্পূর্ণ অংশই স্ট্রোকের মাধ্যমে রং দ্বারা পূর্ণ করা হতো৷ চ্যাপ্টা তুলির একদিকে অধিক চাপ প্রয়োগ করে রং দেবার ফলে এতে এতে এক অংশে গাঢ় ও অপরাংশে হালকা রঙের টোনের কারণে একটি আলোছায়ার অনুভূতি সৃষ্টি করে৷ একই পদ্ধতির বহিঃরেখা আঁকবার ফলে চিত্রে ফিগার বা বস্তুর আকৃতি ও তার আলোছায়া দেখাবার বিষয়টিও সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে৷

এই ধারা অবশ্য অনুরাধাপুরা যুগের সকল স্থানের চিত্ররীতিতেই পরিলৰিত হয়৷ যার উদাহরণ দেখা যায় 'মহিয়াঙ্গন দেহাবশেষ-কৰের মু্যরাল' এ বা 'পুলিস্নগোদা গালগি' মু্যরালে৷ তবে এ সকল স্থানের মু্যরাল হতে সিগিরিয়া মু্যরাল সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী এর রেখার মান ও তার প্রয়োগ রীতির কারণে৷ অনুরাধাপুরা যুগের চিত্রণরীতিতে পলোন্নারম্নয়াসহ সকল স্থানেই শিল্পী রেখা ব্যবহার করেছেন নিশ্চিত ও শেষ রেখা হিসেবে৷ কিন্তু সিগিরিয়ার শিল্পীদের স্কেচি ও অনুসন্ধানী রেখা অনুরাধাপুরা যুগের মু্যরালের ৰেত্রে এক অনুপম সৃষ্টি৷

শেষ ঐতিহাসিক যুগ :

এ যুগে শ্রীলঙ্কার শিল্পের রীতিতে এক ব্যপক পরিবর্তন সাধিত হয়৷ যার সর্বোত্‍কৃষ্ট প্রয়োগ পরিলৰিত হয় অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকের শ্রীলঙ্কার শিল্পকলায়৷ পূর্ববর্তী যুগের ধ্রম্নপদী প্রকৃতিবাদিতা এ সময়ে ধীরে ধীরে প্রতিস্থাপিত হয়ে এক উচ্চ মানের শৈলীগত ধারার সৃষ্টি হয় - যা ছিলো শ্যীলঙ্কার ধ্রম্নপদী শিল্প ঘরাণার অনুরূপ মানের প্রকাশবাদী ও স্পন্দনশীল বা গতিময়তা সম্পন্ন৷

১৩০০ খৃষ্টাব্দে পলোন্নারম্নয়া রাজ্যের পতনের পর প্রায় ৪০ বছর ব্যপী এ অঞ্চলের এক ব্যপক রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করে৷ ফলে শ্রীলঙ্কার রাজধানী এ সময়ে যথাক্রমে দাম্বাদেনিয়া , যাপাহুয়া , কোটে , সীতাওয়াকে এবং গাম্পোলা এই পাঁচটি স্থানে স্থাপন ও প্রতিসরণ করা হয়৷ শেষ পর্যনত্ম ১৭০০ খৃষ্টাব্দে কান্দিতে রাজধানী স্থাপনের মাধ্যমে এর পরিসমাপ্তি ঘটে৷ কোনো কোনো শিল্প ঐতিহাসিকের মতে শ্রীলঙ্কার শিল্পকলার স্বর্ণযুগ হিসেবে এই সময়টি পরিগণিত হতে পারে কারণ এর পরবর্তী যুগের শিল্পকলা অপেৰাকৃত নিম্নমানের বলে তারা মনে করেন৷

প্রাথমিক বিংশ শতাব্দির বৌদ্ধ চিত্রকলা :

