Wednesday 17 March 2010

শ্রীলঙ্কান শিল্পকলাঃ

শ্রীলঙ্কার শিল্পকলার ইতিহাস অতি প্রাচীন তবে, এর প্রাচীনতম নিদর্শন তেমন একটা টিকে নেই৷ ইতিহাসের আলোকে জানা যায় যে, ভারতের মৌর্য সম্রাট অশোকের সময়ে তাঁর পুত্র মহিন্দ বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে শ্রীলঙ্কায় যান৷ সে সময়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিবরণে শ্রীলঙ্কাকে তাম্বাপানি নামে অভিহিত করা হয়েছে৷ আলেকজান্ডারের পূর্ব অভিযানের সময় অর্থাত্‍ ৩২৬-৩২৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে অনেসিক্রিটাস অব অ্যাসটিপ্যালাসিয়া তার রচনায় শ্রীলঙ্কার নাম তপ্রবন উলেস্নখ করেছেন৷ এয়াড়া গ্রীক ভূগোলবিদ আলেকজান্দ্রিয়ার টলেমি বা ক্লডেস টলোমিয়াস এর লেখা হতে প্রাচীন শ্রীলঙ্কার ভৌগলিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস জানা যায়৷
প্রাচীন ভারতীয়রা শ্রীলঙ্কাকে বলতো শিয়েলাদিবা, যা তামিলনাড়তে প্রাপ্ত সম্রাট অশোকের সময়ে লিখিত পুঁথিতে পাওয়া যায়৷ পালি ভাষায় শ্রীলঙ্কাকে শিহালদিপা বলা হয়েছে৷ আবার খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতকে সম্রাট সমুদ্র গুপ্তের সময়ের লেখায় শ্রীলঙ্কার নাম উলেস্নখ করা হয়েছে সিনহালাকা, যার অর্থ সিনহলদের দেশ৷

প্রাচীন কাল হতেই এশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার ব্যবসায়িক যোগাযোগ বিদ্যমান ছিলো৷ এশিয়া হতে ইউরোপ পর্যনত্ম বিসত্মৃত 'সিল্ক-রম্নট' - এর দুটি পথের মধ্যে একটি পথ শ্রীলঙ্কার উপর দিয়ে যাবার ফলে শ্রীলঙ্কার সাথে চীন হতে রোম তথা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান ছিলো৷ এর প্রমাণ পাওয়া যায় চীনা পর্যটক শ্যাং হো - এর লেখায়, যেখানে তিনি চীন ও শ্রীলঙ্কার মধ্যাকার যোগাযোগের কথা উলেস্নখ করেছেন৷

ভারতে খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দির লেখায় শ্রীলঙ্কার শিল্পকলার উলেস্নখ পাওয়া যায়৷ ষ্ষ্ঠ শতািব্দর লেখা মহাবামশা - য় শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন প্রত্নতাতি্বক স্থানে দেয়াল চিত্রণের উলেস্নখ করা হয়েছে৷ যার মধ্যে প্রাচীন নগরী অনুরাধাপুরা - র ভিৰু নিবাস 'লোহা পাসাদা' - র নাম বিশেষ ভাবে উলেস্নখযোগ্য৷ এ সময়ের শ্রীলঙ্কার শিল্পকলায় ভারতীয় প্রভাব পরিলৰিত হয়৷ খ্রিষ্টিয় ১১শ - ১৩শ অব্দে অনুরাধাপুরায় ও পলোন্নারম্নয়া নামক রাজ্যে ব্রোঞ্জের হিন্দু দেব-দেবীর ভাস্কর্য তৈরী হতে দেখা যায়৷

আধুনিক কালের পূর্বে অনুরাধাপুরা, পলোন্নারম্নয়া, দাম্বাদেনিয়া, যাপাহুয়া, কোটে, গামপোলা, কান্দি প্রভৃতি স্থানে শ্রীলঙ্কার বিকাশ ঘটতে দেখা যায়৷

ডবভিন্ন শিল্প ঐতিহাসিক শ্রীলঙ্কার শিল্পকলাকে প৭াচটি ভাগে ভাগ করেছেন৷ যদিও কোনো কোনো শিল্প ঐতিহাসিকের কাছে এই বিভাজন পুরোপুরি গ্রহনযোগ্য নয়৷ তবে বেশীর ভাগ শিল্প ঐতিহাসিকের মতেই শ্রীলঙ্কার শিল্পকলাকে প্রধানত ৫টি ভাগে ভাগ করা যায় -

