Wednesday 3 February 2010

বাংলাদেশের লোক ও কারম্নশিল্প

বাংলাদেশে কুটিরশিল্প, হসত্মশিল্প, গ্রামীণশিল্প, কারম্নশিল্প প্রভৃতি উত্‍পাদন সামগ্রী প্রায় সমার্থে ব্যবহৃত হয়৷ বাংলাদেশ ৰুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার (বিসিক) সংঙ্গা অনুযায়ী "যে শিল্প কারখানা একই পরিবারের সদস্য দ্বারা পূর্ণ বা আংশিকভাবে পরিচালিত এবং পারিবারিক শিল্প কারিগরগণ খন্ডকালীন বা পূর্ণ সময়ের জন্য উত্‍পাদন কার্যে নিয়োজিত থাকেন এবং যে শিল্পের শক্তিচালিত যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হলে ১০ জনের বেশী বা শক্তিচালিত যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত না হলে ২০ জনের বেশী কারিগর উত্‍পাদন কার্যে নিয়োজিত হয়না" তাই কুটির শিল্প৷ হসত্মশিল্প সম্পর্কে পোষাকী সংঙ্গা নেই৷ মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীনের বিবেচনায় "বহুল পরিমানে উত্‍পাদিত একই নমুনার চারম্নশিল্প সম্মত অর্থাত্‍ সৌন্দর্যময় ও সুরম্নচিসম্পন্ন সৌখিন বা ব্যবহার্য শিল্প সামগ্রী" হসত্মশিল্প রূপে পরিগণিত হতে পারে৷ কুটিরশিল্পের সব কয়টি বৈশিষ্ট্য হসত্মশিল্পে বিদ্যমান৷ গ্রামীণশিল্পের সঙ্গায় শিল্পকারখানার অবস্থান সেচ্ছায় "গ্রামীণ শিল্প কারখানা পলস্নী অঞ্চলে অবস্থিত হতে হবে৷ তবে (১) করখানার আশেপাশে পলস্নীর জনসংখ্যা ১০,০০০ অধিবাসীর মধ্যে সীমিত থাকবে, (২) বিনিয়োগকৃত মূলধন ষাট লৰ টাকার বেশী হবে না, (৩) কাঁচা-মাল স্থানীয়ভাবে লভ্য, (৪) মালিকানা ব্যক্তিগত বা দলীয় অংশীদায়ত্বে (সমবায়/সীমিত দায়বদ্ধ) সীমাবদ্ধ, (৫) স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতির ব্যবহার থাকতেও পারে নাও থাকতে পাওে, (৬) প্রক্রিয়াজাতকরণে সহজ প্রযুক্তির ব্যবহার , এবং (৭) প্রধানতঃ পারিবারিক শ্রম ব্যবহৃত হয়- এমন সব বৈশিষ্ট্য গ্রামীণ শিল্পে আরোপিত হয়৷ কুটির শিল্প হসত্মশিল্প ও গ্রামীণ শিল্পে কিছু উত্‍পাদন কারম্নশিল্পরূপে চিহ্নিত হয়৷ উচ্চ পর্যায়ের নৈপুণ্য সৌন্দর্য ও সুরম্নচি, সৃষ্টিধর্মী তুলনাতীত, স্বকীয়তা প্রভৃতি কারম্নশিল্পের বৈশিষ্ট্য৷ কারম্নশিল্প সংগ্রহকের দৃষ্টি আকর্ষণ কওে কারম্নশিল্প কর্মরূপে এবং কর্ম বিশেষ যাদুঘওে সংরৰণের দাবীদার হয়৷ সুতরাং "নৈপুণ্য সমৃদ্ধ সুরম্নচি সম্পন্ন স্বাতন্ত্রময় হসত্মনির্মিত সৌখিন