বিংশ শতাব্দিতে শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ চিত্রকলায় বিভিন্ন ধরনের রীতি পরিলৰিত হয় বিভিন্ন মন্দিরে৷ এর মূলে রয়েছে দীর্ঘ কয়েক শতক ব্যপী এদেশে বিভিন্ন ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনের ফলে সে সকল দেশের শিল্প রীতির অনুপ্রবেশ , তা ছাড়া এদেশের শিল্পীদের নিজস্ব জাতীয়তাবোধ ও শিল্প ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রহ ও তার অনুসন্ধানের শিল্পে প্রয়োগের প্রচেষ্টা৷ যার ফলে ম্রীলঙ্কার চিত্রকলায় বিংশ শতাব্দির প্রথম চার দশকে এক নতুন চিত্র ধারার উন্মেষ ঘটে৷ যার উদাহরণ দেখা যায় গোতামি বিহারের জর্জ কেইট মু্যরাল - এ , কিলানীয়া রাজা মহা বিহারায় - এর সোলিয়াস মেনডিস মু্যরাল - এ এবং এম. সারলিস - এর অসংখ্য মু্যরালে৷

গোতামি বিহারের মু্যরালে ১৯৩০ - এর দশকের শ্রীলঙ্কার শ্রেষ্ঠ আধুনিক শিল্পীগণ কিউবিজম , অনুরাধাপুরা যুগের চিত্ররীতির রৈখিক সৌন্দর্য এবং ভারতীয় ভাস্কর্যের ইন্দ্রিয়জ অভিব্যক্তির সমন্বয়ে এক অনবদ্য শৈল্পীক ভাষার সফল প্রকাশ ঘটান৷

কিলানীয়া রাজা মহা বিহারায় - এর মু্যরালে ১৯৩০ - এর দশকের শেষাংশে এবং ৪০ এর দশকের প্রথমাংশে বিখ্যাত সোলিয়াস মেনডিস অনুরাধাপুরা যুগের ধ্রম্নপদী সিন্হলী রীতির পুনরম্নত্থানে ব্রতী হলেও শেষ পর্যনত্ম এটি অনুরাধাপুরা যুগের রীতি , বিভিন্ন ভারতীয় রীতি এবং ইউরোপীয় রীতির সংমিশ্রণ সম্বলিত চিত্রের জন্ম দেয়৷ অবশ্য এতে অনুরাধাপুরা যুগের ধ্রম্নপদী প্রকৃতিবাদীতার সুস্পষ্ট উপস্থিতি পরিলৰিত হয়৷

বৌদ্ধ ধর্মকে কেন্দ্র করে এম. সারলিস - এর মু্যরাল এবং লিথোগ্রাফিক প্রিন্ট শ্রীলঙ্কায় প্রথম এমন একটি শিল্পধারা যেখানে শিল্প ধনীক বা বুর্জোয়া শ্রেণীর জন্য নয় , বরং তা সাধারণ মানুষের জন্য এমন রীতিতে উপস্থাপিত৷ আবার একই সঙ্গে তাঁর শিল্পরীতিতে অনুরাধাপুরা বা কান্দি রীতির ও নয় , বরং এটি পাশ্চাত্যের প্রকৃতিবাদীতা এবং সেই সঙ্গে শ্রীলঙ্কার লোকজ রীতির সমন্বয়ে একটি সার্থক , আকর্ষনীয় এবং সৌন্দর্য মন্ডিত নতুন ধারা , যা শ্রীলঙ্কায় বিংশ শতাব্দির অন্যতম জনপ্রিয় পরিণত হতে সৰম হয়৷

শ্রীলঙ্কার স্থাপত্যকলা :

শ্রীলঙ্কার অন্যান্য শাখার মতোই এর স্থাপত্যকলাও ধর্মীয় বিষয়াদির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে৷ যার মধ্যে স্থাপত্যকলাকে অনন্যতা দানে বৌদ্ধ ধর্মের রয়েছে বিশিষ্ট ভূমিকা৷ এর পাশাপাশি তামিল হিন্দুরাও বিভিন্ন মন্দির ও পবিত্রস্থান নির্মাণের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার স্থাপত্যকলায় যথেষ্ট অবদান রেখেছে৷ এয়াড়া শ্রীলঙ্কার স্থাপত্যকলায় এখানে উপনিবেশ সৃষ্টিকারী পর্তুগীজ , ডাচ ও ইংরেজদের যথেষ্ট প্রভাব পরিলৰিত হয়৷ ফলে বৌদ্ধ , হিন্দু ও ইউরোপীয় বিভিন্ন শিল্পধারার সমন্বয়ে শ্রীলঙ্কার স্থাপত্য সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিলো৷

