Monday 5 July 2010

সমাজ, ধর্ম ও শিল্পকলা ‍:

দলবদ্ধভাবে বসবাসরত প্রাইমেট জাতীয় প্রাণী হতে ক্রমবিবর্তনের ধারায় পরিপূর্ণ মানবে রূপান্তরের কাল হতেই গোত্রের স্বার্থে মানুষ কিছু নিয়মনীতি মেনে চলতে শুরু করে, যার ফলশ্রুতিতে সৃষ্ট হয় মানব সমাজ বা সমাজ ব্যবস্থা। এই পরিপূর্ণ রূপান্তরের কাল হতেই মানব সমাজে শিল্পের অস্তিত্বের প্রয়োজনীয়তা ও তার উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। সৃষ্টির তাগিদ মানব প্রকৃতির অঙ্গ। লেখনী আবিষ্কারের অনেক পূর্বেই মানুষ তাই অঙ্কন ও খোদাই শিল্প সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছিলো।

মানব সৃষ্টির সূচনা লগ্ন হতে আজ পর্যন্ত শিল্পকলা প্রায় একই ধরনের সামাজিক উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শিল্পের প্রয়োজন সাধারণভাবে মানুষের সন্তুষ্টি সাধন - এই সন্তুষ্টি যেমন ব্যক্তি জীবনের জন্য প্রযোজ্য তেমনি সামগ্রিক সমাজের জন্যও। শিল্প যেমন কোনো কিছুর প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত হয়, তেমনি বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার জন্যও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আবার শিল্প আমাদের বস্তুগত চাহিদা যেমন ব্যবহার্য বস্তু সামগ্রী বা বাসস্থানের প্রয়োজনেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে আদিকাল হতে অদ্যবধি।

দৃশ্যমান শিল্পকলা ( ভিজ্যুয়াল আর্ট ) - র বলিষ্ঠতম ্রয়োগগুলির অন্যতম আমাদের ভাব প্রকাশ ও গণসংযোগের ক্ষেত্র - যার মাধ্যমে আমরা আমাদের মনের গহীনে সৃষ্ট ভাব ও আমাদের ধারনার প্রকাশ ঘটিয়ে তা অন্যের নিকট বোধগম্য করে তুলতে সক্ষম হই। যার প্রয়োগ দেয়ালে ঝোলানো ছবি হতে শুরু করে দৈনন্দিন ব্যবহার্য বস্তুসামগ্রীসহ সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

অনেক বিশেষজ্ঞের মতে প্রাগৈতিহাসিক যুগের শিল্পকর্মগুলি ছিলো শিকার ফলপ্রসু করার নিমিত্তে আয়োজিতো আচার অনুষ্ঠানের অংশ বিশেষ - যা শিকারে সহজে সফলকাম হওয়ার একটি প্রকৃষ্ট উপায়। আবার কারো কারো মতে এই শিল্পকর্মগুলির সৃষ্টি হয়েছিলো শিকারে সাফল্যের স্মারক হিসেবে ( যদিও প্রথমটির পক্ষেই পক্ষপাতিত্ব অধিক )।

প্রাগৈতিহাসিক মানব সমাজে যেহেতু ধর্মের উদ্ভব হয়নি, তাই সেখানে ধর্মীয় কারনে সৃষ্ট শিল্পকলার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়না। তবে সে সময় ধর্মের স্থান দখল করেছিলো যাদু বিশ্বাস। তাই প্রাগৈতিহাসিক মানব সমাজে যাদু বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে শিল্পকর্মের সৃষ্টি সর্বত্র পরিলক্ষিত হয়।

প্রাগৈতিহাসিক মানব সমাজে যাদু বিশ্বাসের কারনেই সকল শিল্পকর্মের সৃষ্টি হয়েছিলো ( উদাহরণ : গুহাচিত্র, মাতৃকা মূর্তি, মেগালিথস প্রভৃতি )।