বা ব্যবহার্য শিল্পসামগ্রী" কারম্নশিল্পরূপে চিহ্নিত হতে পারে৷ বাংলাদেশের কারম্নশিল্পীগণ নগর এবং ফলস্নী অঞ্চলের বিদগ্ধ এবং সাধারণ ক্রেতাদের চাহিদার ভিত্তিতে পন্য সামগ্রী উত্‍পাদন করেন৷ এই সকল পণ্যেও মধ্যে রয়েছে সৌখিন দ্রব্য, গৃহসজ্জাসামগ্রী, সরঞ্জাম ও নিত্যব্যবহার্য দ্রব্য৷ সৌখিন ও সজ্জাদ্রব্যশ্রেণীর মধ্যে কিছু কিছু শিল্পকর্ম বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতি ও আচার অনুষ্ঠান তথা সমগ্র জীবনযাপনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত৷ এই সকল শিল্পকর্মকে লোকশিল্প বা লোকজশিল্প বলে আখ্যায়িত করা হয়৷ লোকশিল্প দ্রব্যাদির মধ্যে মৌলিক ও সজ্জা সামগ্রী, যা নৈপূণ্যেময়, সুন্দর সুরম্নচি সম্পন্ন এবং তুলনাতীত স্বকীয়তায় সমৃদ্ধ তাই লোক কারম্নশিল্প৷
বাংলাদেশ কারম্নশিল্পে সমৃদ্ধ৷ উত্‍পত্তি বিবেচনায় কারম্নপণ্যে তিনটি বিভাজন সম্ভব৷ প্রথমতঃ বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর নিজস্ব উদ্ভাবনী শক্তি ও নৈপূণ্যে সমৃদ্ধ নৃতাত্তি্বক কারম্নশিল্প- যথা নকশীকাঁথা, শিতলপাটি, শতরঞ্জি, স্বর্ণ রৌপ্য পাতের ফিলিগ্রি কর্ম, মসলিন ও জামদানী বস্ত্র প্রভৃতি৷ একই নমুনা, নকশা ও নৈপূণ্যে স্বকীয়তা প্রাপ্ত এই জাতীয় কারম্নশিল্প বিশ্বেও অন্যত্র পাওয়া যায় না৷ দ্বিতীয় শ্রেণীতে রয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কারম্নশিল্প, যথা মৃত্‍পাত্র, কাঁথা পিতল সামগ্রী, বাঁশবেতের দ্রব্যাদি, পুতুল, পাটজাত হসত্মশিল্প, কাষ্ঠকর্ম প্রভৃতি৷ এই সকল কারম্নশিল্প পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উত্‍পাদিত হয়; কিন্তু বাংলাদেশে উত্‍পাদিত এই সকল কারম্নশিল্পে বাঙ্গালী স্বকীয়তা বিদ্যমান৷ তৃতীয়তঃ বিদেশ হতে আগত সাম্প্রতিক কালের কারম্নশিল্প, যথা ধাতব উপহার সামগ্রী, কাগজ কাপড়ের ফুল, মুদ্রিত বস্ত্র, ঝিনুক সামগ্রী প্রর্ভতি৷ এই জাতীয় কারম্নশিল্প বিদেশী নমুনা ও নৈপুণ্য ভিত্তিক সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশে প্রচলিত হয়েছে৷ এ সকল শিল্প-কর্মে ব্যবহৃত কাঁচামাল দেশজ এবং প্রশিৰণের মাধ্যমে নৈপূণ্য অর্জিত৷ কিন্তু যে কোন বিচারে এই সকল কারম্নশিল্প এখন বাংলাদেশের নিজস্ব৷