বৌদ্ধ স্থাপত্যকলা :

শ্রীলঙ্কা নামক দ্বীপ রাষ্ট্রের প্রায় সর্বত্রই বৌদ্ধ ধর্মের প্রাধান্য পরিলৰিত হয়৷ শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ স্থাপত্যকলার অন্যতম নিদর্শন দাগোবা - যা ভারতে স্তুপ নামে পরিচিত৷ গম্বুজাকৃতির ইটের তৈরী এবং পস্নাস্টারে আচ্ছাদিত দাগোবাগুলি সাধারণত: সাদা রঙের হয়ে থাকে৷ এগুলি মূলত: বুদ্ধের দেহাবশেষ যেমন চুল বা দাঁত প্রভৃতি সংরৰণের কারণে পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে৷ ভারতের মৌর্য সম্রাট অশোকের সময়ে তাঁর পুত্রের শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারের নিমিত্তে আগমনের কাল হতেই এখানে স্তুপ বা দাগোবা নির্মাণ শুরম্ন হয়৷ বর্তমানে সমগ্র দ্বীপ জুড়ে এর ছয়টি আকৃতিগত রীতি পরিলৰিত হয়৷ এগুলি - বাবল শেপ, বেল শেপ, পট শেপ, দি হিপ অফ পেডি শেপ, আমালাকা শেপ এবং দেহাবশেষ রাখবার কৰের সঙ্গে গোল কাঠের ছাদ বিশিষ্ট দাগোবা ু যা চার কোণায় চারটি বুদ্ধ ইমেজ স্থাপিত থাকে ( অবশ্য দীর্ঘকাল পূর্বেই এর কাঠের অংশগুলি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে )৷

হিন্দু স্থাপত্য :

শ্রীলঙ্কার স্থাপত্যে হিন্দু ধর্মের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে৷ কোবিল নামে পরিচিত হিন্দু স্থাপত্যকর্মের মধ্যে শিবের মন্দিরই অন্যতম৷ তবে সকল কোবিলই প্রধানত: প্রার্থনা কৰ এবং পবিত্র কৰ বিশিষ্ট হয়ে থাকে৷ হিন্দু মন্দিরের প্রধান স্থাপতিক বৈশিষ্ট্য এর উজ্জ্বল রঙের রিলিফ ভাস্কর্য সম্বলিত শিখর - যা কখনো গম্বুজাকৃতির আবার ককনো বা পিরামিড আকৃতির হতে দেখা যায়৷ এয়াড়া কোবিলের বাইরে একটি খোলা চত্বর থাকে , যেখানে প্রার্থনাকারীরা বামাবর্তে মন্দিরটি প্রদৰিণ করেন৷

ইউরোপীয় স্থাপত্য :

শ্রীলঙ্কার স্থাপত্যে ইউরোপীয় প্রভাব যথেষ্ট পরিমানে পরিলৰিত হয়৷ টালির ছাদ বিশিষ্ট ও বারান্দাযুক্ত পর্তুগীজ গীর্জাগুলি একই সঙ্গে দূর্গ হিসেবেও ব্যবহৃত হতো৷ ডাচদের শাসনামলে পর্তুগীজ গীর্জাগুলি ডাচ রীতিতে পরিবর্তীত করা হয়৷ যার অন্যতম উদাহরণ গালেস্ন - র ঐতিহাসিক দূর্গ৷ ব্রিটিশ শাসনামলে তারা আবার তাদের নিজস্ব রীতিতে ধর্ম নিরপেৰ রূপদানের মাধ্যমে ডাচ গীর্জাগুলির পরিবর্তন সাধন করে৷ শ্রীলঙ্কার ব্রিটিশ স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন নুয়ারা এলিয়া - র পাহাড়ি কেন্দ্র৷