ধর্ম বলতে আধুনিক কালে মানব সমাজে আমরা যে ধরনের বিশ্বাসকে বুঝি, প্রাগৈতিহাসিক মানব সমাজে তার অস্তিত্ব না থাকার কারনে শিল্পকলার সৃষ্টি স্বাভাবিক কারনেই সেসময় আশা করা যায়না। কিন্তু প্রাচীন মিশরীয় সমাজের প্রতিটি অংশেই ছিলো ধর্মের প্রত্যক্ষ প্রভাব। সেখানে পুরোহিতদের সহায়তায় শাসক বা ফারাওরা ছিলেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এবং দেবতার মতোই পুজোনীয়। মিশরীয়রা মৃত্যু পরবর্তী জীবনে বিশ্বাসী ছিলো, তাই তারা পূনর্জবিনের জন্য মৃতদেহ সংরক্ষণ করতো - যা মমি নামে পরিচিত। একই উদ্দেশ্যে ফারাওদের সমাধি বা পিরামিডের দেয়ালগাত্রে তারা এঁকে রাখতো তাদের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা ও ধর্মগাঁথা। প্রাচীন মিশরীয় সমাজে ধর্মের প্রভাব এতোই ব্যপক যে তাদের শিল্পকলা প্রতিটি আঙ্গিক থেকেই পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত হয়েছিলো কঠোর ধর্মযি অনুশাসনের শৃঙ্খলে ( উদাহরণ : প্রাচীন মিশরীয় চিত্রকলা, ভাস্কর্য, স্থাপত্য ইত্যাদি )।

প্রাচীন মিশরীয় শিল্পকলা সকল অর্থেই ছিলো দ্বিমাত্রিক -

· চিত্রকলা - সার্ফেস ও উপস্থাপনা

ধর্ম ও ফারাও

· ভাস্কর্য - সম্মুখবর্তীতা

রিলিফ

ধর্ম ও ফারাও

· স্থাপত্য - মন্যুমেন্টালিটি

ধর্ম ও ফারাও

সুতরাং এটি সুস্পষ্টরূপে প্রতিয়মান যে প্রাচীন মিশরীয় সমাজের সকল কিছুই ধর্মকে ঘিরে আবর্তীত হতো, তাই সেসময়ের মিশরীয় শিল্পকলা ছিলো ধর্মের অনুজাত অনুষঙ্গ বিশেষ।

মেসোপটেমীয়দের জীবনেও ধর্মের ছিলো বিশিষ্ট স্থান। তবে তাদের ধর্মবোধ ছিলো মূলতঃ ইহলৌকিক জীবনের উন্নতি সাধনের নিমিত্তে। অনুমান করা হয় মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে তাদের ধারনা ছিলো - মৃত্যুর পরে আত্মা কিছুকাল পরকালে অবস্থান করে চিরতরে বিলীন হয়ে যায়। তাই তাদের সমাজে ধর্মীয় আচারাদি ছিলো জাগতিক উন্নয়ন কামনা কেন্দ্রিক। পুরোহিতদের কড়া ধর্মীয় অনুশাসনে নিয়ন্ত্রিত হয়ে পরিচালিত হতো প্রাচীন মেসোপটেমীয় সমাজ ( আর শাসকরাই হতেন সেখানে প্রধান পুরোহিত )। ধর্মীয় অনুশাসনে নিয়ন্ত্রিত মেসোপটেমীয় সমাজের মশল্পকলাও তাই ধর্ম কেন্দ্রিক ছিলো। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে তাদের স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম নিদর্শন জিগুরাত সমূহ। কিংবা প্রার্থনারত বিভিন্ন ভঙ্গীর সম্রাটের মূর্তি, যেমন গুডিয়া।

মেসোপটেমীয় সমাজের ধর্ম বিশ্বাস সম্পর্কে যেহেতু খুব বেশী ধারনা পওেয়া যায়না, তাই তাদের প্রথম দিকের ভাস্কর্যে ব্যবহৃত বৃহদাকৃতি চোখ কোনো ধর্মজাত নাকি সম্মোহন জাতীয় কোনো প্রকার যাদু বিশ্বাসজাত তা বলা দূস্কর। তবে মেসোপটেমীয় সমাজে ধর্মীয় বিশ্বাসজাত বিপদ হতে রক্ষাকারী বৃষ বা ষাঁড়ের উপস্থিতি অসংখ্য শিল্পকর্মে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরিলক্ষিত হয়। যা হতে ধারনা করা যায় মেসোপটেমীয় শিল্পকলায় ধর্মের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিলো। তবে এটিও প্রতীয়মান হয় যে তাদের সমাজ বা শিল্পকলা মিশরীয়দের মতো ততটা কঠোর ধর্মযি অনুশাসনে নিয়ন্ত্রিত ছিলো না। ফলে সেখানে অসংখ্য ধর্মনিরপেক্ষ শিল্পের উপস্থিতিও পরিলক্ষিত হয়।

1 comment:

  1. এই প্রশ্নটির কি কোনো ছবি পাওয়া যাবে?

    ReplyDelete