নৈপূণ্য প্রয়োগের ভিত্তিতেও কারম্নকর্ম তিনশ্রেণীতে বিভক্ত৷ মাছ দরার ফাঁদ, টুকরী, চাটাই, লেপ কাঁথা, হাড়ি-পাতিল ও সাধারণ পুতুল প্রভৃতি উত্‍পাদনে শিৰানবিশ বা মেধাবিবর্জিত কারিগর নিয়োজিত হন৷ এসব দ্রব্যাদি প্রস্তুত করতে প্রাথমিক নৈপূণ্যের প্রয়োজন হয়৷ স্থানীয় বাজাওে সসত্মা দামে এসব পণ্য সাধারণতঃ মোটামোটি উচ্চ আয়ভুক্ত পলস্নী ও শহরের ক্রেতাগণ খরিদ করেন৷ এসব সামগ্রী সাধারণতঃ হসত্মশিল্পরূপে চিহ্নিত, যদিও এই পর্যায়ের নৈপূণ্যধারী শ্রেষ্ঠ কারম্নশিল্পী বা মাস্টার ক্রাফ্টসম্যানগণের হাত হতে মাঝে মধ্যে বেরিয়ে আসে সৃষ্টিধর্মী তুলনাতীত কারম্নশিল্প ট্যাপেস্ট্রি, ভাস্কর্য, ফিলিগ্রি প্রভৃতি৷ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানিক সংগ্রাহকগণ এ সব শিল্পকর্মের ক্রেতা৷
কারম্নশিল্পীগণের কতিপয় পেশাগত বৈশিষ্ট্য আছে৷ বিশেষ বিশেষ জনগোষ্ঠি, সম্প্রদায় বা অঞ্চল বিশেষ বিশেষ কারম্নশিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ লাভ করেছে৷ দ্বিতীয়তঃ পারিবারিক ব্যবসা হিসাবেই মূখ্যতঃ কারম্নশিল্প উত্‍পাদন প্রক্রিয়ায় পরিবারের প্রায় সকলেই অংশগ্রহণ করেন৷ এই অর্থে কারম্নশিল্প উত্‍পাদন খন্ডালীন পেশা৷ কেবলমাত্র পণ্যের প্রসার ও চাহিদার বৃদ্ধি পেলে পরিবার বহির্ভূত কারিগরগণও উত্‍পাদন কার্যে নিয়োজিত হন৷ তৃতীয়তঃ সমবৃত্তিধারী কারম্নশিল্পীগণ বিশেষ বিশেষ গ্রাম বা গ্রামের পাড়ায় একত্রে বসবাস কওে কারম্নপলস্নী গড়ে তুলেছেন৷ কারম্নপলস্নী গড়নের পেছনে ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক আচার, কাঁচামালের সহজলভ্যতা, বাজারজাতকরনের সুবিধা প্রভৃতি গুরম্নত্বপূর্ণ বিবেচনা কার্যকর ছিলো৷
ঊাংলাদেশে কুটির শিল্প, গ্রামীন শিল্প, হসত্মশিল্প, কারম্নশিল্প প্রায় সমার্থে ব্যবহৃত হয় বিধায় কেবমাত্র কারম্নশিল্প সম্পর্কে কোন জরীপ বা সমীৰা পরিচালনা করা হয়নি৷ ১৯৮১ সালে বিসিক পরিচালিত কুটিরশিল্প জরীপ অনুযায়ী ১৫৭টি উত্‍পাদন গোষ্ঠীভূক্ত প্রায় ৩.২২ লৰ কুটিরশিল্প কারখানা রয়েছে৷ ১৯৮৫ সারের কারম্নপলস্নী সম্পর্কিত অন্য এক জরীপ অনুযায়ী সারাদেশে ৪,২২৬টি কারম্নপলস্নীতে ২৯ ধরনের শিল্পদ্রব্য উত্‍পাদিত হয়৷ কিন্তু এই জরীপে তৈলের ঘানি, মাছ ধরার জাল, শুটকিমাছ, খেজুরের গুড় জাতীয় দ্রব্যকেও কারম্নপণ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ অন্যদিকে কুটিরশিল্প জরীপে উলেস্নখিত পুতুল ও খেলনা, মোমের কারম্নপণ্য, মুদ্রণ বস্নক, নকল গহনা প্রভৃতি কারম্নপলস্নী জরীপ হতে বাদ পড়েছে৷ যাহোক নিম্নোক্ত উত্‍পাদনগোষ্ঠিকে কারম্নশিল্পের অনত্মর্ভূক্ত কওে কিছু তথ্য পরিবেশন করা হলোঃ