চিত্র ও ভাস্কর্য :

শ্রীলঙ্কার ভাস্কর্যে বুদ্ধ মূর্তি অগ্রগণ্য৷ প্রথম দিকে সাধারণত: চুনাপাথরের পাহাড় কেটে সরাসরি পাহাড়ের গায়ে বুদ্ধ মূর্তি তৈরী করা হতো৷ যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ পলোন্নারম্নয়ার নিকটবর্তী গাল বিহার - এর ৪৬ ফুট দীর্ঘ পাথরের শায়িত বুদ্ধ মূর্তি৷ সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে অন্যান্য উপাদান যেমন জেইড, পাথর, ক্রিস্টাল, মার্বেল, এমারেল্ড, হাতির দাঁত, প্রবাল, কাঠ ও ধাতব মূর্তি নির্মাণ শুরম্ন হয়৷ বুদ্ধকে এখানে তিনটি অবস্থায় - দন্ডায়মান, আলংকারিক বুদ্ধ মূর্তি শ্রীলঙ্কার ভাস্কর্য শৈলীর অতু্যত্‍কৃষ্ট মানও প্রতীকরূপে স্বকীয় স্থান লাভ করেছিলো, যা আজও অৰুন্ন রয়েছে৷

ভাস্কর্যের মতোই শ্রীলঙ্কার চিত্রকলায় ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবই সর্বাপেৰা বেশী৷ এ সকল চিত্রে বৌদ্ধ প্রতিচ্ছবি ও তাঁর বিভিন্ন জাতক কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে৷ বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহার এবং পবিত্রস্থান সমূহে এগুলি অঙ্কিত হয়ে থাকে৷ এ ৰেত্রে দুটি মূল ধারা পরিলৰিত হয় - একটি প্রাথমিক রীতি এবং অপরটি কান্দি রীতি৷ প্রাথকি রীতি ব্যপক, জটিল ও অভিব্যক্তিপূর্ণ অপরপৰে
কান্দি রীতি সরল এবং সেই সাথে অভিব্যক্তিপূর্ণ৷

