Wednesday 18 November 2009

মিশরীয় চিত্রকলা

বিশ্বশিল্পের ইতিহাসে মিশরীয় শিল্পকলার গুরুত্ব অপরিশীম। তবে শুধুমাত্র সৌন্দর্য সৃষ্টি আর উপভোগের জন্য মিশরীয় শিল্পকলা সৃষ্টি হয়নি, মূলতঃ ধর্মীয় কারণে সেখানে শিল্পকলার সৃষ্টি হয়েছিলো।

মিশরীয় চিত্রকলা ছিলো পরধর্মী অর্থাৎ ঐ চিত্রকলা নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত ছিলো স্থাপত্যের সারফেসের সঙ্গে ও বহুলভাবে ব্যবহৃত হতো রিলিফ ভাস্কর্যে। মিশরের চিত্রকলা যে সামাজিক প্রেক্ষিতে গড়ে উঠেছিলো তা ছিলো ধর্ম ও রাজতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। প্রাচীন মিশরে রাজা বা ফারাও ছিলেন সর্ব বিষয়ে প্রধান। তিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রন করতেন। তখন শিল্পীদের স্বাধীনতা ছিলোনা বললেই চলে। ফলে তাদের চিত্রকলা হতো গতানুগতিক। আর অধিকাংশ চিত্রের ধরন ছিলো ইলাস্ট্রেশন বা গল্প বলার ছবি। প্রাচীর চিত্রে মৃত ব্যক্তির সাথে সম্পর্কিত ঘটনাবলী স্থান পেয়েছে। এইসব দেয়ালচিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরে হাজার বছর আগের মিশরকে যা আমাদের বিস্ময়াবিষ্ট করে তোলে। তবে প্রথমবারের মতো ছবির দিকে তাকালে এগুলোকে মনে হয় দুর্বোধ্য।

কলাকৌশলগত ও চিন্তাভাবনায় মিশরীয় চিত্রকলা ছিলো দ্বিমাত্রিক। এই দ্বিমাত্রিকতা হলো একটি ধর্ম এবং আরেকটি ফারাও। ধর্ম হলো এক মাতা এবং ফারাও হলো আরেক মাত্রা। তাদের চিন্তার জগৎ একাল ও পরকালে বিভক্ত ছিলো। শুধুমাত্র জগৎ সম্পর্কে তাদের ধারনা দ্বিমাত্রিক ছিলোনা, তাদের বিশ্বাস ছিলো মানুষের দেহে দুটি স্বত্ত্বা আছে একটি বা এবং অপরটি কা।

মানুষের রূপকল্পনায় মিশরীয চিত্রকর গতানুগতিক মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন। অধিকাংশ ছবিতে মানুষের মাথা পাশ হতে, দেহের উপরিভাগ ও চোখ সামনে হতে এবং পায়ের পাতা পাশ হতে আঁকা হয়েছে। গতিশীল হাত ও পা ভালো দেখা যায় পর্শ্বদৃশ্যে যার ফলে এটিকে পার্শ্বদৃশ্যে আঁকা হয়েছে।

মিশরীয় চিত্রকলা ফ্রেস্কো পদ্ধতিতে আঁকা। সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে রং দেয়ার রীতি ছিলো, যেমন নীলের ওপর কালো আঁচড় কেটে জলকে এবং বাদামী বা হলুদ রং দিয়ে মানুষের শরীর বোঝানো হতো। রং হিসেবে লাল, হলুদ, নীল, সবুজ, কালো এবং সাদার ব্যবহার দেখা গেছে। সম্রাট, পুরোহিত ও রাণীদের রং উজ্জ্বল করলেও দাসদাসীদের গায়ের রং অনুজ্জ্বল ও কালো রঙে আঁকা হতো। এসব ছবিতে সব জায়গায় সমানভাবে রং ব্যবহার করা হয়েছে, টোনের তারতম্য নেই। আলো-ছায়ার প্রয়োগ নেই।

মিশরীয়রা যা জানতো তাই আঁকতো। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ১৪০০ খৃঃ পূঃ থেবস এর সমাধিতে করা বাগান ও পুকুর সম্বলিত একটি চত্রে তারা পুকুরটি এঁকেছে উপর হতে আর গাছগুলো পাশ হতে। পুকুরের মাছ ও পাখি উপর হতে আঁকলে চেনা যবে না তাই এগুলো আঁকা হয়েছে পার্শ্ব দৃশ্যে। এরকম একটি ছবি হতে আমরা বুঝতে পারি - প্রত্যেকটি বস্তুই মিশরীয়দের কাছে সবচেয়ে বৈশিষ্টপূর্ণ দৃষ্টিকোন হতে আঁকা হয়েছে।

মিশরীয় শিল্পীরা শুধু ফর্ম ও ছবি আঁকার ক্ষেত্রে তাদের জ্ঞানকেই ছবিতে গুরুত্ব দিয়েছেন। যেমন মিশরীয়রা রাজা বা প্রভুকে তাদের ভৃত্য এমনকি স্ত্রীর হতেও বড় করে আঁকতো।

মিশরীয় শিল্পকলার ভিত্তি ছিলো তাদের জ্ঞান, তারা যা জানতো তাই আঁকতো।

No comments:

Post a Comment