১. প্রাথমিক ঐতিহাসিক যুগ ২৫০ খৃষ্ট পূর্বাব্দ - ৫০০ খৃষ্টাব্দ

২. মধ্য ঐতিহাসিক যুগ ৫০০ খৃষ্ট পূর্বাব্দ - ১২৫০ খৃষ্টাব্দ

৩. শেষ ঐতিহাসিক যুগ - (১) ১২৫০ খৃষ্ট পূর্বাব্দ - ১৬০০ খৃষ্টাব্দ

৪. শেষ ঐতিহাসিক যুগ - (২) ১৬০০ খৃষ্ট পূর্বাব্দ - ১৮০০ খৃষ্টাব্দ

৫. আধুনিক ঐতিহাসিক যুগ ১৮০০ খৃষ্ট পূর্বাব্দ - ১৯০০ খৃষ্টাব্দ৷

প্রাথমিক ও মধ্য ঐতিহাসিক যুগের শিল্পকলা ঃ

যদিও প্রাথমিক ও ঐতিহাসিক যুগের চিত্রকলা বা ভাস্কর্যের কোনো চিহ্নই বর্তমানে টিকে নেই, তবে বিভিন্ন স্তুপের বেদী বা গাত্রের রিলিফ ভাস্কর্য হতে সে যুগের চিত্র বা ভাস্কর্যের মান অনুধাবন করা যায়, যার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিলো পরবর্তী শ্যীলঙ্কার শিল্পধারা, যার ধারাবাহিকতা পরিলৰিত হয় মধ্য ঐতিহাসিক যুগের শিল্পকলায়৷

চিত্রকলা ঃ

চিত্রকলার প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া যায় রাজা কশ্যপের রাজ্য সিগিরিয়াতে, যা খৃষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে অঙ্কিত৷ এর পরের প্রাচীনতম শ্রীলঙ্কার চিত্রকলার নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হয় পলোন্নারম্নয়ার 'ত্রিভস্ক ইমেজ হাউস' - এর মু্যরাল চিত্রাবলী৷ যদিও এই দুই চিত্রাবলী প্রায় ৬০০ বছরের ব্যবধানে অঙ্কিত, তথাপি উভয় মু্যরালেই প্রাথমিক ঐতিহাসিক অনুরাধাপুরা যুগের রীতির ধারাবাহিকতা পরিলৰিত হয়৷

অনুরাধাপুরা যুগের মু্যরাল সমূহের মধ্যে সবচেয়ে অনুপম বা মানের দিক হতে সর্বশ্রেষ্ঠ সিগিরিয়ার মু্যরাল সমূহ৷ যদিও অনুরাধাপুরা যুগের চিত্রমালার বিসত্মৃতি ব্যপক এবং বিভিন্ন স্থানে এর কিছুটা স্বতন্ত্র রীতি পরিলৰিত হলেও সিগিরিয়ার চিত্রশিল্প এর রেখার গুণাবলী ও তার প্রয়োগের কারণে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হয়৷

সিগিরিয়া মু্যরালের রেখা চিত্রে স্কেচি ও দ্রম্নত ভাব নিয়ে এসেছে৷ যার ফলে ফিগার বা অন্যান্য আকৃতিতে ঢৌল ভাব বা স্ফিতির অনুভূতি প্রখর রূপ লাভ করে৷ অন্যভাবে বললে বলা যায়, সিগিরিয়া মু্যরালের প্রধান বৈশিষ্ঠ্য অসংখ্য স্কেচি রেখার মাধ্যমে ভলু্যম সৃষ্টির অনন্য গুণ, যা তাদের চিত্রে আকৃতিকে নির্দিষ্ট করতে বিশেষভাবে উপযোগিতার প্রমাণ রেখেছে৷

প্রাথমিক ও মধ্য ঐতিহাসিক যুগের চিত্রের প্রায় সম্পূর্ণ অংশই স্ট্রোকের মাধ্যমে রং দ্বারা পূর্ণ করা হতো৷ চ্যাপ্টা তুলির একদিকে অধিক চাপ প্রয়োগ করে রং দেবার ফলে এতে এতে এক অংশে গাঢ় ও অপরাংশে হালকা রঙের টোনের কারণে একটি আলোছায়ার অনুভূতি সৃষ্টি করে৷ একই পদ্ধতির বহিঃরেখা আঁকবার ফলে চিত্রে ফিগার বা বস্তুর আকৃতি ও তার আলোছায়া দেখাবার বিষয়টিও সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে৷