Tuesday 9 March 2010

মাইকেল এঞ্জেলো

হাই রেনেসাঁ যুগের মহান শিল্পী মাইকেল এঞ্জেলো বনারএরাতি৷ জন্মসূত্রে ফ্লোরেন্সবাসী মাইকেল এঞ্জেলো একাধারে ছিলেন ভাস্কর , চিত্রশিল্পী , স্থপতি ও কবি৷ ঊননব্বই বছরের দীর্ঘজীবন মাইকেল এঞ্জেলো রেনেসাঁসের আদি , মধ্য ও অনত্মিমপর্বের স্পর্শ লাভ করেছিলেন এবং তিনটি পর্বেরই ক্রম বিবর্তন লৰ্য করা যায়৷ রেনেসাঁস শিল্পীদের জীবনবৃত্তানত্ম রচয়িতা সমসাময়িক চিত্রকর ও স্থপতি জর্জ ভামরি মাইকেল এঞ্জেলোকে অপর সব শিল্পীর ওপর স্থান দিয়েছেন এবং তাকে আখ্যায়িত করেছেন ডিভাইনো মাইকেল এঞ্জেলো বা স্বর্গ প্রেরিত মাইকেল এঞ্জেলো রূপে৷ তার জীবত্‍কালে মাইকেল এঞ্জেলোর আসন যে কত উঁচুতে ছিলো সমসাময়িককালের জীবনীকারের এ মনত্মব্যে তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়৷
মাইকেল এঞ্জেলো নিজেকে প্রথমত এবং প্রধানতঃ একজন ভাস্কর বলে ভাবতে পছন্দ করতেন কেননা তিনি বিশ্বাস করতেন একজন ভাস্করের রয়েছে "মানুষ সৃষ্টি করার পবিত্র ৰমতা৷" ১৪৯৩ সালে মাইকেল এঞ্জেলো রোমে আসেন এবং দুটো বড় কাজ করে খ্যাতি অর্জন করেন৷ এগুলোর মধ্যে একটি হলো পিয়েতা বা মৃত শিশুর জন্য বিলাপ৷ মাইকেল এঞে৷জলো তার পিয়েতায় মাতা মেরীকে তরম্ননী ও সুন্দরী হিসেবে রূপায়িত করেছেন এবং মেরী ও শিমুর অভিব্যক্তিতে যাতনার চিহ্ন মুছে দিয়েছেন৷ ঘঁনার বেদনাময়তাকে রূপায়িত করেছেন মেরীর মমতাময় ভঙ্গিমার বিপরীতে খৃষ্টের নিস্পন্দ শরীরের এলানো ভঙ্গিমায়৷ এখানে সকরম্নন দৃশ্যের বিষাদ ও মুষমাকে একই সঙ্গে ধারন করা হয়েছে৷
১৫০১ সালে ৪ বছর ধরে বিশাল মর্মর পাথর খোদাই করে মাইকেল এঞ্জেলো সৃষ্টি করেন 'ডেভিড'৷ শুধু মাইকেল এঞ্জেলোর জীবনে নয় শিল্পকলার ইতিহাসে এই সৃষ্টি অতুলনীয়৷ মাইকেল এঞ্জেলোর ডেভিড কালক্রমে ফ্লোরেন্সের শিল্পের প্রতীকেই পরিনত হয়েছে৷
এটি ১৮ ফুট উঁচু এবং কিশোর বীরের প্রতিমুর্তি যা নতুন প্রজাতন্ত্রের আত্মগেনরব ও আত্মবিশ্বাসের প্রতিবিম্ব৷ মানব শরীরে সুষমামন্ডিত ও তেজোদীপ্ত রূপ মৈল্পিক ভাষায় এখানে প্রকাশিত হয়েছে৷ পুরম্নষ শরীরের পেশীস্পন্দিত সৌন্দর্যের যে প্রকাশ এখানে ঘটেছে তা ইতিপূর্বে দেখা যায়নি৷