কারম্নপণ্য কারম্নপলস্নী সংখ্যা কারখানা সংখ্যা কারম্নশিল্পী সংখ্যা
বাঁশ ও বেত ১,১৫৪ ৪২,১৬৯ ১,২৫,৯৬০
মৃত্‍শিল্প ৬৮০ ১৬,৫২২ ৭৬,০০৭
বস্নক প্রস্তুত -- ৫৪ ১৩৪
জামদানী ৪ ৪ ১৮
শিতলপাটি ২৭৯ ১২,৬১৬ ৪০,৪৬০
অলঙ্কার ১৫৭ ১২,৩৬৫ ২৬,৯০১
নকশী কাঁথা ৯৫ ১,৩৬৪ ২,৬৪৫
পাটজাত শিল্প ৫৯ ৩,৮১৭ ৮,৬০৬
কাষ্ঠজাত হসত্মশিল্প ৫১ ১০,১২৫ ২৯,৩৯৯
চামড়াজাত হসত্মশিল্প ২৮ ৬৯ ২০৬
তালের আঁশের টুপি ২৩ ৮৯ ৩৪৪
কাঁসা পিতলের হসত্মশিল্প ২৩ ৫০৫ ১,৭৩৪
খেলনা / পুতুল -- ৫৪ ১০৫
মোমের কারম্নপণ্য -- ৩ ৬
নারিকেলের ছোবড়ার হসত্মশিল্প ১৬ ১৫১ ৩০৩
ঝিনুকের হসত্মশিল্প ৮ ৬৯১ ১,৪৭১
লাৰার হসত্মশিল্প ৩ ৬৭ ৩৮৮
ঘাতের তৈরী কার্পেট ৩ ৪৮ ৮৭
ঘাড় ও শিং ৩ ১১ ৩১
সতরঞ্জি ৫ ১৫০ ৫০০
কাগজের হসত্মশিল্প -- ৯০ ২৫৪
ধাতব হসত্মশিল্প -- ২,০০৫ ৯,৮৬৯
অন্যান্য হসত্মশিল্প -- ১,২৮৪ ৪,৫৮১
মোট ২,৫৯১ ১,০৪,২৩৩ ৩,৩০,০০৯

উপরোক্ত তথ্যে ঢাকার শাখারীপট্টির শাখা শিল্পে নিয়োজিত কারম্নশিল্প ও কারম্নশিল্পীদেও তথ্য পরিবেশিত হয়নি এবং সতরঞ্জি শিল্প সম্পর্কিত তথ্য আনুমানিক৷ এই ত্রম্নটি স্বীকার করেও বলা যায় যে, বাংলাদেশের প্রায় ২,৫৯১ কারম্নপলস্নীতে প্রায় ৩.৩০ লৰ কারম্নশিল্পী কর্মরত আছেন৷ তুলনামূলকভাবে কুটির শিল্প কারখানার সংখ্যা প্রায় ৩.২২ লৰ এবং নিয়োজিত কারিগর সংখ্যা প্রায় ৯.১৭ লৰ৷
ঊাঁশ ও বেত জাত কারম্নশিল্প বাংলাদেশের সর্বত্র উত্‍পাদিত হয়৷ এই শ্রেণীর কারম্নশিল্পীর সংখ্যাও সর্বাধিক প্রায় সোয়া লৰ৷ বাঁশ ও বেতের কারম্নপণ্যেও মধ্যে সোফাসেট, টেবিল, চেয়ার, মোড়া, টেবিল ম্যাট, ওয়ালম্যাট, ট্রে, ল্যাম্প ষ্ট্যান্ড, ফুলদানী, ছাইদানী, হাতব্যাগ, পুতুল প্রভৃতি আকর্ষণীয়৷ এর মধ্যে মোড়া ও পুতুল ফোক ক্রাফট শ্রেণীভুক্ত৷
ঐতিহ্যের দৃষ্টিকোন হতে লোকশিল্পের সর্বাধিক বিকাশ মৃত্‍শিল্পে৷ বাংলাদেশের প্রায় ৬৮০ কারম্নপলস্নীতে প্রায় ৭৬ হাজার কারম্নশিল্পী মৃত্‍শিল্প কর্মে নিয়োজিত আছেন৷ মৃত্‍শিল্পের উত্‍পাদন সামগ্রীর মধ্যে লৰীসরা, সখের হাঁড়ি, পুতুল, প্রতিমা, খেলনা প্রভৃতি ফোক ক্রাফট শ্রেণীভুক্ত৷ এসব কারম্নশিল্পের মধ্যে ছাইদানী, ফুলদানী, ল্যাম্পষ্ট্যান্ড, প্রতিমা প্রভৃতি উলেস্নখযোগ্য৷
