Friday 20 November 2009

ভাস্কর্য

গুপ্তযুগে ভাস্কর্য উন্নতির চরম শিখরে উপনীত হয়েছিলো৷ এ যুগে হিন্দু বৌদ্ধ দুই রকম মুর্তিই তৈরী হয়েছিলো৷ বুদ্ধমুর্তি এ সময়ে পূর্ণরূপ পায়৷ এ যুগের ভাস্কর্যের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর আধ্যাত্মিকতা৷ এ যুগে ভাস্কর্যে যে বৈশিষ্ট্যগুলো চোখে পড়ে _ ভাস্কর্যগুলোর কাঁধের দুইদিক কাপড়ে ঢাকা৷ মাথাটি সম্পূর্ণরূপে কোকড়ানো চুল দিয়ে আবৃত৷ চোখের পাতা অর্ধ-নিমীলিত _ যা দেখে মনে হয় বুদ্ধ পার্থিব জগত্‍ হতে অনেক দূরে৷ মাথার পেছনে প্রভামন্ডলে রয়েছে পদ্মপাতা এবং তাকে াঘরে রয়েছে জ্যামিতিক নকশা৷
এছাড়াও বুদ্ধমুর্তিতে কয়েকপ্রকার মুদ্রা দেখাযায় _
১. ধ্যানমুদ্রা (দুই কোলের উপর ন্যসত্ম)
২. ভূমি স্পর্শ মুদ্রা
৩. ধর্মচক্র মুদ্রা (দুই হাত বুকের উপর ন্যসত্ম)
৪. অভয় মুদ্রা
গুপ্তযুগে এক বিশেষ ধরনের মুর্তি পাওয়া যায় যার নাম ঐতিহাসিকগণ দিয়েছেন ভেজাবুদ্ধ৷ মুর্তিগুলো দেখলে এর পরনের কাপড় ানিতে ভেজা মনে হয় বলে এরূপ নামকরন করা হয়েছে৷ মাথাবিহীন মুর্তির হাতের আঙ্গুলগুলি জোড়া লাগানো ছিলো (হাঁসের পায়ের মতো)৷ গুপ্তভাস্কর্যের এটি আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য৷
গুপ্তযুগে সারনাথে প্রাপ্ত ধ্যানমগ্নবুদ্ধ, মথুরায় প্রাপ্ত দন্ডায়মানবুদ্ধ, সুলতানগঞ্জে প্রাপ্ত বওদ্ধের তাম্রমুর্তি বৌদ্ধ ভাস্কর্য শিল্পের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন৷ এছাড়াও পৌরনিক উপাখ্যান অবলম্বনে কৃষ্ণ, বিষ্ণু, শিব প্রর্ভতি দেবতার অপূর্ব মুর্তি গুপ্ত যুগেই নির্মিত হয়েছিলো৷ এ যুগের ভাস্কর্যে বাসত্মবতার উপর ধর্মের প্রভাবের ফলে যে অতীন্দ্রিয় ভাবের সৃষ্টি হয়েছে তা গুপ্তযুগের শিল্পকলাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছে৷
গুপ্তযুগে নির্মিত একটি গুরম্নত্বপূর্ণ শিল্পকর্ম হচ্ছে পঞ্চম শতাব্দীতে নির্মিত উপবিষ্ট বুদ্ধ৷ এটি ভারতের উত্তর প্রদেশের বেনারসের নিকট সারনাথ নামক স্থানে পাওয়া গেছে৷ এই মুর্তিটির উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি৷ এটি চুনা বালি পাথর দ্বারা নির্মিত৷ এটিকে গুপ্ত ভাস্কর্যের একটি আদর্শ মডেল হিসেবে চিহ্নিত করা যায়৷ এটিতে এক ধরনের সূক্ষ্ম সরলতা লৰ্য করা যায়৷ মুর্তিটির পশ্চাতে রয়েছে বিশাল প্রভামন্ডল৷ এখানে বুদ্ধ যোগাসনে উপবিষ্ট৷ ধর্মচক্র মুদ্রায় তার অবস্থান৷ তিনি যে আসনটিতে বসা তাতে নক্সা উত্‍কীর্ণ করা আছে৷ বিশাল প্রভামন্ডলের দু'পাশে রয়েছে দুটি উড়নত্ম দেবদূত৷ আসনের নিচে নির্মিত হয়েছে ছয়জন ভক্ত৷
ভারতের বিহার প্রদেশের সুলতানগঞ্জে গুপ্তযুগের ধাতু নির্মিত একটি মুর্তি পাওয়া গেছে৷ এটির উচ্চতা ৭.৫ ফুট৷ এটির গড়নশৈলী সারনাথের বুদ্ধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ৷
বুদ্ধমুর্তিছাড়াও এ সময়ে অনেক বৈদিক মুর্তিও নির্মিত হয়েছে৷ হিন্দু শিল্পকলার সংখ্যা এ যুগে কম নয়৷
গুপ্তযুগ শুধু ভারতীয় শিল্পের ক্লাসিকালযুগ নয়, এটি ভারতীয় সংস্কৃতির ক্লাসিকালযুগ৷ ভারতীয়শিল্প বলতে আমরা গুপ্তযুগের শিল্পকেই বুঝে থাকি৷

No comments:

Post a Comment