Monday 5 July 2010

যোগাযোগ, গণসংযোগ ও সামাজিক আন্দোলনে শিল্প :

সমাজে শিল্প ও শিল্পীর রয়েছে প্রত্যক্ষ ভূমিকা। সমাজের এমন কোনো অংশ বা বিষয় নেই যোনে শিল্পীর এই প্রত্যক্ষ ভূমিকা বা অবস্থান অবর্তমান। সমাজের একজন হিসেবে শিল্পীর যেমন সামাজিক দায় দায়িত্ব আছে, তেমনি আছে শিল্পী হিসেবে সামাজিক মূল্যবোধ ও উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখবার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা। সমাজ কাঠামো বা সমাজ ব্যবস্থা অনুসারে একেক সমাজে শিল্পীর এই দায়িত্ব একেক রকম হতে পারে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে সকল সমাজেই শিল্প ও শিল্পীর সাধারণ কিছু ভূমিকা প্রত্যক্ষ করা যায়। যার প্রয়োগের প্রতিফলন সমাজের চরিত্রে প্রকৃষ্টরূপে পরিলক্ষিত হয়। তবে এছাড়াও সমাজের সর্বত্র শিল্পের যে প্রয়োগ তার প্রভাব সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের জীবনেই কমবেশী প্রতীয়মান।

সমাজে শিল্প ও তার প্রভাবের বিষয়টিকে আলোচনার সুবিধার্থে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি নিম্নরূপ -

· প্রথম ভাগের আলোচ্য বিষয় যোগাযোগ ও গণসংযোগে শিল্প -

এ অংশের আলোচনায় যোগাযোগ ও গণসংযোগে বাণিজ্যিক এবং সুকুমারকলা বা চারুশিল্পের প্রয়োগ ও সমাজে তার প্রভাব প্রভৃতি বিষয় স্থান পাবে।

· দ্বিতীয় ভাগের আলোচ্য বিষয় বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে শিল্প -

এ অংশে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে শিল্পকলার ভূমিকা, তার প্রভাবে আন্দোলনে উদ্বুদ্ধকরণ ও আন্দোলন পরবর্তীকালে তার স্মরণে সৃষ্ট শিল্পকর্ম বিষয়ক আলোচনা স্থান লাভ করবে।

গণসংযোগে শিল্পকলার ভূমিকা ও তার প্রভাব অতিব্যপক। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি মূহুর্তে আমরা কোনো কিছু পড়ে, শুনে বা দেখে শিখছি, জ্ঞান লাভ করছি ও তার আলোকে জীবন পরিচালিত করছি। এই শেখার রয়েছে নানা প্রচলিত মাধ্যম। আমাদের পঞ্চইন্দ্রিয় এতে নানাভাবে কাজ করে চলেছে। প্রাচীনকাল হতে মানুষের সাথে মানুষের সংযোগ ও ভাবের আদান প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দর্শন ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের মাধ্যমে। একদিকে যেমন চিত্র, ভাস্কর্য, সঙ্গীত, নাটক, নৃত্য, কাব্য, সাহিত্য ইত্যাদি বিষয়গুলি শিল্প চর্চার ক্ষেত্র হিসেবে বিকাশ লাভ করেছে, তেমনি পাশাপাশি এসকল ভাব প্রকাশের ভাষাকে গণসংযোগের ক্ষেত্রে প্রাচীনকাল হতেই নানা পরিকল্পিত উপায়ে ব্যবহার করা হয়ে আসছে।

আধুনিক মনোজ্ঞিানীদের গবেষণায় একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও বিপ্লবাত্মক আবিষ্কার হচ্ছে, প্রচলিত অন্যান্য যে কোনো মাধ্যমের তুলনায় দৃশ্যমান মাধ্যম বা ভিজ্যুয়াল মিডিয়া মানুষের মনের উপর সর্বাপেক্ষা ছাপ ফেলতে সক্ষম। লক্ষ্যণীয় যে আধুনিককালে যেখানে গণসংযোগের বিষয়টি রয়েছে সেখানে চিত্রভাষা বা শিল্পভাষার প্রয়োগ প্রায় অবশ্যম্ভাবীরূপে পরিলক্ষিত হয়। উদাহরণ হিসেবে শিক্ষার নিম্নতম পর্যায় হতে উচ্চতম গবেষণার ক্ষেত্র অবধি চিত্রভাষার রয়েছে ব্যপক প্রয়োগ। এছাড়া পণ্যের বিজ্ঞাপন হতে শুরু করে যে কোনো বিষয়ে জনমত সৃষ্টি বা প্রচারে রয়েছে চিত্রভাষার অনন্য প্রয়োগ - তা সে অঙ্কিত চিত্র হোক বা ফটোগ্রাফি হোক। আর তার সাথে প্রায়সই যুক্ত হয় লেখনী - যা আধুনিককালে গ্রাফিক ডিজাইন নামক শিল্পকলা হিসেবে স্বীকৃত।

সভ্যতার আদিমতম পর্বে অস্তিত্ব রক্ষা, শিকার ও যাদু বিশ্বাসের কারণে যে চিত্রভাষার জন্ম, তা আজ যোগাযোগ ও ভাবের প্রকাশের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ ভাষা বা মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। আজ আর একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, শিল্প কেবল শিল্পীর আবেগ অনুভূতির প্রকাশক মাত্র। বরং তা মেসেজকে কার্যকরীভাবে প্রকাশের রীতি হিসেবে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। আবার তার ব্যপক ব্যবহারে মাধ্যমে নান্দনিক রুচিবোধের সৃষ্টি হচ্ছে ও প্রসার ঘটছে।

আধুনিককালে কেবল চিত্র বা শিল্প নয় সেই সঙ্গে লেখনীও ( রিটেন মেসেজ ) চিত্রভাষার অন্তর্গত। অবশ্য সুপরিকল্পিতভাবে প্রয়োগের উপরই এর সাফল্য নির্ভরশীল। একালে চিত্রভাষা অর্থ ‘কম্বিনেশন অফ আর্ট এন্ড টেকনোলজি’, যার সাথে প্রতিনিয়ত আমাদের পরিচয় ঘটছে। ফলে আমাদের চারপাশে সর্বত্রই এরব্যপক উপস্থিতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। দৈনিক সংবাদপত্র হতে শুরু করে পাঠ্য পুস্তক, ম্যাগাজিন, পথ চলতি পোস্টার, হোর্ডিং, ব্যানার, ফেস্টুন, বভিন্ন ডিসপ্লে, ফটোগ্রাফ, ফিল্ম, টেলিভিশন, সব কিছুতেই চিত্রভাষা তথা শিল্পের প্রয়োগ ও তার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। সুতরাং গণসংযোগের ক্ষেত্রে আধুনিককালে শিল্পের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য একটি বিষয়ে পরিণত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

No comments:

Post a Comment