১৫০৮ সালে মাইকেল এঞ্জেলো রোমে ফিরে আসার পর পোপ তাকে ভ্যাটিক্যান প্রাসাদের সিসটিন গীর্জায় সম্পূর্ণ ছাদ চিত্রাচ্ছাদিত করবার আদেশ করলেন৷ প্রথম দিকে মাইকেল এঞ্জেলো ছবি অাঁকতে রাজি না হলেও পরবর্তীতে রাজী হলেন এবং কিছুদিনের মধ্যে হতাশা ৰোভ দূরীভ্থত হয়ে তার মধ্যে যেন সঞ্চারিত হলো এক ঐশ্বরিক প্রেরনা৷ সিসটিন চ্যাপেলের উপরের চাঁদোয়ার দৈর্ঘ্য প্রায় ১১৮ ফুট , প্রস্থ ৪৬ ফুট এবং উচ্চতা ৬৮ ফুট৷ ভল্ট এবং অল্টার দেয়ালসহ চিত্রাচ্ছাদিত করা ( প্রায় ৬ হাজার বর্গফুট কোনো একক মানুষের পৰে করা অমাধ্য )৷ কিন্তু তিনি অসাধ্য সাধন করেছেন৷ মাইকেল এঞ্জেলো পুরো চাঁদোয়াকে কয়েকটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করে ৯টি ভাগে ভাগ করে নিলেন -
১. ঈশ্বর আলোক ও অন্ধকার সৃষ্টি করেছেন৷
২. ঈশ্বর জ্যোতির্মন্ডল সৃষ্টি করেছেন৷
৩. ঈশ্বর ধরিত্রীকে আশীর্বাদ করেছেন৷
৪. ঈশ্বর প্রথম মানব সৃষ্টি করেছেন৷
৫. ঈভের সৃষ্টি৷
৬. ঈভ কর্তৃক আদমকে প্রলুব্ধ করা৷
৭. নোয়ার ত্যাগ৷
৮. মহাপস্নাবন৷
৯. নোয়ার প্রমত্তব৷
এয়াড়া দুই পাশে ছোট্ট পরিসরে প্রেরিত পুরম্নষ ও অসংখ্য অপ্সরা-দেবদূত মুর্তি এঁকেছেন৷ মোট ৩৪৩টি মানব মানবী, অপ্সরা, দেবদূত সহ এক সুবিশাল পরিকল্পনা ১৫০৮-১৫১২ সাল পর্যনত্ম দীর্ঘ ৪ বছরে তিনি এ কাজ সমাপ্ত করেন৷ ১৫১২ সালের ৩১শে অক্টোবর সিসটিন চ্যাপেল দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়৷
মাইকেল এঞ্জেলোর আরো উলেস্নখযোগ্য ভাস্কর্যের মধ্যে রয়েছে উপবিষ্ট মসেস, ডাইইং সেস্নভ ও বাউন্ড সেস্নভ৷
১৫৩৬ সালে রোমে বসবাসকালে মাইকেল এঞ্জেলো সিসটিন চ্যাপেলের দেয়ালে লাসাট জাজমেন্ট বা শেষ বিচার দৃশ্য অাঁকেন৷ লাস্ট জাজমেন্টের চিত্ররীতির সাথে ত্রিশ বছর আগে অাঁকা চিত্রগুলোর কোনো মিল নেই৷ ছাদের ছবিগুলিতে প্রশানত্মি, সৌকর্ম ও মাধুর্য়মন্ডিত শক্তির প্রকাশ ঘটেছে কিন্তু লাস্ট জাজমেন্ট চিত্রমালায় উন্মত্ত বর্বরতা আসুরিক প্রমত্ততা ও সার্বিক ধ্বংসের এক চিত্র অঙ্কিত হয়েছে৷ শেষ বিচারের দিন প্রভু যিশু আবির্ভূত হয়েছেন ঠিকই , কিন্তু প্রেম ও দয়ার প্রতিমুতিৃরূপে নয়৷ বিশাল দানবাকৃতির খৃষ্ট এখানে ডান হাত উত্তোলিত করে যেন ধ্বংসপরায়ন মানবজাতিকে অভিশাপ দিচ্ছেন , প্রবল রোষে স্বর্গ , মর্ত্য সবকিছু ধ্বংস করতে চাচ্ছেন৷ সেই সময় সমগ্র ইতালী জুড়ে যে হানাহানি ধর্মীয় বিভাজন ও যুদ্ধবিগ্রহজনিত হতাশা বিরাজ করছিলো তারই প্রতি ইঙ্গিত যেন এই উত্তাল চিত্র৷
এাইকেল এঞ্জেলোর শিল্পচর্চার সূচনা রেনেসাঁসের আদি পর্বে , খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছেছেন রেনেসাঁসের স্বর্ণযুগে , আবার অনত্মিম রেনেসাঁস শিল্পের মোড় পরিবর্তনেও তিনি পালন করেছেন পূর্বগামীর ভূমিকা৷ এক অর্থে রেনেসাঁসের গতিপ্রবাহের সর্বোত্‍কৃষ্ট উদাহরন তিনি৷

