Tuesday 9 March 2010

মাইকেল এঞ্জেলো

হাই রেনেসাঁ যুগের মহান শিল্পী মাইকেল এঞ্জেলো বনারএরাতি৷ জন্মসূত্রে ফ্লোরেন্সবাসী মাইকেল এঞ্জেলো একাধারে ছিলেন ভাস্কর , চিত্রশিল্পী , স্থপতি ও কবি৷ ঊননব্বই বছরের দীর্ঘজীবন মাইকেল এঞ্জেলো রেনেসাঁসের আদি , মধ্য ও অনত্মিমপর্বের স্পর্শ লাভ করেছিলেন এবং তিনটি পর্বেরই ক্রম বিবর্তন লৰ্য করা যায়৷ রেনেসাঁস শিল্পীদের জীবনবৃত্তানত্ম রচয়িতা সমসাময়িক চিত্রকর ও স্থপতি জর্জ ভামরি মাইকেল এঞ্জেলোকে অপর সব শিল্পীর ওপর স্থান দিয়েছেন এবং তাকে আখ্যায়িত করেছেন ডিভাইনো মাইকেল এঞ্জেলো বা স্বর্গ প্রেরিত মাইকেল এঞ্জেলো রূপে৷ তার জীবত্‍কালে মাইকেল এঞ্জেলোর আসন যে কত উঁচুতে ছিলো সমসাময়িককালের জীবনীকারের এ মনত্মব্যে তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়৷
মাইকেল এঞ্জেলো নিজেকে প্রথমত এবং প্রধানতঃ একজন ভাস্কর বলে ভাবতে পছন্দ করতেন কেননা তিনি বিশ্বাস করতেন একজন ভাস্করের রয়েছে "মানুষ সৃষ্টি করার পবিত্র ৰমতা৷" ১৪৯৩ সালে মাইকেল এঞ্জেলো রোমে আসেন এবং দুটো বড় কাজ করে খ্যাতি অর্জন করেন৷ এগুলোর মধ্যে একটি হলো পিয়েতা বা মৃত শিশুর জন্য বিলাপ৷ মাইকেল এঞে৷জলো তার পিয়েতায় মাতা মেরীকে তরম্ননী ও সুন্দরী হিসেবে রূপায়িত করেছেন এবং মেরী ও শিমুর অভিব্যক্তিতে যাতনার চিহ্ন মুছে দিয়েছেন৷ ঘঁনার বেদনাময়তাকে রূপায়িত করেছেন মেরীর মমতাময় ভঙ্গিমার বিপরীতে খৃষ্টের নিস্পন্দ শরীরের এলানো ভঙ্গিমায়৷ এখানে সকরম্নন দৃশ্যের বিষাদ ও মুষমাকে একই সঙ্গে ধারন করা হয়েছে৷
১৫০১ সালে ৪ বছর ধরে বিশাল মর্মর পাথর খোদাই করে মাইকেল এঞ্জেলো সৃষ্টি করেন 'ডেভিড'৷ শুধু মাইকেল এঞ্জেলোর জীবনে নয় শিল্পকলার ইতিহাসে এই সৃষ্টি অতুলনীয়৷ মাইকেল এঞ্জেলোর ডেভিড কালক্রমে ফ্লোরেন্সের শিল্পের প্রতীকেই পরিনত হয়েছে৷
এটি ১৮ ফুট উঁচু এবং কিশোর বীরের প্রতিমুর্তি যা নতুন প্রজাতন্ত্রের আত্মগেনরব ও আত্মবিশ্বাসের প্রতিবিম্ব৷ মানব শরীরে সুষমামন্ডিত ও তেজোদীপ্ত রূপ মৈল্পিক ভাষায় এখানে প্রকাশিত হয়েছে৷ পুরম্নষ শরীরের পেশীস্পন্দিত সৌন্দর্যের যে প্রকাশ এখানে ঘটেছে তা ইতিপূর্বে দেখা যায়নি৷