ঊস্ত্রমূদ্রণের জন্য বিভিন্ন মোটিফ ও ডিজাইন খোদাই কওে কাঠের বস্নক প্রস্তুত করা হয়৷ বস্নক খোদাই উচ্চমানের করম্নশিল্প; তবে শিল্পীর সংখ্যা সীমিত-প্রায় ৫৪ কারখানায় ১৩৪ জন৷ বস্নক খোদাই ফোক ক্রাফ্ট নয়; কিন্তু ডিজাইনে বহুল পরিমাণে ফোক মটিফ ব্যবহৃত হয়৷ জামদানী বস্ত্র বাংলাদেশের নৃতাতি্বক বয়নশিল্প হলেও জামদানীবস্ত্রেও চাহিদা নগওে এবং সে কারণে বিদগ্ধ বা দরবারী শিল্প, ফোক ক্রাফট নয়৷ াবশ্য জামদানীর ডিজাইনে বহু ফোক মোটিফ ব্যবহৃত হয়৷
শিতলপাটিও নৃতাত্তি্বক শিল্প৷ শিতলপাটি একাধাওে কারম্নশিল্প, হসত্মশিল্প ও লোকশিল্প হিসেবে পরিগণিত, শিতলপাটির মধ্যে আসন ও বোটনী লোকশিল্পের উত্‍কৃষ্ট উদাহরণ৷ প্রায় সাড়ে চলিস্নশ হাজার কারম্নশিল্পী এই শিল্পকর্মে নিয়োজিত৷ অলঙ্কার শিল্পেও বাংলাদেশ সমৃদ্ধ৷ প্রায় ২৭ হাজার কারম্নশিল্পী দরবারী ও লোকশিল্প শ্রেণীভুক্ত অলঙ্কার প্রস্তুত করেন৷ লোকশিল্প অলঙ্কারের মধ্যে খাডু, হাসুলী, কানফুল প্রভৃতি সর্বাধিক জনপ্রিয়৷
নকশীকাঁথাও নৃতাত্তি্বত শিল্প, যদিও সাধারণ কাঁথা এবং টেপেষ্ট্রিবিশ্বের সর্বত্র প্রস্তুত হয়৷ নকশী কাঁথায় প্রায় ১১ ধরনের ফোঁড় ব্যবহৃত হয়৷ প্রচলিত প্রায় সব ডিজাইনেই ফোক মোটিফ সোচ্চার৷ সাম্প্রতিককালে প্রচলিত টেপেষ্ট্রি বাদ দিলে প্রায় সব কাঁথাই লোকশিল্প৷
ইদানিং পাটজাত হসত্মশিল্প অতীব জনপ্রিয় হযে পড়েছে৷ বাংলাদেশের সর্বত্র কারম্নশিল্পীগণ পাটজাত হসত্মশিল্প প্রস্তুত করেন৷ লোকশিল্পের মধ্যে শিকা, বেনী আসন, পুতুল প্রভৃতি সমধিক পরিচিত৷
লোক কারম্নশিল্প বর্তমানে সমস্যা জর্জরিত৷ নগর সভ্যতা বিসত্মারের সঙ্গে লোক সংস্কৃতি চাপের সম্মুখীন এবং লোক সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত লোক-কারম্নশিল্পের চহিদাও৷ কারম্নশিল্পীগণ বাধ্য হয়ে চাহিদা মাফিক দরবারী কারম্নশিল্প সামগ্রী উত্‍পাদনে বেশী আগ্রহী৷ তাই ঐতিহ্যের পূর্ণজাগরণ আবশ্যক৷
কারম্নশিল্পীর আয় তুলনামূলকভাবে প্রানত্মিক চাষী অপেৰা বেশী৷ জীবনযাত্রার মানবৃদ্ধি এবং সামাজিক মর্যাদা লাভের জন্য কারম্নশিল্পী সনত্মানদের আনুষ্ঠানিক শিৰাদানে আগ্রহী৷ কারম্নশিল্পী পরিবারের নবীন সদস্যরাও কায়িক পরিশ্রম অপেৰা আদালতের চাকুরী করতে বেশী আগ্রহী৷ ফলে দিন দিন কারম্নশিল্পীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে৷ আর্থ-সামাজিক পরিবেশগত কারণে-নৈপূন্য অর্জনে সাধনার অভাবও স্পষ্ট৷ সুতরাং নিপুণ কারম্নশিল্পীও সৃষ্টি হচ্ছে না৷ সে জন্যে প্রয়োজন সুষ্ঠ প্রশিৰণ ব্যবস্থা এবং প্রশিৰনোত্তর সেবা কর্মকান্ড সম্প্রসারণ৷