রাফায়েল

হাই রেনেসাঁ যুগের একজন সার্থক শিল্পী রাফায়েল৷ মাতৃমূর্তি চিত্রনে তিনি ছিলেন বিশেষ দৰ৷ তার প্রথম চিত্রবিদ্যার অনুশীলন চলে পিতার হাতে পরে শিৰাগুরম্ন পেরম্ন জীনোর কাছে৷ রাফায়েলের চিত্রের বৈশিষ্ট হলো নির্ভূল কম্পোজিশন৷
শিল্পী রাফায়েল ফ্লোরেন্সে থাকাকালীন (১৫০৫-১৫০৮) পর্যনত্ম লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ও মাইকেল এঞ্জেলোর শিল্পকর্মগুলো অনুধাবন করেন৷ তখন হতে তার চিত্রশৈলী আরো বলিষ্ঠ হয়ে ওঠে৷ রাফায়েলের ছবিতে আমরা পাই পূর্ন সাম্য ও সঙ্গতি যাকে ইংরেজীতে বলে হার্মোনি৷ এই সাম্য ও সঙ্গতি শুধু তার রচিত আকৃতি ও বিন্যাসে নয় মানসিকতা হতেও পরিস্ফুট৷ তার ছবিতে ধর্মীয় ভাব ও ধর্ম নিরপেৰ চিনত্মাধারার যথার্থ সমন্বয় হয়েছে৷
রাফায়েলের অঙ্কিত আকৃতিগুলি আদর্শবাদের ওপরে প্রতিষ্ঠিত এবং তাতে আছে মর্যাদা ও মহত্ত্বের প্রকাশ৷ তিনি লিওনার্দো এবং মাইকেল এঞ্জেলোর সৃষ্টিকে অনুধাবন করে তাদের মিলিয়ে সৃষ্টি করেছেন আপন শৈলী৷ শিল্পী রাফায়েল ফ্লোরেন্সে মাতৃমূর্তি বা ম্যাডোনা অবলম্বনে অনেকগুলি চিত্র রচনা করেছেন৷ রোমে পোপের জন্য তিনি ভ্যাটিকানের কতগুলি কৰ চিত্রিত করেন৷ ভ্যাটিকানে অঙ্কিত চিত্রগুলির মধ্যে দ্যা স্কুল অফ এথেন্স অন্যতম৷
দ্যা স্কুল অফ এথেন্স (১৫১০-১১, ফ্রেস্কো, ভ্যাটিক্যান প্যলেস, রোম) :
'দ্যা স্কুল অফ এথেন্স' নামক জমকালো ফ্যেস্কোটি রেনেসাঁ যুগের বিখ্যাত শিল্পকর্ম৷ ছবিটি ভ্যাটিক্যান প্যলেসের বিশাল একটি আর্চের নীচ হতে শুরম্ন হয়েছে৷ এখানে দেখা যাচ্ছে শিল্পী , দার্শনিক ও তাদের ছাত্রদের এক বিশাল মিলনমেলা৷ কলকোলাহলে জায়গাটি যেন মুখর হয়ে আছে৷ ছবিটিতে বিখ্যাত কয়েকজন ব্যক্তিত্ব রয়েছেন৷ একেবারে মাঝখানের আর্চটির নীচে দেখা যাচ্ছে পেস্নটো আর এরিষ্টটল স্বর্গ ও পৃথিবী নিয়ে আলোচনা করছেন৷ সিঁড়িতে আলুথালু ভঙ্গীতে বসে আছেন সক্রেটিস৷ ছবির বামদিকে রাফায়েল নিজেকে চিত্রিত করেছেন পেরম্নজীনোর সাথে৷ পোশাকের ভাজ এবং অভিব্যক্তিতে সবাই এখানে স্বতন্ত্র৷ এই ছবিতে রাফায়েল দেখিয়েছেন ননোমুগ্ধতার সমন্বয়, একটি বিসত্মৃত বিন্যাস রঙের উজ্জ্বল তারম্নন্যে আলোছায়ার বলিষ্ঠ পদচারনা৷ ভ্যাটিক্যান প্রাসাদের দেয়ালে অাঁকা দীপ্যমান ও জমকালো মনুমেন্টাল স্থাপত্যের মধ্যে খোলাহলপূর্ন এই চিত্রটি ১৬শ শতাব্দীর একটি দুঃসাধ্য ও সাহসী পরিকল্পনা৷