এই ধারা অবশ্য অনুরাধাপুরা যুগের সকল স্থানের চিত্ররীতিতেই পরিলৰিত হয়৷ যার উদাহরণ দেখা যায় 'মহিয়াঙ্গন দেহাবশেষ-কৰের মু্যরাল' এ বা 'পুলিস্নগোদা গালগি' মু্যরালে৷ তবে এ সকল স্থানের মু্যরাল হতে সিগিরিয়া মু্যরাল সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী এর রেখার মান ও তার প্রয়োগ রীতির কারণে৷ অনুরাধাপুরা যুগের চিত্রণরীতিতে পলোন্নারম্নয়াসহ সকল স্থানেই শিল্পী রেখা ব্যবহার করেছেন নিশ্চিত ও শেষ রেখা হিসেবে৷ কিন্তু সিগিরিয়ার শিল্পীদের স্কেচি ও অনুসন্ধানী রেখা অনুরাধাপুরা যুগের মু্যরালের ৰেত্রে এক অনুপম সৃষ্টি৷

শেষ ঐতিহাসিক যুগ :

এ যুগে শ্রীলঙ্কার শিল্পের রীতিতে এক ব্যপক পরিবর্তন সাধিত হয়৷ যার সর্বোত্‍কৃষ্ট প্রয়োগ পরিলৰিত হয় অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকের শ্রীলঙ্কার শিল্পকলায়৷ পূর্ববর্তী যুগের ধ্রম্নপদী প্রকৃতিবাদিতা এ সময়ে ধীরে ধীরে প্রতিস্থাপিত হয়ে এক উচ্চ মানের শৈলীগত ধারার সৃষ্টি হয় - যা ছিলো শ্যীলঙ্কার ধ্রম্নপদী শিল্প ঘরাণার অনুরূপ মানের প্রকাশবাদী ও স্পন্দনশীল বা গতিময়তা সম্পন্ন৷

১৩০০ খৃষ্টাব্দে পলোন্নারম্নয়া রাজ্যের পতনের পর প্রায় ৪০ বছর ব্যপী এ অঞ্চলের এক ব্যপক রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করে৷ ফলে শ্রীলঙ্কার রাজধানী এ সময়ে যথাক্রমে দাম্বাদেনিয়া , যাপাহুয়া , কোটে , সীতাওয়াকে এবং গাম্পোলা এই পাঁচটি স্থানে স্থাপন ও প্রতিসরণ করা হয়৷ শেষ পর্যনত্ম ১৭০০ খৃষ্টাব্দে কান্দিতে রাজধানী স্থাপনের মাধ্যমে এর পরিসমাপ্তি ঘটে৷ কোনো কোনো শিল্প ঐতিহাসিকের মতে শ্রীলঙ্কার শিল্পকলার স্বর্ণযুগ হিসেবে এই সময়টি পরিগণিত হতে পারে কারণ এর পরবর্তী যুগের শিল্পকলা অপেৰাকৃত নিম্নমানের বলে তারা মনে করেন৷

প্রাথমিক বিংশ শতাব্দির বৌদ্ধ চিত্রকলা :

বিংশ শতাব্দিতে শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ চিত্রকলায় বিভিন্ন ধরনের রীতি পরিলৰিত হয় বিভিন্ন মন্দিরে৷ এর মূলে রয়েছে দীর্ঘ কয়েক শতক ব্যপী এদেশে বিভিন্ন ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনের ফলে সে সকল দেশের শিল্প রীতির অনুপ্রবেশ , তা ছাড়া এদেশের শিল্পীদের নিজস্ব জাতীয়তাবোধ ও শিল্প ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রহ ও তার অনুসন্ধানের শিল্পে প্রয়োগের প্রচেষ্টা৷ যার ফলে ম্রীলঙ্কার চিত্রকলায় বিংশ শতাব্দির প্রথম চার দশকে এক নতুন চিত্র ধারার উন্মেষ ঘটে৷ যার উদাহরণ দেখা যায় গোতামি বিহারের জর্জ কেইট মু্যরাল - এ , কিলানীয়া রাজা মহা বিহারায় - এর সোলিয়াস মেনডিস মু্যরাল - এ এবং এম. সারলিস - এর অসংখ্য মু্যরালে৷

গোতামি বিহারের মু্যরালে ১৯৩০ - এর দশকের শ্রীলঙ্কার শ্রেষ্ঠ আধুনিক শিল্পীগণ কিউবিজম , অনুরাধাপুরা যুগের চিত্ররীতির রৈখিক সৌন্দর্য এবং ভারতীয় ভাস্কর্যের ইন্দ্রিয়জ অভিব্যক্তির সমন্বয়ে এক অনবদ্য শৈল্পীক ভাষার সফল প্রকাশ ঘটান৷