কারম্নপণ্য উত্‍পাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল দুর্লভ হযে উঠেছে৷ কাঁচামালের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন উত্‍পাদন, আমদানী ও সরবরাহ নীতিমালা প্রনয়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা অনুসরণ৷ বিনিয়োগ ও চলতি মূলধন বর্তমানে উত্‍পাদনরত কারম্নশিল্প কারখানার প্রধান সমস্যা৷ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে মূলধন সরবরাহ বৃদ্ধি এবং ঋণ বিতরণের সঙ্গে জড়িত জটিলতা নিরসন একানত্ম আবশ্যক৷
শহর ও পলস্নী অঞ্চলের ক্রেতাদেও রম্নচির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কারম্নপণ্যের চাহিদার তারতম্য হচ্ছে৷ চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নুতন নকশা ও নমুনা সমৃদ্ধ নব নব কারম্নপন্য উত্‍পাদনের লৰ্যে উত্‍পাদন-উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহণ প্রয়োজন৷ আজকে যে নকশা নমুনা বা পণ্য সমকালীন কালের স্রোতে শোভা পাচ্ছে তাই ঐতিহ্যেও অংশ হয়ে দাড়াবে৷ সে জন্যে নুতন পণ্য সৃষ্টির মাধ্যমে সৃষ্টি হয় নুতন ঐতিহ্য৷
কারম্নপণ্য বিপনন এখনো প্রাতিষ্ঠানিক এবং বিসত্মৃত হয়ে উঠেনি৷ বিপনন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বিকাশ কর্মসূচীর অপরিহার্য অংগ বাজার সমীৰা বিপনন ব্যবস্থায় অংগীভ্থত৷ সুনির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক বিপণন ব্যবস্থা কায়েম করলে কারম্নপণ্যের প্রসার নিশ্চিত হবে৷
কারম্নশিল্পীদের বসবাস কারম্নপলস্নীতে এবং বর্তমানে কারম্নশিল্পের উত্‍পাদন সম্প্রদায় ভিত্তিক৷ সঙ্গানে সুচিনত্মিত কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে কারম্নপণ্য উত্‍পাদন কর্মকান্ড সম্প্রসারনের উদ্দেশ্যে নুতন নুতন কারম্নপলস্নী প্রতিষ্ঠা বাঞ্চণীয়৷
লোক কারম্নশিল্প লোক সংস্কৃতিরই একটি সৃষ্টিধর্মী রূপ৷ লোক কারম্নশিল্পে লোক জীবন যাপনের প্রকাশ স্পষ্ট৷ সে কারণে লোক কারম্নশিল্পের বিকাশ মাধ্যমে লোক সংস্কৃতির সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা যায়৷

No comments:

Post a Comment