রেনেসাঁ

আধুনিক শিল্পের ব্যপ্তির কারণ পঞ্চদশ শতাব্দীর ইতালীর রেনেসাঁ৷ পঞ্চদশ শতাব্দীর আগে সমসত্ম কিছুই উত্‍সর্গকৃত ছিলো ঈশ্বরের জন্য , মানুষ ছিলো নিমিত্ত মাত্র , এমনকি শিল্পচর্চার লৰ্যও ছিলো ঈশ্বরের কৃপালাভ৷
রেনেসাঁ কথাটির অর্থ পূনর্জাগরন এবং এ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ভাষা হতে৷ শিল্পকলার ইতিহাসে রেনেসাঁ শব্দটি একটি উলেস্নখযোগ্য ঘটনা৷ এ শতকে সাহিত্য , দর্শন , চিত্রশিল্প , ভাস্কর্য , রাষ্ট্র ও সমাজ চেতনায় সর্বোপরি ক্লাসিকাল বিদ্যা চর্চার পূনারাম্ভ, বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তির উন্মেষ ইউরোপে বিশেষ করে ইতালীতে মানুষের কল্পনা প্রেরনা ও কর্মশক্তির উদ্বোধনই ইতিহাসে রেনেসাঁ বা পুনর্জাগরন নামে খ্যাত৷
রেনেসাঁকে ব্যাপক অর্থে মানুষের বুদ্ধি বিবেকের বিকাশ বলা যায়৷ রেনেসাঁ ইউরোপের মানুষকে মধ্যযুগীয় গতানুগতিকতার সব রকম বন্ধন হতে মুক্তি দিয়েছে৷ মানুষের মধ্যে এনে দিয়েছে ধর্ম নিরপেৰতা সমান চেতনা ও মূল্যবোধ৷
রেনেসাঁর সময়কালকে ২টি পর্যায়ে ভাগ করা যায় : ১ আর্লি রেনেসাঁ
এবং ২ হাই রেনেসাঁ
ফ্লোরেন্সে পঞ্চদশ শতকের প্রথম দিকে রেনেসাঁর সূচনা হয়েছিলো৷ সেখান হতে ইতালীর অন্যান্য স্থানে ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এর বিসত্মার হয়৷
ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষের দিকে মানবতাবাদ এসে ইতালীতে অনুপ্রবেশ করে৷ ক্লাসিকাল গ্রিক ও রোমান সভ্যতার প্রতি অনুরাগ রেনেসাস আন্দোলনের অন্যতম কারন৷ সবার উপরে মানুষের মর্যাদা ও মহিমা এবং রক্তমাংসের মানুষের অনুভ্থতির প্রতি তাদের ছিলো সুগভির বিশ্বাস৷ তাদের চোখে মানুষই ছিলো সৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু৷ এই সময় প্রাচীন শাস্রসমূহ ব্যকরন ও অলংকার শাস্ত্রের প্রতি একদল পন্ডিত ঝুঁকেপড়ে৷ এদের উত্তর সূরিরাই পরবর্তীকালে রেনেসাঁস যুগের মানবতাবাদী নামে পরিচিত হন৷
মানবতাবাদের আবির্ভাবের প্রাথমিক পর্যায়ে শুধুমাত্র প্রচীন জ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা হচ্ছিলো৷ বিশেষ করে গ্রীক ও রোমান জ্ঞান চর্চার অনুকরনেই তা চলছিলো৷ কিন্তু ১৫৫০ খৃঃ এর পর মানবতাবাদ অনেকটা উদার হলো৷ এ সময় বিজ্ঞান পাঠ এর অনত্মর্ভূক্ত হয়৷
পত্রাককে মানবতাবাদের জনক বলা হয়৷ তিনি প্রাচীন পান্ডুলিপিসমুহ গভীর মনোযোগের সাথে পাঠ করতেন৷ রেনেসাঁ হচ্ছে শুধু ক্ল্যাসিক্যাল জ্ঞান বিজ্ঞানের পুনর্জাগরনই নয় বরং ক্ল্যাসিক্যাল আত্মার পূনর্জাগরন৷
বহির্বিশ্ব চেতনা , মুদ্রন কৌশলের আবিষ্কার , বাণিজ্যের প্রসারতা , ধ্রুপদি বিদ্যার পুনর্চর্চা এবং তার ফলে জাতীয় আত্ম প্রত্যয়ের উদ্বোধন সবকিছুই সমবেত অনুপ্রেরনাতেই ইউরোপীয় সংস্কৃতির এই নবজাগরন৷