কিলানীয়া রাজা মহা বিহারায় - এর মু্যরালে ১৯৩০ - এর দশকের শেষাংশে এবং ৪০ এর দশকের প্রথমাংশে বিখ্যাত সোলিয়াস মেনডিস অনুরাধাপুরা যুগের ধ্রম্নপদী সিন্হলী রীতির পুনরম্নত্থানে ব্রতী হলেও শেষ পর্যনত্ম এটি অনুরাধাপুরা যুগের রীতি , বিভিন্ন ভারতীয় রীতি এবং ইউরোপীয় রীতির সংমিশ্রণ সম্বলিত চিত্রের জন্ম দেয়৷ অবশ্য এতে অনুরাধাপুরা যুগের ধ্রম্নপদী প্রকৃতিবাদীতার সুস্পষ্ট উপস্থিতি পরিলৰিত হয়৷

বৌদ্ধ ধর্মকে কেন্দ্র করে এম. সারলিস - এর মু্যরাল এবং লিথোগ্রাফিক প্রিন্ট শ্রীলঙ্কায় প্রথম এমন একটি শিল্পধারা যেখানে শিল্প ধনীক বা বুর্জোয়া শ্রেণীর জন্য নয় , বরং তা সাধারণ মানুষের জন্য এমন রীতিতে উপস্থাপিত৷ আবার একই সঙ্গে তাঁর শিল্পরীতিতে অনুরাধাপুরা বা কান্দি রীতির ও নয় , বরং এটি পাশ্চাত্যের প্রকৃতিবাদীতা এবং সেই সঙ্গে শ্রীলঙ্কার লোকজ রীতির সমন্বয়ে একটি সার্থক , আকর্ষনীয় এবং সৌন্দর্য মন্ডিত নতুন ধারা , যা শ্রীলঙ্কায় বিংশ শতাব্দির অন্যতম জনপ্রিয় পরিণত হতে সৰম হয়৷

শ্রীলঙ্কার স্থাপত্যকলা :

শ্রীলঙ্কার অন্যান্য শাখার মতোই এর স্থাপত্যকলাও ধর্মীয় বিষয়াদির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে৷ যার মধ্যে স্থাপত্যকলাকে অনন্যতা দানে বৌদ্ধ ধর্মের রয়েছে বিশিষ্ট ভূমিকা৷ এর পাশাপাশি তামিল হিন্দুরাও বিভিন্ন মন্দির ও পবিত্রস্থান নির্মাণের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার স্থাপত্যকলায় যথেষ্ট অবদান রেখেছে৷ এয়াড়া শ্রীলঙ্কার স্থাপত্যকলায় এখানে উপনিবেশ সৃষ্টিকারী পর্তুগীজ , ডাচ ও ইংরেজদের যথেষ্ট প্রভাব পরিলৰিত হয়৷ ফলে বৌদ্ধ , হিন্দু ও ইউরোপীয় বিভিন্ন শিল্পধারার সমন্বয়ে শ্রীলঙ্কার স্থাপত্য সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিলো৷

বৌদ্ধ স্থাপত্যকলা :

শ্রীলঙ্কা নামক দ্বীপ রাষ্ট্রের প্রায় সর্বত্রই বৌদ্ধ ধর্মের প্রাধান্য পরিলৰিত হয়৷ শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ স্থাপত্যকলার অন্যতম নিদর্শন দাগোবা - যা ভারতে স্তুপ নামে পরিচিত৷ গম্বুজাকৃতির ইটের তৈরী এবং পস্নাস্টারে আচ্ছাদিত দাগোবাগুলি সাধারণত: সাদা রঙের হয়ে থাকে৷ এগুলি মূলত: বুদ্ধের দেহাবশেষ যেমন চুল বা দাঁত প্রভৃতি সংরৰণের কারণে পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে৷ ভারতের মৌর্য সম্রাট অশোকের সময়ে তাঁর পুত্রের শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারের নিমিত্তে আগমনের কাল হতেই এখানে স্তুপ বা দাগোবা নির্মাণ শুরম্ন হয়৷ বর্তমানে সমগ্র দ্বীপ জুড়ে এর ছয়টি আকৃতিগত রীতি পরিলৰিত হয়৷ এগুলি - বাবল শেপ, বেল শেপ, পট শেপ, দি হিপ অফ পেডি শেপ, আমালাকা শেপ এবং দেহাবশেষ রাখবার কৰের সঙ্গে গোল কাঠের ছাদ বিশিষ্ট দাগোবা ু যা চার কোণায় চারটি বুদ্ধ ইমেজ স্থাপিত থাকে ( অবশ্য দীর্ঘকাল পূর্বেই এর কাঠের অংশগুলি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে )৷