১৫০৮ সালে মাইকেল এঞ্জেলো রোমে ফিরে আসার পর পোপ তাকে ভ্যাটিক্যান প্রাসাদের সিসটিন গীর্জায় সম্পূর্ণ ছাদ চিত্রাচ্ছাদিত করবার আদেশ করলেন৷ প্রথম দিকে মাইকেল এঞ্জেলো ছবি অাঁকতে রাজি না হলেও পরবর্তীতে রাজী হলেন এবং কিছুদিনের মধ্যে হতাশা ৰোভ দূরীভ্থত হয়ে তার মধ্যে যেন সঞ্চারিত হলো এক ঐশ্বরিক প্রেরনা৷ সিসটিন চ্যাপেলের উপরের চাঁদোয়ার দৈর্ঘ্য প্রায় ১১৮ ফুট , প্রস্থ ৪৬ ফুট এবং উচ্চতা ৬৮ ফুট৷ ভল্ট এবং অল্টার দেয়ালসহ চিত্রাচ্ছাদিত করা ( প্রায় ৬ হাজার বর্গফুট কোনো একক মানুষের পৰে করা অমাধ্য )৷ কিন্তু তিনি অসাধ্য সাধন করেছেন৷ মাইকেল এঞ্জেলো পুরো চাঁদোয়াকে কয়েকটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করে ৯টি ভাগে ভাগ করে নিলেন -
১. ঈশ্বর আলোক ও অন্ধকার সৃষ্টি করেছেন৷
২. ঈশ্বর জ্যোতির্মন্ডল সৃষ্টি করেছেন৷
৩. ঈশ্বর ধরিত্রীকে আশীর্বাদ করেছেন৷
৪. ঈশ্বর প্রথম মানব সৃষ্টি করেছেন৷
৫. ঈভের সৃষ্টি৷
৬. ঈভ কর্তৃক আদমকে প্রলুব্ধ করা৷
৭. নোয়ার ত্যাগ৷
৮. মহাপস্নাবন৷
৯. নোয়ার প্রমত্তব৷
এয়াড়া দুই পাশে ছোট্ট পরিসরে প্রেরিত পুরম্নষ ও অসংখ্য অপ্সরা-দেবদূত মুর্তি এঁকেছেন৷ মোট ৩৪৩টি মানব মানবী, অপ্সরা, দেবদূত সহ এক সুবিশাল পরিকল্পনা ১৫০৮-১৫১২ সাল পর্যনত্ম দীর্ঘ ৪ বছরে তিনি এ কাজ সমাপ্ত করেন৷ ১৫১২ সালের ৩১শে অক্টোবর সিসটিন চ্যাপেল দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়৷
মাইকেল এঞ্জেলোর আরো উলেস্নখযোগ্য ভাস্কর্যের মধ্যে রয়েছে উপবিষ্ট মসেস, ডাইইং সেস্নভ ও বাউন্ড সেস্নভ৷
১৫৩৬ সালে রোমে বসবাসকালে মাইকেল এঞ্জেলো সিসটিন চ্যাপেলের দেয়ালে লাসাট জাজমেন্ট বা শেষ বিচার দৃশ্য অাঁকেন৷ লাস্ট জাজমেন্টের চিত্ররীতির সাথে ত্রিশ বছর আগে অাঁকা চিত্রগুলোর কোনো মিল নেই৷ ছাদের ছবিগুলিতে প্রশানত্মি, সৌকর্ম ও মাধুর্য়মন্ডিত শক্তির প্রকাশ ঘটেছে কিন্তু লাস্ট জাজমেন্ট চিত্রমালায় উন্মত্ত বর্বরতা আসুরিক প্রমত্ততা ও সার্বিক ধ্বংসের এক চিত্র অঙ্কিত হয়েছে৷ শেষ বিচারের দিন প্রভু যিশু আবির্ভূত হয়েছেন ঠিকই , কিন্তু প্রেম ও দয়ার প্রতিমুতিৃরূপে নয়৷ বিশাল দানবাকৃতির খৃষ্ট এখানে ডান হাত উত্তোলিত করে যেন ধ্বংসপরায়ন মানবজাতিকে অভিশাপ দিচ্ছেন , প্রবল রোষে স্বর্গ , মর্ত্য সবকিছু ধ্বংস করতে চাচ্ছেন৷ সেই সময় সমগ্র ইতালী জুড়ে যে হানাহানি ধর্মীয় বিভাজন ও যুদ্ধবিগ্রহজনিত হতাশা বিরাজ করছিলো তারই প্রতি ইঙ্গিত যেন এই উত্তাল চিত্র৷
এাইকেল এঞ্জেলোর শিল্পচর্চার সূচনা রেনেসাঁসের আদি পর্বে , খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছেছেন রেনেসাঁসের স্বর্ণযুগে , আবার অনত্মিম রেনেসাঁস শিল্পের মোড় পরিবর্তনেও তিনি পালন করেছেন পূর্বগামীর ভূমিকা৷ এক অর্থে রেনেসাঁসের গতিপ্রবাহের সর্বোত্‍কৃষ্ট উদাহরন তিনি৷

No comments:

Post a Comment