হিন্দু স্থাপত্য :

শ্রীলঙ্কার স্থাপত্যে হিন্দু ধর্মের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে৷ কোবিল নামে পরিচিত হিন্দু স্থাপত্যকর্মের মধ্যে শিবের মন্দিরই অন্যতম৷ তবে সকল কোবিলই প্রধানত: প্রার্থনা কৰ এবং পবিত্র কৰ বিশিষ্ট হয়ে থাকে৷ হিন্দু মন্দিরের প্রধান স্থাপতিক বৈশিষ্ট্য এর উজ্জ্বল রঙের রিলিফ ভাস্কর্য সম্বলিত শিখর - যা কখনো গম্বুজাকৃতির আবার ককনো বা পিরামিড আকৃতির হতে দেখা যায়৷ এয়াড়া কোবিলের বাইরে একটি খোলা চত্বর থাকে , যেখানে প্রার্থনাকারীরা বামাবর্তে মন্দিরটি প্রদৰিণ করেন৷

ইউরোপীয় স্থাপত্য :

শ্রীলঙ্কার স্থাপত্যে ইউরোপীয় প্রভাব যথেষ্ট পরিমানে পরিলৰিত হয়৷ টালির ছাদ বিশিষ্ট ও বারান্দাযুক্ত পর্তুগীজ গীর্জাগুলি একই সঙ্গে দূর্গ হিসেবেও ব্যবহৃত হতো৷ ডাচদের শাসনামলে পর্তুগীজ গীর্জাগুলি ডাচ রীতিতে পরিবর্তীত করা হয়৷ যার অন্যতম উদাহরণ গালেস্ন - র ঐতিহাসিক দূর্গ৷ ব্রিটিশ শাসনামলে তারা আবার তাদের নিজস্ব রীতিতে ধর্ম নিরপেৰ রূপদানের মাধ্যমে ডাচ গীর্জাগুলির পরিবর্তন সাধন করে৷ শ্রীলঙ্কার ব্রিটিশ স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন নুয়ারা এলিয়া - র পাহাড়ি কেন্দ্র৷

চিত্র ও ভাস্কর্য :

শ্রীলঙ্কার ভাস্কর্যে বুদ্ধ মূর্তি অগ্রগণ্য৷ প্রথম দিকে সাধারণত: চুনাপাথরের পাহাড় কেটে সরাসরি পাহাড়ের গায়ে বুদ্ধ মূর্তি তৈরী করা হতো৷ যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ পলোন্নারম্নয়ার নিকটবর্তী গাল বিহার - এর ৪৬ ফুট দীর্ঘ পাথরের শায়িত বুদ্ধ মূর্তি৷ সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে অন্যান্য উপাদান যেমন জেইড, পাথর, ক্রিস্টাল, মার্বেল, এমারেল্ড, হাতির দাঁত, প্রবাল, কাঠ ও ধাতব মূর্তি নির্মাণ শুরম্ন হয়৷ বুদ্ধকে এখানে তিনটি অবস্থায় - দন্ডায়মান, আলংকারিক বুদ্ধ মূর্তি শ্রীলঙ্কার ভাস্কর্য শৈলীর অতু্যত্‍কৃষ্ট মানও প্রতীকরূপে স্বকীয় স্থান লাভ করেছিলো, যা আজও অৰুন্ন রয়েছে৷

ভাস্কর্যের মতোই শ্রীলঙ্কার চিত্রকলায় ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবই সর্বাপেৰা বেশী৷ এ সকল চিত্রে বৌদ্ধ প্রতিচ্ছবি ও তাঁর বিভিন্ন জাতক কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে৷ বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহার এবং পবিত্রস্থান সমূহে এগুলি অঙ্কিত হয়ে থাকে৷ এ ৰেত্রে দুটি মূল ধারা পরিলৰিত হয় - একটি প্রাথমিক রীতি এবং অপরটি কান্দি রীতি৷ প্রাথকি রীতি ব্যপক, জটিল ও অভিব্যক্তিপূর্ণ অপরপৰে
কান্দি রীতি সরল এবং সেই সাথে অভিব্যক্তিপূর্ণ৷

No comments:

Post a Comment